Скачать или смотреть দারুল উলুম দেওবন্দ | Darul Uloom Deoband India | دارالعلوم دیوبند انڈیا | Bi Tv24

দারুল উলূম দেওবন্দে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সময় হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর প্রদত্ত শর্তাবলি

১৩৪৫ হিজরি। দারুল উলুম দেওবন্দ কঠিন সঙ্কটের মুখোমুখী। পৃথিবীখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা কাশ্মিরী রহ. তখন দারুল উলুম দেওবন্দের শায়খুল হাদিসের পদ হতে ইস্তেফা দেন। তৎকালীন মুহতামিম হাফেজ আহমদ রহ. এবং শূরা-প্রধান হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী রহ. সহ সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। কাশ্মিরী রহ. এর স্থান তো পূরণ হওয়ার মতো নয়। কাশ্মিরী রহ. গুজরাটের ডাবেলে চলে যান। কাশ্মিরী রহ. এর স্থানে কাকে বসানো যায়, সবাই চিন্তিত; তখন হযরত থানবী রহ. শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর নাম প্রস্তাব করেন।

হযরত মাদানী রহ. তখন সিলেটে থাকতেন। দারুল উলূমে আসার দরখাস্ত তিনি বিবেচনা করার জন্য কিছু শর্ত দেন।

১. মাদরাসার প্রশাসন বা পরিচালনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না। অবশ্য একান্ত প্রয়োজনে ডাকা হলে সেটা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।

২. একাডেমিক ক্ষেত্রে সদর মুদাররিস (প্রধান শিক্ষক) হিসেবে আমার পেশকৃত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করা হবে। বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরসমূহের সংস্কারমূলক প্রস্তাব বাস্তবায়নে কোনো শৈথিল্য দেখানো হবে না।

৩. একাডেমিক ক্ষেত্রে আইন-কানুনের কঠোরতা পরিদৃষ্ট হলে পরিবর্তন ও পরিমার্জনের সুপারিশসমূহ সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করে কবুল করা হবে বলে আশা রাখি।

৪. দফতরে এহতেমামে অনুষ্ঠিত কোনো অধিবেশনে কিংবা সাধারণ জলসায় উপস্থিত হতে অক্ষম হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে না। বরং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হবে বলে আশা করি।

৫. অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আমাকে কোনো দলের পক্ষপাতী মনে না করে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ বলে গণ্য করা হবে বলে আশাবাদী।

৬. আমার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ শোনা গেলে তা সরাসরি আমার কাছে এর ব্যাখ্যা বা সাফাই চাইতে হবে। যতোক্ষণ আমার কোনো সাফাই না শুনবেন ততোক্ষণ আমার সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। আমার সম্পর্কে কোনো প্রকার মন্তব্য করা থেকেও বিরত থাকবেন।

৭. একাডেমিক প্রধান হিসেবে ছাত্রদের মাঝে সাধারণ জ্ঞানের উন্মেষ সাধনের লক্ষ্যে ইতিহাস, ভূগোল, সমাজ-বিজ্ঞানের বই এবং ধর্মীয় মাসিক/সাপ্তাহিক পত্রিকা পাঠের জন্য বিশেষ পাঠাগার চালুর সুপারিশ করছি। তা বাস্তবায়নে সহায়তা দিতে হবে।

৮. ছাত্রদের মাঝে বাক ও লেখনীশক্তি স্ফুরণের জন্য জন্য যদি আরবি/উর্দু ভাষায় সাপ্তাহিক বক্তৃতার প্রশিক্ষণ, বিতর্ক অনুষ্ঠান এবং মাসিক/পাক্ষিক দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করি; তাতে যদি পড়াশোনার কোনো ক্ষতি না হয়; তাহলে আমার এ পদক্ষেপে উৎসাহব্যঞ্জক সহায়তা প্রদান করতে হবে।

৯. অধ্যাপনার প্রয়োজনে আমার কাক্সিক্ষত সকল ভাষ্যগ্রন্থ সরবরাহে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১০. প্রতিদিন (প্রতি ঘণ্টা ৬০ মিনিটের) ২/৩ ঘণ্টার বেশি ক্লাস করাতে পারবো না। অবশিষ্ট সময় আমি আমার অন্যান্য কাজে ব্যয় করবো। তাতে আপত্তি করা যাবে না।

১১. যদি ৩ ঘণ্টা ক্লাসের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়; তাহলে সেটা সকালে কিংবা বিকালে একসঙ্গে হতে হবে।

১২. কোনো জায়গা থেকে যদি শিক্ষকতার জন্য ডাক আসে; তাহলে আপনারাই তাদেরকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিবেন যে, তাঁকে দারুল উলূমের প্রয়োজনে রাখা হয়েছে। সে অন্যত্র খেদমত করতে অক্ষম।

১৩. ঢাকা, বাংলা কিংবা আসামের কোথাও শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার ও উন্নতির জন্য যদি আমাকে দীর্ঘ এক/দুই মাস অবস্থান করতে হয়; তাহলে অনুমতি দিতে হবে। অবশ্য আমি চেষ্টা করবো, যাতে এতো বেশি সময় কোথাও অবস্থান করতে না হয়।

১৪. আল্লাহ না করুন, যদি নির্ধারিত ঘণ্টায় উপস্থিত হতে না পারি; তাহলে অনুপস্থিতির জন্য সময়ের হিসেব করে বেতন কেটে নিতে হবে। অন্যথায় প্রশাসন কর্তৃপক্ষ আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবেন। আমার পক্ষে অনুপস্থিতির সময় হিসাব রাখা সম্ভব নয়।

১৫. দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন কিংবা দেশ ও জাতির কল্যাণে আমি সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে তাতে কোনো আপত্তি বা বাধা প্রদান করা যাবে না।

১৬. প্রতি মাসে বিনা ছুটিতে এক সপ্তাহ রাজনৈতিক সভা কিংবা অন্যান্য কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণে আমার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে।

১৭. রজব, শাবান ও রমজানের পর শাওয়ালের যে তারিখ পর্যন্ত মাদরাসার ক্লাস বন্ধ থাকবে; সে সময় আমি মাদরাসায় অবস্থান না করে যে-কোনো স্থানে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারবো। এতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কোনো আপত্তি থাকবে না।

১৮. যেসব ব্যাপারে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সরকারে সহযোগিতা বা আনুগত্যের ভাব প্রদর্শন করবেন; সেসব ব্যাপারে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না।

১৯. চাঁদা সংগ্রহের জন্য আমাকে কোথাও পাঠানো যাবে না। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমার কাছে মাদরাসার নামে দান করে তাহলে মাদরাসায় পৌঁছা মাত্রই আমি তা দফতরে পৌঁছে দেবো। দফতরের পক্ষ থেকে প্রেরকের কাছে প্রাপ্তি রশিদ পাঠিয়ে দিতে হবে।

সবাই ভেবেছিল মুহতামিম সাহেব শর্তগুলো মেনে নিলেও শূরায় সেগুলো পাশ হবে না। এদিকে শূরা-প্রধান হযরত থানবী রহ. এর সাথে হযরত মাদানী রহ. এর রাজনৈতিক অমিল প্রসিদ্ধ। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল, হযরত থানবী রহ. সবগুলো শর্ত মেনে নেন।

হযরত মাদানী রহ. এর শর্তগুলো দেখুন। ছাত্রদের প্রতিভা বিকাশের জন্য নিয়োগের সময়ই গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো শর্ত দিয়েছেন। আজ হতে প্রায় শতবছর আগের কথা এটা। চিন্তা করা যায়! আমরা শতবছর পরও ছাত্রদের সার্বিক উন্নতির জন্য তাঁর মতো চিন্তা করতে পারি না। আফসোস!

[হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী : জীবন ও কর্ম বই হতে]©