ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা ।। যাকাত ।। হজ ।। মালিক শ্রমিক সম্পর্ক ।। এলম জ্ঞান ।। শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য ।। শিক্ষকের গুণাবলী ।। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ।। শিক্ষা ও নৈতিকতা ।।যাকাত হলো সম্পদের একটি অংশ দান করা, যা নিসাব পরিমাণ সম্পদ অর্জনকারী মুসলমানের ওপর বছর শেষে ফরজ হয়।যাকাত ও হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, যা ধনী মুসলমানদের জন্য যথাক্রমে আর্থিক দান ও শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সক্ষমদের জন্য মক্কায় pilgrimage বা তীর্থযাত্রা বোঝায়। যাকাত হলো সম্পদের একটি অংশ দান করা, যা নিসাব পরিমাণ সম্পদ অর্জনকারী মুসলমানের ওপর বছর শেষে ফরজ হয়। অন্যদিকে, হজ হলো জীবনে অন্তত একবার মক্কার কাবা শরীফ, সাফা ও মারওয়া, মিনায় ও আরাফাত ময়দানে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ইবাদত বা আধ্যাত্মিক যাত্রা।
যাকাত সংজ্ঞা:
যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো 'বৃদ্ধি পাওয়া' বা 'পবিত্রতা'। ইসলামি পরিভাষায়, যাকাত হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থেকে একটি অংশ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা।
গুরুত্ব:
এটি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতি তৈরি করে এবং সম্পদের ন্যায়সঙ্গত পুনর্বণ্টন নিশ্চিত করে, যা সমাজের মঙ্গল ও সংহতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাধ্যবাধকতা:
যারা 'নিসাব' পরিমাণ সম্পদের অধিকারী, তাদের ওপর যাকাত ফরজ হয়। নিসাব হলো যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সম্পদ।
হজ (Hajj)
সংজ্ঞা:
হজ হলো সৌদি আরবের পবিত্র শহর মক্কায় অবস্থিত কাবা শরীফের উদ্দেশ্যে একটি আধ্যাত্মিক সফর।
গুরুত্ব:
এটি ইসলামের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং এটি বিশ্বাস, প্রার্থনা, এবং আল্লাহর প্রতি আত্মনিবেদনের একটি বিশাল প্রতীক।
বাধ্যবাধকতা:
যে সকল মুসলিম শারীরিক ও আর্থিক দিক থেকে সক্ষম, তাদের জীবনে অন্তত একবার হজ করা বাধ্যতামূলক।
মূল পার্থক্য
প্রকৃতি:
যাকাত হলো আর্থিক দান, আর হজ হলো শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতা সাপেক্ষে মক্কায় একটি সময়কাল:
যাকাত হলো বার্ষিক একটি ফরজ বিধান, যা সম্পদ অর্জনের পর বছর শেষে পরিশোধ করতে হয়। হজ হলো জীবনের একটি বিশেষ ইবাদত, যা নির্দিষ্ট সময়ে (১০ জিলহজ) সম্পন্ন করতে হয়।
জাকাত ফরজ ও হজ ফরজের মধ্যে পার্থক্য হলো, জাকাত সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর এক বছর গত হলে ফরজ হয়। এর মধ্যে যদি বছর শেষ হওয়ার আগে সম্পূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায় বা জাকাতের নির্ধারিত পরিমাণ থেকে কম হয়ে যায়, তাহলে জাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে হ্যাঁ, যদি সম্পদ নিসাব (জাকাত ফরজ হওয়া পরিমাণ) পরিমাণ হয়ে বছর গত হয়, তখন জাকাত ওয়াজিব হবে। এভাবে যতকাল পর্যন্ত জাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদ বহাল থাকবে, প্রতি বছর জাকাত আদায় করতে হবে।
পক্ষান্তরে হজ হওয়ার বিষয়ে বক্তব্য হলো, মক্কা শরিফে যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া, কোরবানি ইত্যাদি যাবতীয় খরচ এবং বাড়ি ফেরা পর্যন্ত পরিবারের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতা কারও থাকলে তার ওপর হজ ফরজ হয়। এ পরিমাণ অর্থের মালিক যদি জীবনে একবারও হয়, এরপর তা কোনো কাজে ব্যয় হয় অথবা চুরি হয়ে যায়, তাহলেও হজের ফরজ তার ওপর বহাল থাকবে। এমনকি ভবিষ্যতে মৃত্যু পর্যন্তও যদি সে এই পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে সক্ষম না হয়, তাহলে হজের ফরজ তার জিম্মায় বহাল থাকবে। মৃত্যুর সময় অসিয়ত করে যাওয়া তার জন্য আবশ্যক হবে। যেন তার মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি হতে শরিয়ত মোতাবেক বদলি হজ করানো হয়।
তাছাড়া হজ সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর জীবনে একবার ফরজ হয় আর জাকাত সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর প্রতি বছর ফরজ হয়।
“হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেয়া হয়েছিল , যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার। এগুলো গোনা কয়েক দিন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে । আর যাদের জন্য সিয়াম কষ্টসাধ্য তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদ্ইয়া- একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার জন্য কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণের যদি তোমরা জানতে। রমাদান মাস, এতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য এবং হিদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে । তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করবে । আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং তোমাদের জন্য কষ্ট চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূর্ণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন সে জন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৩-১৮৫]
আর হজ্জ ফরয হওয়ার দলীল হচ্ছে,
﴿فِيهِ ءَايَٰتُۢ بَيِّنَٰتٞ مَّقَامُ إِبۡرَٰهِيمَۖ وَمَن دَخَلَهُۥ كَانَ ءَامِنٗاۗ وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧ ﴾ [ال عمران: ٩٧]
“আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে এ ঘরের হজ্জ করা মানুষের উপর ফরয, যার এ পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তা মানে না, (তার ক্ষেত্রে বক্তব্য হলো) আল্লাহ সৃষ্টিকুলের কোনো কিছুরই মুখাপেক্ষী নন” (আলে ইমরান ৯৭)।
যাকাতের টাকা দিয়ে কি কাউকে হজ্জ বা উমরাহ করানো যাবে বা কারও চিকিৎসা বাবদ হাসপাতালের খরচ দেয়া যাবে?
যাকাত ও হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অংশ, যেখানে যাকাত হলো সম্পদের নির্দিষ্ট পরিমাণ দান করা যা সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য ফরজ, এবং হজ হলো মক্কায় কাবার উদ্দেশ্যে একটি আধ্যাত্মিক pilgrimage যা সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য জীবনে অন্তত একবার ফরজ। যাকাত সম্পদের পুনর্বন্টন করে এবং ধনী-দরিদ্রের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতি বাড়ায়, অন্যদিকে হজ আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রতীক।
যাকাত একটি আরবি শব্দ, যার অর্থও 'পবিত্রতা' বা 'শুদ্ধতা'। এটি নিজের সম্পদ থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ গরীব ও অভাবী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা।
Информация по комментариям в разработке