পূজার অফারে শপিংমল থেকে কিছু কিনা যাবে কি?
-প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহ।
**প্রশ্ন (১৭/১৩৭) : অমুসলিমদের নানা উৎসব যেমন পূজা, হ্যালোইন, ব্লাক ফ্রাইড্রে, ক্রিসমাস, নববর্ষ ইত্যাদি উপলক্ষে অনেক দোকানে বিশেষ ছাড় দেয়, এই সব ছাড় গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
আত-তাহরীক
উত্তর : অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে না এবং উক্ত উপলক্ষে এলাকার দোকানের দেওয়া কোন ছাড় গ্রহণ করাও যাবে না। কারণ সেখানে গমন করলে এবং ক্রয়-বিক্রয় করলে তাদের ধর্মীয় উৎসবকে সম্মান করা হবে এবং তা বাস্তবায়নে সহায়তা করা হবে। অথচ আল্লাহ নেকীর কাজে পরস্পরে সাহায্য করতে বলেছেন এবং পাপের কাজে সাহায্য করতে নিষেধ করেছেন (মায়েদাহ ৫/২)। তবে সাধারণভাবে উক্ত শহরে বা এলাকার সকল দোকানে ছাড় দিলে ছাড়ে নিত্যপণ্য ক্রয়ে কোন দোষ নেই। কারণ রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রস্ত্ততকৃত হালাল খাদ্য বা পণ্য হাদিয়া হিসাবে গ্রহণ করতেন (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৪৩৭২; ইবনু তায়মিয়াহ, ইক্বতিযাউছ ছিরাত্বিল মুস্তাক্বীম ২/৫১-৫২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১২/২৫৩-৫৪)।
**প্রশ্ন (৩৮/১১৮) : পূজার সময় বাজারে ছাগল ক্রয়-বিক্রয় চাঙ্গা হয়। এ সময় ছাগল বিক্রয় লাভজনক হয়। এ সময় মুসলমানদের জন্য ছাগল বিক্রয় জায়েয হবে কি?
আত-তাহরীক
উত্তর : পূজাকে কেন্দ্র করে ছাগল বিক্রয় করা যাবে না। কারণ এ সময় তা হিন্দুরা কিনে মূর্তির নামে উৎসর্গ করে থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না’...। ‘তোমাদের উপর হারাম করা হ’ল মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের মাংস, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গীত পশু, শ্বাসরোধে মৃত পশু, প্রহারে মৃত পশু, পতনে মৃত পশু, শিংয়ের গুঁতায় মৃত পশু, হিংস্র জন্তুর খাওয়া পশু, তবে যা তোমরা যবেহ দ্বারা হালাল করেছ, তা ব্যতীত এবং পূজার বেদীতে যবেহ করা পশু... (মায়েদাহ ৫/২-৩)। তবে পূর্ব থেকে আর্থিক সংকটের কারণে বিক্রয় করে থাকলে বা মুসলিম ক্রেতার নিকট বিক্রয় করলে বা মূর্তির উদ্দেশ্যে ক্রয় হচ্ছে না বিষয়টি নিশ্চিত হ’লে এ সময়ে ছাগল ক্রয়-বিক্রয়ে দোষ নেই।
**প্রশ্ন (১৯) : বিধর্মীদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন দোকানে ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে। এ ধরণের ডিসকাউন্টে পণ্য ক্রয় করা যাবে কি?
ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ |
উত্তর : বিধর্মীদের উৎসব উপলক্ষে বাজারের আয়োজন করা হয়ে থাকে তা থেকে পোশাক-পরিচ্ছদ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র শর্ত সাপেক্ষে ক্রয় করতে পারে। এই জিনিস ক্রয়ের মাধ্যমে যেন তাদের উৎসবের সহযোগিতা এবং তাদের স্বাদৃশ্যের কারণ যেন না হয় (ইক্বতিযাউ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম, ২/৫২৬; আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, ২/৪৮৯ পৃ.)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন وَ تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ ۪ ‘সৎকাজ ও তাক্বওয়ার ব্যাপারে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা কর, পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না’ (সূরা আল-মায়েদাহ: ২)। ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে’ (আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১)।
**প্রশ্ন (২১): আমি একজন উদ্যোক্তা। একজন মুসলিম ব্যবসায়ী কি হিন্দুদের পূজা উপলক্ষে পণ্যের ওপর আকর্ষণীয় মূল্যছাড় দিতে পারে?
Al-itisam
উত্তর: হিন্দুদের পূজা উপলক্ষে কোনো প্রকারের আনন্দ ও উল্লাস অনুভব করে ছাড় দেওয়া হলে তা একেবারে শিরক এবং কুফরীর কাজ হিসেবে গণ্য হবে, যা থেকে তওবা করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শক্ৰকে বন্ধুরূপে গ্ৰহণ করো না, তোমরা কি তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা প্রেরণ করছ; অথচ তারা তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে’ (আল-মুমতাহিনা, ৬০/১)। ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত’ (আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১)। আর যদি ছাড় দেওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হয় তাদেরকে কোনো প্রকারের সহযোগিতা করা, যাতে তাদের পূজা সহজেই সম্পন্ন হয়ে যায়; তাহলেও তা নিষিদ্ধ এবং হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা অন্যায় এবং গুনাহের কাজে একে অপরের সহযোগিতা করো না’ (আল-মায়েদা, ৫/২)।
Информация по комментариям в разработке