ব্যায়ামের উপকারিতা
হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও বাতজ্বর বিশেষজ্ঞ
ডাঃ মোঃ শামসুল আলম (স্বপন)
এমবিবিএস, এমএসিপি-আমেরিকা,
ডি-কার্ড (কার্ডিওলজি)
কালার ডপলার ইকো-কার্ডিওগ্রাফিতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, নয়াদিল্লী, ইন্ডিয়া।
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, হৃদরোগ বিভাগ
নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ
চেম্বার:
ঢাকা ক্লিনিক, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ
রোগী দেখার সময়: প্রতিদিন বিকেল ৪.০০ টা থেকে শুরু। (শুক্র - শনি বন্ধ)
যোগাযোগ : ০১৭০৬৬৯৪৪৪৩
সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি: ব্যায়ামের নানাবিধ উপকারিতা
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামকে একটি সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনযাপনের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। আধুনিক জীবনযাত্রার নানা নেতিবাচক প্রভাব থেকে শরীর ও মনকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রতিদিন সামান্য কিছু সময় শারীরিক পরিশ্রম করলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। শারীরিক সুস্থতা থেকে শুরু করে মানসিক প্রফুল্লতা, প্রায় সব ক্ষেত্রেই ব্যায়ামের উপকারিতা অনস্বীকার্য।
শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যায়াম:
*১. হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর সুরক্ষা:* নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হয় এবং সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নত হয়। এটি উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুলাংশে হ্রাস করে।
*২. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:* শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে ক্যালোরি খরচ হয়, যা শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ব্যায়াম মেটাবলিজম বা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, ফলে শরীরে চর্বি জমার প্রবণতা কমে।
*৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:* নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে। এর ফলে সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
*৪. হাড় ও পেশির শক্তি বৃদ্ধি:* ব্যায়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে অস্টিওপোরোসিসের (হাড় ক্ষয়) ঝুঁকি কমায়। পাশাপাশি, মাংসপেশিকে শক্তিশালী ও সুগঠিত করে শারীরিক শক্তি ও ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
*৫. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ:* ব্যায়াম ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি অত্যন্ত উপকারী।
*৬. ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস:* বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসার, যেমন - কোলন, স্তন এবং ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যায়াম:
*১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হ্রাস:* ব্যায়ামের সময় মস্তিষ্ক থেকে এন্ডোরফিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা "ফিল-গুড" হরমোন নামে পরিচিত। এটি মনকে প্রফুল্ল রাখে এবং মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে।
*২. ঘুমের মান উন্নত করে:* যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের ঘুমের মান উন্নত হয়। শারীরিক পরিশ্রমের ফলে শরীর ক্লান্ত হয় এবং রাতে গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হয়, যা শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
*৩. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি:* ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়, যা স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি বয়স্কদের ক্ষেত্রে স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
*৪. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি:* নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শারীরিক গঠন সুন্দর হয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা একজন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
কী ধরনের ব্যায়াম করবেন?
সুস্থ থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের সমন্বয় প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে:
*অ্যারোবিক ব্যায়াম:* হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটার মতো ব্যায়ামগুলো হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের জন্য উপকারী।
*শক্তি বর্ধক ব্যায়াম:* ওজন তোলা, পুশ-আপ, স্কোয়াটের মতো ব্যায়ামগুলো পেশি ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়।
*ফ্লেক্সিবিলিটি বা নমনীয়তার ব্যায়াম:* স্ট্রেচিং, যোগাসনের মতো ব্যায়াম শরীরের নমনীয়তা বাড়ায় এবং আঘাতের ঝুঁকি কমায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার অ্যারোবিক ব্যায়াম অথবা ৭৫ মিনিট উচ্চ তীব্রতার অ্যারোবিক ব্যায়াম করা উচিত। তবে যেকোনো নতুন ব্যায়াম শুরু করার আগে, বিশেষ করে যদি কোনো শারীরিক অসুস্থতা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
পরিশেষে বলা যায়, সুস্থ ও কর্মঠ জীবনযাপনের জন্য ব্যায়াম একটি অপরিহার্য অঙ্গ। দৈনন্দিন রুটিনে সামান্য কিছু সময় ব্যায়ামের জন্য বরাদ্দ করলে তা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে আনবে।
Disclaimer
This channel is for informational purposes only. It is not intended to be a substitute for professional medical advice, diagnosis, or treatment. Always seek the advice of your doctor with any questions you may have regarding a medical condition or health problems. Reliance on any information provided on this channel is solely at your own risk.
Информация по комментариям в разработке