ইসলামে স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার
ইসলামে স্বামী ও স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কোনো পুরুষ যখন কোনো নারীকে বিয়ে করে ঘরে আনে, তখন সেই নারীর ভরণপোষণ বা অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্বে ফরজ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর সন্তানের অধিকারী পিতার কর্তব্য হলো প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সেসব নারীর খোরপোষের দায়িত্ব গ্রহণ করা’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৩)।
মহানবী (সা.)-ও স্ত্রীর ভরণপোষণ ও খোরপোষের দায়িত্ব স্বামীর কাঁধে দিয়েছেন। হজরত মুয়াবিয়া বিন হায়দার (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, স্বামীর দায়িত্বে স্ত্রীর কী অধিকার রয়েছে? তিনি বলেন, ‘সে আহার করলে তাকেও একই মানের আহার করাবে, সে পরিধান করলে তাকেও একই মানের পোশাক পরিধান করাবে’ (ইবনে মাজা, হাদিস : ১৮৫০)। বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) নারীদের কল্যাণ কামনা করা ও তাদের অন্ন, বস্ত্র প্রদান করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।... তোমাদের ওপর তাদের ন্যায়সংগত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছদের অধিকার রয়েছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৮৪০)
ভরণপোষণ করার মূলনীতি
সব স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা সমান নয়। কোনো কোনো স্বামী উচ্চবিত্ত। কেউবা মধ্যবিত্ত। আবার কেউ নিম্নবিত্ত। তাই স্ত্রীর ভরণপোষণ করার ক্ষেত্রে স্বামীর অবস্থা ধর্তব্য হবে। এ ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন একটি মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর তা হলো, স্বামী তার সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীর ওপর ব্যয় করবে। সচ্ছল হলে আপন সচ্ছলতা অনুযায়ী ব্যয় করবে। আর অসচ্ছল হলে নিজের অসচ্ছলতা অনুযায়ী ব্যয় করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিজিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৭)
মুক্ত হস্তে দান করা
আমরা বিভিন্ন সময় দান-খয়রাত করি। দান-খয়রাত করা অত্যন্ত ভালো ও প্রশংসনীয় কাজ। তবে এই দান হতে হবে মুক্ত হস্তে। অধিক পরিমাণে নফল দান করতে গিয়ে যেন পরিবার-পরিজনের হক নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নফল দানের কারণে স্ত্রী, সন্তান ও পরিবার-পরিজন যেন কষ্টে পড়ে না যায় সেদিকে দৃষ্টি রাখা জরুরি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম দান হলো সচ্ছলতা বজায় রেখে যা করা হয়। ওপরের (দাতার) হাত নিচের (গ্রহীতার) হাতের চেয়ে উত্তম। পোষ্যদের থেকে দান-খয়রাত শুরু করো। অন্যথায় তোমার স্ত্রী বলবে, আমার ভরণপোষণ দাও নতুবা আমাকে তালাক দাও। তোমার দাস বলবে, আমাকে ভরণপোষণ দাও অন্যথায় আমাকে বিক্রয় করো। তোমার সন্তান বলবে, আমাকে কার দায়িত্বে ছেড়ে যাচ্ছেন?’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১৯৫)
দূরে থাকা অবস্থায় স্ত্রীর খোরপোষ
বহু স্বামী প্রবাসে বা বিদেশ বিভূঁইয়ে থাকে। বিদেশ বিভূঁইয়ে থাকা অবস্থায় অনেক স্বামী এমন রয়েছে যারা স্ত্রীর ভরণপোষণ দেয় না ও খোরপোষ প্রদান করে না। এমনকি খোঁজখবরও রাখে না। এমনটি করা শরিয়তসম্মত নয়। কেননা স্বামী প্রবাসে থাকা অবস্থায় স্ত্রীর খোরপোষ ও ভরণপোষণের অধিকার রহিত হয়ে যায় না। হজরত ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি সৈন্যবাহিনীর পরিচালকবৃন্দের কাছে লিখেছিলেন, যেসব পুরুষ তাদের স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকছে, তাদের ব্যাপারে যেন এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় যে, তারা তাদের স্ত্রীদের খোরপোষ আদায় করুক অথবা তালাক দিয়ে দিক। যদি তালাকই দিয়ে দেয়, তা হলে তাদের আবদ্ধ রাখাকালীন খরচ বিবিদের কাছে তারা পাঠিয়ে দিক।’ (বুলুগুল মারাম, হাদিস : ১১৪৮)
স্বামীর অজান্তে টাকা নেওয়া
সমাজে কিছু কিছু স্বামী এমন রয়েছে যারা স্ত্রীদের হাতখরচ দেয় না। অথচ জীবন চালাতে গিয়ে অনেক সময় স্ত্রীদের টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয়। অতএব যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় হাতখরচ না দেয় এবং স্ত্রী সংসারের, নিজের বা সন্তানদের প্রয়োজনে ন্যায়ানুগ পন্থায় স্বামীর মাল থেকে তার অজান্তে প্রয়োজন পরিমাণ মাল নিয়ে নেয়, তা হলে এটা তার জন্য জায়েজ। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হিন্দা বিনতু উতবা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আবু সুফিয়ান একজন কৃপণ লোক। তিনি আমাদের এত পরিমাণ খরচ দেন না, যা আমার ও আমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট হতে পারে; যতক্ষণ না আমি তার অজান্তে মাল থেকে কিছু নিই। তখন তিনি বললেন, তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য ন্যায়সংগতভাবে যা যথেষ্ট হয় তা নিতে পারো।’ (বুখারি : ৫৩৬৪)
ইসলামে স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার
নর-নারী সৃষ্টি করার পর মহান আল্লাহ তাদের এক শ্রেণিকে অপর শ্রেণির ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। নারীর ওপর পুরুষকে বানিয়েছেন দায়িত্বশীল ও কর্তৃত্বশীল। পুরুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন কঠোরতা ও শক্তিমত্তা দিয়ে, নারীকে সৃষ্টি করেছেন কোমলতা ও মায়া-মমতা দিয়ে। মানব-বংশ অব্যাহত রাখার জন্য নারীকে পালন করতে হয় সন্তানের দায়িত্ব। সন্তান লালন-পালনের জন্য যে কোমলতা, মায়া-মমতা ও আবেগ-সহিষ্ণুতা দরকার, মহান আল্লাহ তা নারীকে দিয়েছেন পূর্ণ মাত্রা। পক্ষান্তরে, রোদে-ঝড়ে-বৃষ্টিতে কষ্ট-সংগ্রাম করে জীবিকা উপার্জন ও স্ত্রী-সন্তানের জন্য পরিশ্রমের উপযুক্ততা দিয়েছেন পুরুষকে। পুরুষ হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে বিভিন্ন ধরনের পরিশ্রম করে নারীর অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে। সর্বাবস্থায় নারীর নিরাপত্তা বিধান করে। সুখে-দুঃখে নারীর পাশে দাঁড়ায়। এসব কারণে প্রজ্ঞাময় আল্লাহ পুরুষদের নারীদের ওপর কর্তৃত্বশীল বানিয়েছেন। কুরআনে এসেছে, ‘পুরুষরা নারীদের ওপর কর্তৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের ওপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৪)। পুরুষ যখন তার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করবে, তখন পরিবারের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। আল্লাহ বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।
#নোমান_আলী_খান #ইসলামিক_ভিডিও #ইসলামিক_ভিডিও.@RicisOfficial1795 @safaislamic @alorpothmultimedia @alordishari1 @alorporoshstory @BanglaWazTv2 @AlorPothe24 @alorpoth1605
Информация по комментариям в разработке