Скачать или смотреть ইস্তেখারার সঠিক পদ্ধতি কি? ইস্তেখারা কিভাবে করতে হয়৷৷mawlana ibrahim sultan

ইস্তেখারা বা কল্যাণ কামনা করা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি৷ তবে ইস্তেখারা কখন করতে হয়, কিভাবে করতে হয়- এর নিয়ম পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের মাঝে যথেষ্ট ভুল ধারণা এবং ভুল পদ্ধতি চালু রয়েছে৷ তাই আজকের আলোচনায় ইস্তেখারার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে সুন্নাহের আলোকে কয়েকটি কথা বলবো ইনশাআল্লাহ৷

ইস্তেখারা শব্দের অর্থ হচ্ছে কল্যাণ কামনা করা কল্যাণ চাওয়া৷ আর শরীয়তের পরিভাষায় ইস্তেখারা বলা হয় দুনিয়াবী কোন বিষয়- যেমন বিয়ে-শাদী ব্যবসা বাণিজ্য চাকরি বাকরি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া মোটকথা জীবনঘনিষ্ঠ যেকোনো বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আল্লাহর সঙ্গে পরামর্শ করা, আল্লাহর দরবারে এর কল্যাণ কামনা করা,এর নামই ইস্তেখারা৷ আর এটা মুমিনের জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি আমল৷ এজন্যই রাসূলে কারীম (সা.) তাঁর সাহাবাদের কে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে এর প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিতেন৷ সাহাবী জাবের রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُعَلِّمُنَا الاِسْتِخَارَةَ فِي الأُمُورِ كُلِّهَا كَمَا يُعَلِّمُنَا السُّورَةَ مِنَ الْقُرْآنِ
রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন, ঠিক সেভাবেই প্রতিটি কাজে আমাদেরকে ইস্তিখারা (কল্যাণ প্রার্থনা করার) শিক্ষা দিতেন।


তবে এই ইস্তেখারা আমরা কিভাবে করব এ সম্পর্কে নবীজির নির্দেশ হচ্ছে,

إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالأَمْرِ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الْفَرِيضَةِ

যখন তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করে তখন সে যেন ফরয ছাড়া দুই রাক’আত নামায আদায় করে নেয়৷
আর এই দুই রাকাত নামাজের নির্দিষ্ট কোন সূরা নেই, অন্যান্য নামাজের মত যে কোন সূরা দিয়ে পড়তে পারবে এবং রাতে-দিনের যে কোন সময় তা পড়তে পারবে এর কোনো নির্দিষ্ট সময়ও নেই৷

আর নামাজ পড়ার পর হাদীসে বর্ণিত কল্যাণ কামনার একটি দোয়া পড়া৷

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ

হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্য চাইছি, তোমার শক্তির সাহায্য চাইছি এবং তোমার মহান অনুগ্রহ চাইছি। তুমিই শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী, আমার কোন ক্ষমতা নেই। তুমি অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী, আমার কোন জ্ঞান নেই। তুমি অদৃশ্যবিষয়ে সম্পূর্ণরূপে ও সম্যকভাবে জানো। হে আল্লাহ! তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য, আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজের পরিণামের দিক হতে অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বলেছেনঃ আমার দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে ভাল মনে কর তবে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দাও এবং আমার জন্য সহজ করে দাও।

وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ

পক্ষান্তরে তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজকর্মের পরিণামের দিক হতে অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বলেছেনঃ আমার ইহকাল-পরকালের ব্যাপারে ক্ষতিকর মনে কর, তবে তুমি সে কাজটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে দাও। এবং আমাকে তা থেকে বিরত রাখ। যেখান হতে হোক তুমি আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করে দাও”।

আর হাদিসে বর্ণিত هذا الأمر এই জায়গাতে এসে মনে মনে যে কাজের ইচ্ছা আমরা করেছি সে কাজের দিকে খেয়াল রাখা বা কাজের নাম উল্লেখ করা৷

তবে,সময়ের স্বল্পতা বা অন্য কোনো কারণে এই দু’টি কাজ সম্ভব না হলে তিনবার বা সাতবার এই দুআ পড়েও ইস্তেখারা করা যায়, اللَّهُمَّ خِرْ لِي، وَاخْتَرْ لِي (ইবনুস সুন্নী, হাদীস : ৫৯৭, ৫৯৮)
অতঃপর যে দিকে কলবের ইতমিনান হবে আল্লাহর উপর ভরসা করে সেই কাজ আরম্ভ করা। এভাবে আমল করলে ইস্তেখারা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ৷ তবে,সবচেয়ে ভালো হলো কাজ শুরু করার আগ পর্যন্ত সময়-সুযোগে এই আমলটি চালিয়ে যাওয়া৷

সুপ্রিয় দর্শক,
সহিহ হাদিসে ইস্তেখারার এই দুটি পদ্ধতি জানা যায়৷ এর বাইরে যত পদ্ধতি চালু রয়েছে এগুলোর কোনোটিই সুন্নাহ সম্মত নয়৷ বরং এই সবগুলোই নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে হয়তো কেউ কেউ বলেছেন বা নানাভাবে এগুলো সমাজে চালু হয়ে গেছে৷ যেমন কেউ কেউ বলে থাকেন- ইস্তেখারা করতে হয় রাতের বেলা, ইস্তেখারা করার পর স্বপ্ন দেখতে হয়, ইস্তেখারার নামাজ এর নির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে,আবার কেউ বলছেন 40 দিন করতে হয় ইত্যাদি, এইসবগুলোই নিজেদের তৈরি,নিজেদের বানানোর পদ্ধতি৷ এর থেকে আমাদের সকলেই বেঁচে থাকা উচিত৷ বরং হাদীসে বর্ণিত ইস্তেখারার পদ্ধতির উপর আমাদের আমল করা উচিত৷
আল্লাহতালা আমাদেরকে ইস্তেখারার সঠিক পদ্ধতির উপর আমল করার তৌফিক দান করুন৷