Скачать или смотреть মালচিং পদ্ধতিতে লাভজনক টমেটো চাষ - Mulching system Tomato cultivation

‪@shykhseraj‬
মালচিং পদ্ধতিতে লাভজনক টমেটো চাষ - Mulching system Tomato cultivation
up 19/1/25
মালচিং পদ্ধতি টমেটো চাষ: একটি বিস্তারিত বিবরণ
মালচিং পদ্ধতি হল এমন একটি কৃষি কৌশল, যেখানে মাটির উর্বরতা, আর্দ্রতা ধরে রাখা এবং আগাছার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মাটির উপর একটি সুরক্ষামূলক আবরণ বা স্তর প্রয়োগ করা হয়। টমেটো চাষে মালচিং একটি কার্যকরী পদ্ধতি যা কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং ফসলের গুণগত মান উন্নত করতে সহায়তা করে।

মালচিং পদ্ধতির ধারণা
মালচিং শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ Mulch থেকে, যার অর্থ মাটির উপরে একটি প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম স্তর ছড়িয়ে দেওয়া। এটি সাধারণত খড়, শুকনো পাতা, প্লাস্টিক শিট বা অন্য যেকোনো জৈব বা অজৈব উপাদান দিয়ে করা হয়। মালচিং করার প্রধান উদ্দেশ্য হল মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, আগাছা দমন করা এবং ফসলের চারপাশে মাটির স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা।

টমেটো চাষে মালচিংয়ের গুরুত্ব
টমেটো একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ফসল, যা মাটির আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, এবং পুষ্টি উপাদানের উপর নির্ভর করে। মালচিং পদ্ধতি টমেটো চাষে অনেক উপকার এনে দেয়। এর ফলে ফসলের উৎপাদন বাড়ে এবং মাটির গুণাগুণ দীর্ঘস্থায়ী হয়। মালচিংয়ের মাধ্যমে টমেটো গাছগুলোকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখা সহজ হয়।

মালচিংয়ের উপকারিতা টমেটো চাষে
১. মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা
মালচিং পদ্ধতিতে মাটির উপরে স্তর ছড়িয়ে দেওয়া হলে পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয় না। ফলে মাটিতে আর্দ্রতা দীর্ঘদিন ধরে থাকে। টমেটো গাছের জন্য মাটির আর্দ্রতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অতিরিক্ত বা অল্প পানির কারণে ফলন কমে যেতে পারে। মালচিংয়ের ফলে সেচের পরিমাণও হ্রাস পায়।

২. আগাছা নিয়ন্ত্রণ
আগাছা টমেটো গাছের পুষ্টি শোষণ করে নিয়ে ফলনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। মালচিংয়ের মাধ্যমে মাটির উপরে একটি স্তর তৈরি হওয়ার কারণে আগাছা জন্মানোর সুযোগ পায় না। এটি কৃষকের পরিশ্রম এবং সময় উভয়ই সাশ্রয় করে।

৩. মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
মালচিং মাটির তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। গ্রীষ্মে এটি মাটিকে ঠাণ্ডা রাখে এবং শীতকালে মাটি উষ্ণ রাখে। টমেটো গাছের বৃদ্ধির জন্য মাটির তাপমাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪. মাটির পুষ্টি ধরে রাখা
মালচিংয়ের কারণে বৃষ্টি বা সেচের সময় মাটির ওপরের স্তর ক্ষয় হয় না। ফলে মাটির পুষ্টি উপাদান ঠিক থাকে এবং টমেটো গাছ সঠিক পরিমাণে পুষ্টি পায়।

৫. রোগ ও পোকামাকড় দমন
টমেটো গাছের নিচে মালচিং করার ফলে অনেক রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, মাটির কাছাকাছি থাকা ফলে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। মালচিং এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৬. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
মালচিংয়ের মাধ্যমে টমেটো গাছের বৃদ্ধি ও ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। এটি মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং ফসলের গুণগত মান উন্নত করে।

টমেটো চাষে মালচিংয়ের উপকরণ
মালচিং করার জন্য বিভিন্ন প্রকার উপকরণ ব্যবহার করা যায়। এগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

১. জৈব মালচ
খড় বা শুকনো ঘাস: এটি সবচেয়ে প্রচলিত এবং সহজলভ্য উপাদান।
পাতা ও কাঠের টুকরো: মাটির উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে।
কম্পোস্ট: এটি মাটিতে জৈব পদার্থ সরবরাহ করে।
নারিকেলের ছোবড়া: এটি মাটিতে আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর।
২. অজৈব মালচ
প্লাস্টিক শিট: কালো বা রঙিন প্লাস্টিক শিট ব্যবহার করা হয়, যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং আগাছা দমনে কার্যকর।
পাথরের চূর্ণ: এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য।
পলিথিন মালচ: বিশেষত বাণিজ্যিক চাষে বেশি ব্যবহার হয়।
মালচিং করার পদ্ধতি
ধাপ ১: জমি প্রস্তুত করা
মালচিং করার আগে জমি ভালোভাবে প্রস্তুত করা জরুরি। জমি থেকে আগাছা পরিষ্কার করে নিন এবং মাটি ভালোভাবে চাষ দিয়ে সমান করে নিন।

ধাপ ২: সার প্রয়োগ
মালচিং করার আগে জমিতে প্রয়োজনীয় জৈব বা রাসায়নিক সার মিশিয়ে নিন। এতে মাটির পুষ্টি বজায় থাকবে।

ধাপ ৩: মালচের স্তর প্রয়োগ
মালচ উপাদান প্রয়োগ করার সময় গাছের গোড়ার চারপাশে সঠিকভাবে স্তর দিন। মালচের পুরুত্ব সাধারণত ৫-১০ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত।

ধাপ ৪: মালচিং রক্ষণাবেক্ষণ
মালচিং করার পরে নিয়মিতভাবে এর যত্ন নেওয়া জরুরি। যদি মালচের স্তর নষ্ট হয়ে যায় বা পাতলা হয়ে যায়, তবে নতুন মালচ যোগ করুন।

টমেটো চাষে প্লাস্টিক মালচের ব্যবহার
বাণিজ্যিক টমেটো চাষে কালো প্লাস্টিক শিট খুবই জনপ্রিয়। এটি সূর্যের আলো আটকায়, ফলে আগাছা জন্মাতে পারে না। এছাড়া, এটি মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং পানি সাশ্রয় করে।

প্লাস্টিক মালচ ব্যবহার করার সুবিধা
দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকর।
সেচের পরিমাণ কমায়।
আগাছা সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করে।
ফসলের গুণমান বৃদ্ধি করে।
প্লাস্টিক মালচ ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা
এটি পরিবেশবান্ধব নয়।
ব্যয়বহুল হতে পারে।
সঠিকভাবে অপসারণ না করলে মাটির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মালচিং পদ্ধতির চ্যালেঞ্জ
১. উপকরণের খরচ: কিছু মালচ উপাদান যেমন প্লাস্টিক বা পলিথিন তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল।
২. পরিবেশগত প্রভাব: অজৈব মালচ যেমন প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণ হতে পারে।
৩. পরিচর্যা প্রয়োজন: মালচিংয়ের পরে স্তর ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করলে কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।