Скачать или смотреть মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে’ প্রথমবারের মত ভিড়েছে পণ্যবাহী জাহাজ;

কক্সবাজারের মহেশখালীর ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে’ পরীক্ষণমূলক প্রথমবারের মত ভিড়েছে পণ্যবাহী একটি জাহাজ; নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যন্ত্রাংশবাহী জাহাজটি এসেছে ইন্দোনেশিয়া থেকে।

এর মধ্য দিয়ে ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের’ সম্ভাব্যতা নিয়ে মাইলফক রচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় মহেলখালীর মতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটি ঘাটে জাহাজটি পৌঁছায় বলে জানান রাষ্ট্রিয় সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

আবুল কালাম বলেন, নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রেন যন্ত্রাংশ নিয়ে ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’ নামের জাহাজটি গত ২২ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়া থেকে রওনা দেয়। জাহাজটি মঙ্গলবার সকালে এসে পৌছে। এটিতে ৭৩৬ মেট্রিক টনের বেশী বিভিন্ন ধরণের স্টিলের যন্ত্রাংশ ছিল।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে পরীক্ষণমূলকভাবে প্রথমবারের মত জাহাজটি ভিড়েছে উল্লেখ তিনি বলেন, “ জাহাজটি ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মাতারবাড়ী চ্যানেল অতিক্রম করে সমুদ্রবন্দরের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটি ঘাটে পৌঁছায়। এ চ্যানেলের গভীরতা ১৮ মিটার। “

জাহাজটি সফলভাবে সমুদ্রবন্দরের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটি ঘাটে ভিড়তে পারাকে মাইলফলক দাবি করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ বন্দরের অভিযানিক ( অপারেশনাল ) কাজ শুরু না হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল আনার জন্য এই উদ্যোগ। আগামী মাসে আরো গভীরতায় চলাচলে সক্ষম আরেকটি জাহাজ এ জেটি ঘাটে ভিড়ার কথা রয়েছে। “

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী-বাংলাদেশের এ কর্মকর্তা বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হতে আরো ৪ বছর সময় লাগবে। সেখানে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি জোরেশোরে চলছে বন্দরটির নির্মাণকাজও।

“ মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৯ টি জেটি নির্মিত হবে। ইতিমধ্যে কয়লা -বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল আনার জন্য ২ টি জেটি ঘাট নির্মিত হয়েছে। পরবর্তীতে অন্য জেটিগুলো নির্মিত হবে। সবগুলো জেটির নির্মাণকাজ শেষ হলে সমুদ্রবন্দরের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হবে। “

আগামী ২০২৫ সালের মধ্যেই মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ চুড়ান্তভাবে সম্পন্ন হবে উল্লেখ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। মাতারবাড়ী প্রকল্পের আওতায় গভীর সমুদ্রবন্দর এবং ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

“ এই পরিকল্পনা কার্যকরি করা উদ্দ্যেশে ইতিমধ্যে পোর্টের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সেই পোর্টের উদ্বোধনী উপলক্ষে মাদার ভেসেল জাহাজটি ভিড়ানো হয়েছে। এটি পরীক্ষণমূলকভাবে প্রথম মাদার ভেসেল। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা মাইলফলক। বন্দরটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে (সিপিএ) হস্তান্তর করা হবে। সিপিএ বন্দরটিকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু করবে। “

মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের এ কর্মকর্তা বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের কাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারীতে এবং একই বছরের জুলাই মাসে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হবে। এছাড়া বন্দর উন্নয়নের কাজ পুরোপরি শেষ ২০২৫ সালের মধ্যে।

ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা ভেনাস ট্রায়াম্প জাহাজটির ক্যাপ্টেন থো অং বলেন, সাগরপথে খুব সহজেই তারা মাতারবাড়ী বন্দরের জেটিতে পৌঁছেন। কোন ধরণের সমস্যাই পড়তে হয়নি।

তিনি বলেন, “ মনে হয়েছে, আমরা বিশ্বমানের কোন বন্দরে এসেছি। যাতায়তের জন্য এ ধরণের সুযোগ-সুবিধার সম্পন্ন বন্দরটি বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দৃষ্টান্ত হতে পারে। “

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সহকারি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মো. আতাউল হাকিম সিদ্দিকী বলেন, প্রথমবারের মত মাদার ভেসেল আসাটা চট্টগ্রাম বন্দর তথা বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন। এর মধ্য দিয়ে মাতারবাড়ী হারবারের প্রথম অভিযানটা (অপারেশন ) শুরু হয়েছে। এতে সফলতা আসায় পরবর্তীতে পণ্যাবাহী আরো জাহাজ আসবে।

“ প্রথমবারের মত আসা এই মাদার ভেসেল দিয়ে আমরা ট্রাস্ট ট্রায়াল করে নিয়েছি। কি পরিমান জটিলতা এখানে ( মাতারবাড়ী চ্যানেলে ) আছে, কিভাবে জাহাজগুলো ব্যবস্থাপনা করতে হবে। “

চট্টগ্রাম বন্দরের যে অংশটা মাতারবাড়ীতে উন্নয়ন করা হবে তাতে বড় আকারের মাদার ভেসেল ভেড়ানো সক্ষম হবে দাবি আতাউল বলেন, “ মাতারবাড়ী বন্দরের যে গভীরতা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি তাতে দেখা গেছে, চ্যানেলটিতে সবসময় ১৭ মিটারের বেশী গভীরতার পানি থাকে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সবগুলো অঞ্চল বা এলাকাতে কার্গোগুলো যাতায়ত করতে সক্ষম হবে। এতে ভোক্তা পর্যায়ে মালামাল পরিবহনে ব্যয় অনেক কমে যাবে। “