আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছে যে পৃথিবীতে লিঙ্গ দুইটা নারী এবং পুরুষ অন্য কোনো লিঙ্গ নাই, ইসলামের দৃষ্টিতে মতবাদ কি?
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে, মানবজাতির লিঙ্গ সম্পর্কে মূল ধারণা কুরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত। ইসলামে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে আল্লাহ মানবজাতিকে পুরুষ ও নারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে লিঙ্গ বিভাজন
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
"আর তিনি সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন যুগল (পুরুষ ও নারী) আকারে, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।"
— (সুরা যারিয়াত, ৫১:৪৯)
এছাড়াও, সুরা আন-নিসা-তে আল্লাহ বলেন:
"হে মানুষ! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তাঁর সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন।"
— (সুরা আন-নিসা, ৪:১)
হিজড়া বা ইন্টারসেক্স ব্যক্তিদের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলাম স্বীকার করে যে কিছু মানুষ জন্মগতভাবে শারীরিক বা জিনগত পার্থক্যসহ জন্ম নিতে পারে, যা আধুনিক বিজ্ঞানে "ইন্টারসেক্স" বা হিজড়া পরিচিত। ইসলামে তাদের প্রতি সদয় ও ন্যায়সঙ্গত আচরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নবী (সা.) হিজড়াদের প্রতি দয়াশীল ছিলেন এবং সমাজে তাদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করার শিক্ষা দিয়েছেন। তবে, ইসলামে তৃতীয় লিঙ্গকে পুরুষ বা নারীর বাইরে স্বতন্ত্র একটি লিঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, বরং তাদের জন্য শরিয়ত নির্দিষ্ট কিছু বিধান রয়েছে।
উপসংহার
ইসলামের দৃষ্টিতে লিঙ্গ দুটি—পুরুষ ও নারী—এটাই মূল ভিত্তি। তবে, শারীরিক ও জিনগত পার্থক্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করা ব্যক্তিদের প্রতি ইসলাম সহানুভূতিশীল এবং তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করার পক্ষে।
ইসলামের দৃষ্টিতে লিঙ্গ ও মানব সৃষ্টির প্রকৃতি
ইসলামের মূল শিক্ষা হলো, আল্লাহ মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন—পুরুষ এবং নারী। এটি কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:
📖 "আর আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো।"
— (সুরা আল-হুজুরাত, ৪৯:১৩)
📖 "তিনি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও, এবং তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।"
— (সুরা আর-রূম, ৩০:২১)
ইন্টারসেক্স বা তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়ে ইসলামের অবস্থান
ইসলামে সাধারণত দুটি মূল লিঙ্গ (নারী ও পুরুষ) স্বীকৃত। তবে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা জন্মগতভাবে এমন শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যাদের স্পষ্টভাবে পুরুষ বা নারী হিসেবে নির্ধারণ করা কঠিন। ইসলামী ফিকহে এই ধরনের মানুষদের "খুনসা" (خنثى) বলা হয়, যা আধুনিক ভাষায় "ইন্টারসেক্স" নামে পরিচিত।
খুনসা বা ইন্টারসেক্স ব্যক্তিদের শরিয়ত অনুযায়ী বিধান
🔹 দুই ধরনের খুনসা আছে:
খুনসা ওয়াদিহ (স্পষ্ট খুনসা) – যখন চিকিৎসা বা শরীরের গঠন দেখে নির্ধারণ করা যায় যে তিনি পুরুষ বা নারী।
খুনসা মুশকিল (জটিল খুনসা) – যখন কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গ নির্ধারণ করা কঠিন হয়।
✅ শরিয়তে নির্দেশনা:
খুনসা ওয়াদিহ হলে তাকে পুরুষ বা নারীর বিধান অনুসারে জীবনযাপন করতে হবে।
খুনসা মুশকিল হলে, শরিয়তের জ্ঞানী আলেম ও চিকিৎসকরা গবেষণা করে তাদের উপযুক্ত লিঙ্গ নির্ধারণের চেষ্টা করেন।
ইসলামে হিজড়া বা ইন্টারসেক্স ব্যক্তিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নিষেধ করা হয়েছে এবং তাদের জন্য প্রাপ্য উত্তরাধিকার ও সম্পত্তির অধিকার রয়েছে।
লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলাম বিশ্বাস করে যে আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করা হারাম, যদি তা অহেতুক করা হয়। কুরআনে বলা হয়েছে:
📖 "আমি অবশ্যই তাদেরকে বিভ্রান্ত করবো, তাদেরকে আশা দেখাবো, আমি অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করবো, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করবে।"
— (সুরা আন-নিসা, ৪:১১৯)
🔹 তবে, যদি কোনো ব্যক্তি জন্মগতভাবে "খুনসা মুশকিল" হয় এবং চিকিৎসাবিদরা তার প্রকৃত লিঙ্গ শনাক্ত করে চিকিৎসার মাধ্যমে তা ঠিক করেন, তাহলে এটি ইসলামে অনুমোদিত হতে পারে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে লিঙ্গ পরিবর্তন (যেমন একজন সুস্থ পুরুষের নিজেকে নারী বানানো বা নারীর নিজেকে পুরুষ বানানো) ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
ইসলামে লিঙ্গ পরিচয়ের গুরুত্ব
1️⃣ পুরুষ ও নারীর ভূমিকা ভিন্ন কিন্তু সম্মান সমান:
ইসলাম পুরুষ ও নারীর মধ্যে কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করেনি বরং উভয়কে আলাদা দায়িত্ব দিয়েছে।
"পুরুষরা নারীদের রক্ষক।" (সুরা আন-নিসা, ৪:৩৪)
"নিশ্চয়ই আমি কোনো পুরুষ বা নারীর শ্রম বৃথা যেতে দেই না।" (সুরা আলে ইমরান, ৩:১৯৫)
2️⃣ লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তন করা হারাম:
ইসলাম শরীরের কোনো অনর্থক পরিবর্তনকে গ্রহণ করে না।
নবী (সা.) বলেছেন: "আল্লাহ তাদের প্রতি লানত করেছেন, যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে।" (বুখারি, ৪৮৮৭; মুসলিম, ২১২৫)
উপসংহার
✅ ইসলামে লিঙ্গ দুটি: নারী ও পুরুষ।
✅ যদি কেউ জন্মগতভাবে ইন্টারসেক্স হয়, তবে শরীয়ত অনুযায়ী তার প্রকৃত লিঙ্গ নির্ধারণ করা হবে।
✅ ইচ্ছাকৃতভাবে লিঙ্গ পরিবর্তন করা ইসলামে হারাম।
✅ সব মানুষকে সম্মানের সঙ্গে দেখার ও ন্যায়বিচার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
🔹 সুতরাং, ইসলাম লিঙ্গ বিভাজনে স্পষ্ট অবস্থান দেয়—পুরুষ ও নারীই প্রাকৃতিকভাবে আল্লাহর সৃষ্টি। তবে জন্মগতভাবে বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে ইসলামী শরিয়ত ন্যায়বিচার ও করুণা প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়।
#IslamicView #QuranAndSunnah #IslamicRulings #GenderIdentityInIslam #Fiqh #IslamicTeachings #HadithOfTheDay #MuslimBeliefs #ShariaLaw #IslamicEthics #MaleAndFemaleInIslam #IslamAndModernity #IslamicLifestyle #FaithAndGuidance #IslamicPerspective #HalalLiving #IslamForEveryone #SpiritualWisdom #DeenOverDunya #IslamicScholarship #MuslimIdentity #ProphetTeachings #IslamicLawAndEthics
Информация по комментариям в разработке