Скачать или смотреть গচ্চা যাবে ১৪৫ কোটি টাকা! বালাসী-বাহাদুরাবাদ ঘাটের ভবিষ্যৎ!!

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট। কি অবাক হচ্ছেন। সত্যিই এই নকশা দেখে অবাক হবারই কথা। এ প্রজন্মের অনেকেই গল্প শুনেছে গাইবান্ধার বালাসী থেকে বাহাদুরাবাদ ফেরি পারাপার হতো, চলাচল করতো বড় বড় লঞ্চ-স্টীমার এমনকি রেলওয়ে ফেরি। দীর্ঘদিন পর আবারো শুরু হতে যাচ্ছে ফেরি ও লঞ্চ সার্ভিস। এবার চলুন দেখে আসা যাক লঞ্চঘাট নির্মাণের কাজ কতদুর।
যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদে ট্রেন পার হতো ফেরিতে! কি অবাক কাণ্ড। কখনও দেখেছেন রেলওয়ে ফেরি? এমনই ফেরির ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে গাইবান্ধার বালাসী ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ফেরি ঘাট। ১৯৩৮ সালে চালু হয় রেলওয়ে ফেরি।যার নাম দেওয়া হয় ‘বাহাদুরাবাদ রেল ফেরি ঘাট’।
১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ সরকার ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য চালু করে বাহাদুরাবাদ রেল ফেরি। তখন একপাড় বাহাদুরাবাদ ঘাট অন্য পাড়ে গাইবান্ধার তিস্তাপাড় ঘাট। তিস্তামুখ ঘাট ও জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রে রেল ফেরির সার্ভিস চালু করা হয়। তৎকালীন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর জেলার গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলা-সহ বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যাত্রী ও মালপত্র পারাপারের জন্য এই ফেরি সার্ভিসটি চালু করে।
ক্রমেই তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৯০ সালের পর যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটের কারণে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখ ঘাট থেকে বালাসি ঘাটে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে দিনাজপুর থেকে রংপুর হয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসিঘাট পর্যন্ত ট্রেনে যাতায়াত করতেন এই অঞ্চলের মানুষজন। এছাড়াও সান্তাহার, বগুড়া, বোনারপাড়া হয়েও ট্রেনেই এই ঘাট দিয়ে মানুষ চলাচল করতেন। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর থেকে লোকাল ট্রেন, মেল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে কিছুদিন মালবাহী ওয়াগন চালু করা হয়। সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।
পরিবর্তিতে নৌ চ্যানেলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেলওয়ে ফেরি ঘাটেরও স্থান পরিবর্তন শুরু হয়। উত্তরাঞ্চলের এই ঘাটটি তিস্তামুখ, ফুলছড়ি, অবশেষে বালাসি ঘাট নামে রেলওয়ে ফেরিঘাট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৯০ সালের দিকে যমুনা নদীর নাব্যতা কমে এলে ওপাড়ের ঘাটের নতুন ঠিকানা হয় গাইবান্ধার বালাসিতে। এই দুই ঘাটেই ভীড়তো বড় বড় জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার-সহ নানা নৌযান। অসম-বেঙ্গল রেলওয়ের অধীনে এই রেলওয়ে ফেরি সার্ভিসটি যাত্রা শুরু করেছিল। এখনও বহু স্মৃতি আগলে বালাসী ও বাহাদুরাবাদ ঘাট রয়েছে ঠিকই। তবে অতীতের সেই জৌলুস এখন আর নেই।
১৯৮৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে বালাসি-বাহাদুরাবাদ ঘাটের মধ্যে রেলওয়ে ফেরি পারাপারে অন্যতম মাধ্যম ছিল। এই ফেরি ঘাট দিয়ে একতা ও তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রতিদিন উত্তরাঞ্চল হতে হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চলাচল করত। ২০০৪ সালের কোন এক সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ১৭ বছর পর আবারো মানুষ স্বপ্ন দেখছে। ১৬ একর জায়গা জুড়ে দু’পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে লঞ্চঘাট। যাত্রী ছাউনি থেকে শুরু করে সব স্থাপনার কাজ শেষ। জুনে কাজ শেষে হস্তান্তর করবে কর্তৃপক্ষ। বিআইডব্লিউটিএ আশা করছে এই বর্ষাতেই ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট চলবে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে। আবার প্রাণ ফিরে পাবে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র। মাত্র চার ঘন্টায় বালাসীঘাট থেকে যাওয়া যাবে রাজধানী ঢাকায়।