Lalon song 2023"ওরে দেখা দিয়ে ভাবের শহর" ভারতবর্ষের কলকাতা থেকে আগত শিল্পী অঞ্জলি ঘোষ দোলনা।

Описание к видео Lalon song 2023"ওরে দেখা দিয়ে ভাবের শহর" ভারতবর্ষের কলকাতা থেকে আগত শিল্পী অঞ্জলি ঘোষ দোলনা।

লালন মেলা -২০২৩ ইং ৪,৫ ও ৬ ই মার্চ।
বাংলা বর্ষচক্রের সমাপনী মাস চৈত্র। লোকজ ও লোকায়তিক দর্শন-কৃত্যাদিঋদ্ধ অনুষ্ঠান-অধিষ্ঠানের জন্য বঙ্গাব্দপঞ্জির অন্তিম এই মাস গুরুত্বপূর্ণ। ফকির লালন সাঁইজির সাধনধাম কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় এই সময়টায় জীবনপিপাসু সর্বস্তরের জনগোষ্ঠীর জমায়েত হয় দোল উৎসব উপলক্ষ করে। এই উৎসবে দেশের এবং বহির্দেশের বোধিসন্ধিৎসু লালনানুরাগীরা সাধুসঙ্গ করার জন্য সমবেত হন, ফকির লালন শাহের সুরের স্রোতধারায় অবগাহন করেন, সাঁইজির অনির্বচনীয় দর্শনের সহুজে প্রেমসাহচর্য ঘটে পেশা-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলের।

দোল পূর্ণিমা লালনস্মারক উৎসবই শুধু নয়, কেবল সুরে আর কথায় উদযাপনই নয় এর মোক্ষ, সাধক ও সাধারণ নির্বিশেষে লালনদর্শনের অনুগামী/অনুরাগীদের কাছে এই তিনদিনব্যাপী দোল উৎসবের তাৎপর্য অনেক ব্যাপকতর ও গভিরাভিসারী। নিছক আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে এর বিচার হবার নয়। বাউল ধারার সব-কয়টি রীতি ও পথ জড়িত সরাসরি জীবনচর্যার সঙ্গে। এর মধ্যে লালনপথের পথিকদের জীবনচর্যা সাধারণ্যে একইসঙ্গে সবচেয়ে বেশি উদযাপিত এবং সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ভুলবোঝাবুঝির শিকার। বলা বাহুল্য, উপরিতলের ভাসা-ভাসা আবছা জানাজানির চেয়ে একেবারে না-জানা অপেক্ষাকৃত শ্রেয়।

লক্ষণীয় যে এই বিশেষ উৎসব তথা দোল পূর্ণিমার তাৎপর্য সম্পর্কে জ্ঞাত লোকের সংখ্যা আমাদের আপন ঐতিহ্যগরিমা প্রায়-ভুলতে-বসা শাহরিক/আধাশাহরিক অক্ষরদর্পিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে একেবারেই অল্প। গুরুত্ব ও লঘুত্ব নিয়ে বাহাস করা লালনদর্শনের অনুগামীদের মূল কাজ নয় জেনেও দোল পূর্ণিমা সামনে রেখে এর কয়েকটি দিকের তাৎপর্য সংক্ষেপে এই নিবন্ধে পেশ করার কোশেশ চালাতে চাই। বিস্তারিত বয়ানের সুযোগ ও পরিসর তৈরি করা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। সাধুসঙ্গ শুরু হয়ে গিয়েছে; এ-বছর, খ্রিস্টাব্দ ২০২৩, মার্চের ০৪ থেকে উৎসবের প্রবর্তনা হয়েছে; বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৪২৯, বোধনের দিন ১৯ ফাগুন। কয়েকটা আঁচড়ে কেবল পরিধিরেখায় সাঁইজির দোল উৎসবের তাৎপর্যসংক্ষেপ দেখার চেষ্টা করি নিবন্ধের গুটিকয় প্যারাগ্রাফের মধ্যে।

একেবারেই সিধাসাপ্টা অর্থে ‘দোল’ শব্দটি চিরপ্রবাহিত প্রকৃতির সমুদয় মৃদুস্নিগ্ধা গাম্ভীর্য ও গভীরতা নিয়ে লীলায়িত নবজৈবনিকতার বার্তাধারক। ধরিত্রীর নবোদ্যম ও সর্বমানবিকতার জয়গাথাবাহী এই শব্দনিহিত মর্ম এবং শব্দানুরণিত আলোচ্য দোল উৎসব। প্রকৃতিপরমা আড়মোড়া ভেঙে নবছন্দে জেগে উঠছেন, শীতনিদ্রোত্থিত প্রকৃতি নিজেকে সুশোভিত করে পুষ্পে-পল্লবে শস্যে-শৌর্যে মেলাস্ফূর্ত হয়ে উঠছেন আমাদের জৈবনিক চৌহদ্দিতে, দোল পূর্ণিমায় এই নিদর্শনবীক্ষা আমরা লাভ করি। দোলের এই তিথি নির্দেশ করে ব্রহ্মচক্রিকার থেকে নবতর আরেক ব্রহ্মচক্রে মহাজাগতিক প্রবেশ। পুরনো জগৎচক্র ছেড়ে নতুন জগৎচক্রের পানে ধাবন। বঙ্গাব্দপঞ্জিকায় এইটাই হচ্ছে একটা আস্ত বছরের সমাপ্তিপ্রান্তের শুরু – চৈত্র  মানেই হচ্ছে প্রকৃতিচাকার পূর্ণতা ও ক্রান্তি – বৈশাখ অপেক্ষমান অদূরেই।

ফকির লালন শাহের সাধনক্ষেত্র কুষ্টিয়া আগের কালে ছিল কুমারখালি নামে চিহ্নিত এবং ব্রিটিশ জমানায় ভৌগোলিকভাবে এটি ছিল বৃহত্তর নদীয়া জেলার অন্তর্গত অংশ। বৈষ্ণবধারা আমাদের এলাকায়, বাংলাদেশে, এই কারণেই বৃহত্তর ও গভীরকেন্দ্রী ভাববলয়ের একটি প্রধান ধারা।

তা যা-ই হোক, সংক্ষেপে কথা এ-ই যে, আলোচ্য দোল পূর্ণিমার উৎসবের নেপথ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  তথ্য হচ্ছে এটি ফকির লালন সাঁইজির জীবৎকালে (আনুমানিক গণনায় সাঁইজির জন্মসাল ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দ এবং জীবনাবসান ১৮৯০) প্রবর্তনা লাভ করেছে সাঁইজির সঙ্গী সাধুদের সুবাদে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফকির লালন সাঁই ছাড়াও অনেকানেক সাধুচরণের দর্শনমর্ম সম্যক অনুধাবন ও অনুবোধনের ব্যাপার। সুস্পষ্টভাবে এইটা আমরা জানতে পাই যে দোল উৎসব সাঁইজির হাজিরায় উদযাপন ও পালনের পরম্পরা হাজার সমাজপ্রাতিষ্ঠানিক বিঘ্ন-বৈরিতা সত্ত্বেও অব্যাহতভাবে নিয়মিত রয়েছে – বছরান্তে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে নাই।

যদিও ফকির লালন শাহের জন্মতারিখ অজ্ঞাত, এক্ষেত্রে নতুন গবেষণায় লালনপন্থের নিষ্ঠাবান গবেষকদের বরাতে বেশকিছু অবজ্ঞাত তথ্য ও তত্ত্ব উঠে এসেছে গেল কয়েক দশকে। ব্যাপারটা আরও গভীর ব্যাপকতা নিয়ে এখন অনুসন্ধিৎসুদের জানাবোঝার নাগালে এসেছে। লালনতীর্থের সর্বজনশ্রদ্ধেয় সাধক ফকির মোহাম্মদ শাহ অনুমোদন করছেন এই মর্মে যে, সাঁইজির জন্মদিনটি সুনির্দিষ্টভাবে চৈত্রমাসের এই তিনটি দিনের মধ্যে একটি হওয়ার ব্যাপারে জোরালো যুক্তি রাখা যায় এবং এই তিনটি দিনের মধ্যে কোনো একটি দিনেই সাঁইজি গুটিবসন্তসংক্রামের অজ্ঞাত ও অনির্দিষ্টকালের সংজ্ঞাসুপ্তি থেকে জেগে উঠেছিলেন এবং কুষ্টিয়ার কালীগঙ্গাঘাটে তাঁকে পেয়েছিল লোকালয়ের মানুষেরা।

কাজেই দিনত্রয়ী, দোলের উৎসবের তিনটে দিনের মুহূর্তাবলি, ফকির লালনের ‘আবির্ভাব’ তথা নবজন্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দোল উৎসব তাই সাঁইজির জন্মদিনেরই স্মৃতিবিজড়িত। উৎসবটা সাঁইজি নবোন্মেষ তথা আবির্ভাব উদযাপনেরই নিমিত্তে আয়োজন করতেন। অবাক হবার কিছু নেই যে বৈষ্ণবপন্থী বাউল সাধকদের মধ্যে ফকির লালন শাহ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুরই পুনরাবির্ভাব তথা নবজন্মলব্ধ চৈতন্য হিশেবেই গণ্য হয়ে থাকেন।

Комментарии

Информация по комментариям в разработке