Taleb Master (তালেব মাস্টার) | আশরাফ সিদ্দিকী | দারিদ্র্য | কবিতা আবৃত্তি | Shamsuzzoha

Описание к видео Taleb Master (তালেব মাস্টার) | আশরাফ সিদ্দিকী | দারিদ্র্য | কবিতা আবৃত্তি | Shamsuzzoha

দারিদ্র্যের কবিতা - তালেব মাস্টার (ড. আশরাফ সিদ্দিকী) | Taleb Master (Ashraf Siddiqui), recited by Shamsuzzoha
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা ড. আশরাফ সিদ্দিকীর কবিতা 'তালেব মাস্টার' (১৯৫০ সালে প্রকাশিত)।
শামসউজজোহার আবৃত্তি।

Poem: Taleb Master (first published in 1950)
Author: Dr. Ashraf Siddiqui
Voice Artist: Shamsuzzoha
Graphics & Edit: Trisha
© Kobita Concert Series
All rights reserved

তালেব মাস্টার
আশরাফ সিদ্দিকী
---
তালসোনাপুরের তালেব মাস্টার আমি
আজ থেকে আরম্ভ করে চল্লিশ বছর দিবসযামী
যদিও করছি লেন নয় শিক্ষার দেন
(মাফ করবেন। নাম শুনেই চিনবেন)
এমন কথা কেমন করে বলি।
তবুও যখন ঝাড়তে বসি স্মৃতির থলি
মনে পড়ে অনেক অনেক কচি মুখ, চপল চোখ:
শুনুন, গর্বের সাথেই বলি
তাদের ভেতর অনেকেই এখন বিখ্যাত লোক।
গ্রাম্য পাঠশালার দরিদ্র তালেব মাস্টারকে
না চিনতে পারেন। কিন্তু তাদেরকে
নাম শুনেই চিনবেন।
(মুনাজাত করি: খোদা তাদের আরও বড় করেন।)

অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে আমার
পিঠ বেঁকে গিয়েছে আর
চোখেও ভাল দেখি না তেমন
তাই ভাবছি সময় থাকতে থাকতে এখন
আত্মকাহিনীটা লিখে যাবো আমার।
রবিবাবু থেকে আরম্ভ করে আজকের তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়
আরও কত সাহেব, চট্টোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায়, রায়,
কত কাহিনীই তো আপনারা লিখে গেলেন!
কিন্তু মানিকবাবু! আপনি কি এমন একটি কাহিনী শুনেছেন:
কোথাও রোমাঞ্চ নেই। খাঁটি করুণ বাস্তবতা-
এবং এই বাংলাদেশেরই কথা।

নমস্কার
আমি সেই তালসোনাপুরের তালেব মাস্টার।
আরম্ভটা খুবই সাধারণ! কারণ
রক্তস্নানে শুভ্র হয়ে সত্তর বছর পূর্বে যখন
প্রথম আলো দেখলাম, হাসলাম এবং বাড়লাম
তখন থেকেই ট্রাজেডি চলছে অবিরাম !
লেখাপড়ায় যদিও খুব ভাল ছাত্র ছিলাম
অষ্টম শ্রেণীতে উঠেই বন্ধ করে দিতে হল কারণ -
পিতা - মাতার সংসারে নিদারুণ অনটন!
জমিদার সাহেবের কৃপায় চাকুরি জুটে গেল একখানা
ডজন খানেক ছেলেমেয়ে পড়ানো ; মাসিক
বেতন তিন টাকা আট আনা
(তাদের ভেতর একজন এখন ব্যারিস্টার!
জানিনা তালেব মাস্টারকে মনে আছে
কিনা তার!)

পাঠশালা খুলেছি তারপর
সুদীর্ঘ দিন ধরে বহু ঝঞ্ঝা ঝড় বয়ে গেছে। ভুলেছি-
অক্লান্তভাবেই জ্ঞানের প্রদীপ জ্বেলেছি।
পানির মত বছর কেটে গেল
কত ছাত্র গেল, এল-
প্রমোশন পেল
কিন্ত দশ টাকার বেশী প্রমোশন হয়নি আমার !
কপালে করাঘাত করেছিলাম জীবনে প্রথম সেবার
যখন টাকার অভাবে একটিমাত্র ছেলের
লেখাপড়া বন্ধ হল।
আক্রার বাজার। চাল-নুনেই কাবার!
কী-ই বা করার ছিল আমার !
ঘরে বৃদ্ধ মা বাপ
পুরাতন জ্বরে ভুগে ভুগে তারাও যখন ছাড়ল
শেষ হাঁপ
দু:খ করে শুধু খোদাকে বলেছিলাম একবার
এতো দরিদ্র এই তালেব মাস্টার!

তবু ছাত্রদের বুঝাই প্রাণপণ
'সকল ধনের সার বিদ্যা মহাধন'

দেশে আসলো কংগ্রেস, স্বদেশী আন্দোলন
খিলাফতের ঝড় বইছে, এলোমেলো
খড়ো ঘরে ছাত্র পড়াই আর ভাবি :
এই সুদিন এল!
মন দিয়ে বুঝাই পলাশীর যুদ্ধ,
জালিয়ানওয়ালার হত্যা
হযরত মোহাম্মদ, রাম-লক্ষণ আর বাদশা সোলেমানের কথা
গুন্ গুন্ করে গান গাই :
'একবার বিদায় দাও মা গো ঘুরে আসি
অভিরামের হয় দ্বীপান্তর ক্ষুদিরামের হয় মা গো ফাঁসি'

আসলো মোস্লেম লীগ, কম্যুনিস্ট বন্ধু
সকলের কথাই ভাল লাগে : ভাবি এরাও বুঝি দেশের বন্ধু !
কোথায় শুনি ঝগড়া লেগেছে।
আগুন জ্বলেছে জ্বলুক ! ওরা তবু'ত জেগেছে!
ভায়ে ভায়ে ঝগড়া কদিন থাকে !
নিভবেই! বলি :
লেজে যদি তোদের আগুন লেগেই থাকে
তবে শক্রর স্বর্ণ- লঙ্কাই পোড়া!

ছেলেটি কাজ করে মহাজনী দোকানে
মাসিক পাঁচ টাকা বেতন। প্রাণে
তবুও বেঁচে আছি আসলো পঞ্চাশ সাল
ঘরে- বাইরে হাটে-বাটে আকাল। ঘোর আকাল!
একশো টাকা চালের মণ- পঞ্চাশ হায় পঞ্চাশ !
ঘরে বাইরে দিনের পর দিন উপাস হায় উপাস!
গ্রামের পর গ্রাম কাল- কলেরায় উজাড় !
নিরীহ তালেব মাস্টারের বুকেও বজ্র
পড়লো ! কলেরায় ছেলেটি মারা গেল বিনা পথ্য বিনা শুশ্রূষায় !
কাফনের কাপড় জোটেনি তাই বিনা কাফনে
বাইশ বছরের বুকের মানিককে কবরে শুইয়ে দিয়েছি এখানে!
এ-ই শেষ নয়, শুনেন : বলি :
মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছিলাম পলাশতলী
সেখানেও আকাল ! মানুষে মানুষ খায় ।
তিন দিনের উপবাসী আর লজ্জা বস্ত্রহীন
হয়ে নিদারুণ ব্যথায়
দড়ি কলসী বেঁধে পুকুরের জলে ডুবে মরেছিল
একদিন সন্ধ্যায়।

মানিকবাবু, আমি জানি, প্রাণবান লেখনী আপনার
তালেব মাস্টারের সাথে হয়ত আপনিও অশ্রু
ফেলছেন বেদনার।
কিন্তু আশ্চর্য ! আজও বেঁচে আছি আমি
এবং অক্লান্তভাবে দিবসযামী
তালসোনাপুরের প্রাইমারী পাঠশালায়
বিলাই জ্ঞানালোক:
ছাত্রদের পড়াই -'ধৈর্য্য ধরো, ধৈর্য্য ধরো
বাঁধ বাঁধ বুক
যত দিকে যত দু:খ আসুক, আসুক'

শুভাকাঙ্খীরা সকলে আমায় বলে 'বোকা মাস্টার'
কারণ ঘরের খেয়ে যে বনের মোষ তাড়ায়
তা ছাড়া সে কি আর !
যুদ্ধ থেমে গেছে । আমরা তো এখন স্বাধীন।
কিন্তু তালেব মাস্টারের তবু ফিরল না তো দিন !
স্ত্রী ছয় মাস অসুস্থা
আমারও সময় হয়ে এসেছে : এই তো শরীরের অবস্থা !
পাঁচ মাস হয়ে গেছে : শিক্ষা বোর্ডের
বিল নাই ।
হয়ত এ বারের টাকা আসতে আসতে শেষ
হবে আয়ু তাই
শতছিন্ন জামাটা কাঁধে ফেলে এখনো
পাঠশালায় যাই
ক্ষীণ কন্ঠে পড়াই:
'হে মোর চিত্ত পুণ্য তীর্থে জাগোরে ধীরে
এই ভারতের মহামানবের সাগর তীরে'
মনে মনে বলি :
যদিই ফোটে একদিন আমার এইসব সূর্যমুখীর
কলি!

ইতিহাস সবই লিখে রেখেছে । রাখবে-
কিন্তু এই তালেব মাস্টারের কথা কি লেখা
থাকবে?
আমি যেন সেই হতভাগ্য বাতিওয়ালা
আলো দিয়ে বেড়াই পথে পথে কিন্তু
নিজের জীবনই অন্ধকারমালা ।
মানিকবাবু ! অনেক বই পড়েছি আপনার
পদ্মানদীর মাঝির ব্যথায় আমিও কেঁদেছি
বহুবার।
খোদার কাছে মুনাজাত করি : তিনি
আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন
আমার অনুরোধ: আপনি আরও একটা বই লিখুন
আপনার সমস্ত দরদ দিয়ে তাকে তুলে ধরুন
আ-র, আমাকেই তার নায়ক করুন!
কোথাও রোমাঞ্চ নেই ! খাঁটি করুণ বাস্তবতা-
এবং এই বাংলাদেশের কথা।

বাংলা কবিতা আবৃত্তি | Bengali Poetry
Please click the link to subscribe to Kobita Concert: https://bit.ly/3nQMe4c

#kobita #poetry #recitation

Комментарии

Информация по комментариям в разработке