বাচ্চার জেদ কমানোর কিছু টিপস
নিজের জেদ কার্যকরী করতে অনেক সময়য় বাচ্চা উগ্র স্বভাবের হয়ে ওঠে। অভিভাবক হিসেবে বাচ্চাকে কীভাবে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসা যাবে তারই কিছু টিপ্স রইল সকল অবিভাবকদের জন্য যা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে । আশাকরি মনোযোগ দিয়ে ভিডিওটি দেখবেন । আর এ ধরনের তথ্য মূলক ভিডিও পেতে আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকবেন ।
শপিং করতে গিয়ে অনেক সময়ে নজরে আসে মা-বাবার সঙ্গে আসা বাচ্চারা, কোনও কিছু কিনে দেওয়ার জন্য অথবা চিপ্স, কোল্ড ড্রিংক অথবা কোনও ফাস্ট ফুড খাওয়ার জন্য এতটাই জেদ করতে থাকে যে, তাদের মা-বাবাকে সমস্ত লোকের সামনে রীতিমতো লজ্জায় পড়তে হয়। জেদ মাঝেমধ্যে এমন পর্যায় পৌঁছোয় যে, বাচ্চা চ্যাঁচামেচি করতে করতেই জেদ বজায় রাখতে রাস্তাতে শুয়ে পড়তেও দ্বিধাবোধ করে না।
অনেক সময় খিদে পেলে অথবা ঘুম পুরো না হলেও বাচ্চা ঠিকমতো অসুবিধাটা বোঝাতে পারে না। চ্যাঁচামেচি করে বা জেদ দেখিয়ে অসুবিধাটা অন্য ভাবে প্রকাশ করতে চেষ্টা করে।
বাচ্চাদের অযথা এই ধরনের টেম্পারামেন্ট এবং ট্যানট্রাম অভিভাবকদের চিন্তা, বা ফ্রাস্ট্রেশনের কারণ হয়ে ওঠে। বাচ্চাদের জেদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া বড়োদের জন্য বেশিরভাগ সময়েই অস্বস্তির কারণ হয়ে রাগের বহিঃপ্রকাশ, জেদ প্রকাশ করার নানা উপায় বাচ্চা নিজে নিজেই বার করে। রাগ দেখিয়ে, কেঁদে, চ্যাঁচামেচি করে, জিনিসপত্র ছুড়ে, ভেঙে, মাটিতে শুয়ে পড়ে, এমনকী বড়োদের গায়ে হাত তুলেও নিজেদের জেদ মেনে নেওয়ার জন্য বড়োদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এই ক্ষেত্রে বাচ্চাদের বমি করতে দেখা যায়, নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখতে, এমনকী অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্তও আছে অনেক। এসবই,নিজের জেদ বজায় রাখার জন্যই বাচ্চারা করে থাকে।
সাধারণত ১ থেকে ৪-৫ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের মধ্যে ট্যানট্রামের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এই বয়সে বাচ্চাদের মধ্যে সোশ্যাল এবং ইমোশনাল স্কিল্স ডেভেলপ হওয়া শুরু হয়ে যায় অথচ নিজেদের ইমোশন এক্সপ্রেস করার মতো মাধ্যম ওদের কাছে তখনও অজানা থাকে। সেই সময় বড়োদের থেকে স্বাধীনতা কাম্য হলেও বাচ্চারা অভিভাবকদের ছত্রছায়া থেকে দূরে যেতেও ভয় পায়। এই অবস্থায় বাচ্চারা চায়, বড়োরা ওদের কথা শুনে চলুক, ওদের হ্যাঁ তে হ্যাঁ বলুক যাতে তারা নিজেদের ইচ্ছে বড়োদের উপর সহজে চাপিয়ে দিতে পারে। দাঁড়ায়।আর এসব সামাল দিতে গিয়ে আমরাও অনেক সময় ভীষণ রেগে যাই বা ক্ষিপ্ত হয়ে যাই , দিশা হারিয়ে ফেলি । আসলে কি করা উচিৎ , কিভাবে কি করলে আমার বাচ্চার জেদ কমান যাবে তা ভেবে আমরাও কুল হারিয়ে ফেলি ।
বাচ্চাদের জেদ করার প্রধান কারণ সমুহ
টেম্পারামেন্ট – যে-বাচ্চারা খুব সামান্য কারণে আপসেট হয়ে পড়ে তাদেরই জেদ বেশি দেখানোর প্রবণতা থাকে।
স্ট্রেস – একাকিত্ব, খিদে, ক্লান্তি ইত্যাদি ইমোশন বাচ্চারা ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারে না। ফলে জেদ দেখিয়ে ওই অভাবটা পূরণ করে নেওয়ার চেষ্টা করে।
স্ট্রং ইমোশনস – ভয়, চিন্তা, রাগ, শক ইত্যাদি। জেদ করাটা বাচ্চাদের বিকাশ প্রক্রিয়ার একটা স্বাভাবিক অংশ। এটা কিছুতেই অ্যাভয়েড করা সম্ভব নয়। কিন্তু চেষ্টা করলে বাচ্চার জেদ অবশ্যই কম করা যেতে পারে।
বাচ্চার এই সমস্যা দূর করার কয়েকটি উপায়
বাচ্চার প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করুন – কখনও কখনও বাচ্চা যখন জেদবশত ট্যানট্রাম দেখাতে থাকে তখন কিছু না বলে বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকে টেনে নিন এতে বাচ্চা নিজেকে সুরক্ষিত মনে করবে। আপনার ভালোবাসা পেলে ও বুঝতে পারবে আপনি বাচ্চার ভালো-মন্দ বিষয়ে কেয়ার করেন। ক্লান্তি এবং খিদে সাধারণত বাচ্চার জেদ বাড়ায়। তাই সব সময় খেয়াল রাখা দরকার বাচ্চা যেন অভুক্ত না থাকে এবং ঠিকমতো যেন তার ঘুম হয়।
বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখুন – বাচ্চা যদি একাকিত্ব অনুভব করে বা বোর ফিল করে, তাহলে নিজের বিরক্তি এবং খিটখিটে মেজাজ কোনও ভাবে বাইরে প্রকাশ করবেই এবং কোনও কারণ ছাড়াই কান্নাকাটি, চ্যাঁচামেচি করে সকলকে নাজেহাল করে ছাড়বে। তাই বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখুন। নানারকম মজাদার অ্যাক্টিভিটি করার সুযোগ করে দিন আপনার বাচ্চাকে, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করার সুযোগ করে দিন।
দীর্ঘ শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে বলুন – বাচ্চা জেদ দেখানো শুরু করলে সঙ্গে সঙ্গে ওর সঙ্গে একটি ব্যায়াম করা শুরু করুন। আপনার পাশে বসিয়ে ওকে দীর্ঘ শ্বাস নিতে বলুন। এতে ইমোশনাল রিয়্যাকশনের প্রভাব অনেকটাই কমে যায়। বাচ্চা যদি এই ব্যায়াম করতে অস্বীকার করে তাহলে আপনি নিজেই এটা ট্রাই করে দেখুন।
শাস্তি দেবেন না – বড়োরা সবথেকে বড়ো ভুল করেন, বাচ্চা জেদ দেখালে তাকে শাস্তি দিয়ে। এতে বরং বাচ্চা আরও বেশি জেদি হয়ে পড়ে। অভিভাবকেরা এই ক্ষেত্রে ভেবে নেন, তাদের বাচ্চার মধ্যেই কোনও অসঙ্গতি রয়েছে যার জন্য বাচ্চা জেদী হয়ে যাচ্ছে অথবা মনে করেন নিজেরাই বাচ্চার ঠিকমতো প্রতিপালনে অক্ষম এবং সেই কারণেই বাচ্চার স্বভাব বিগড়ে যাচ্ছে।
শান্ত করার চেষ্টা করবেন না – বাচ্চা যখন জেদ করতে থাকে, তাকে সম্পূর্ণ ইগনোর করা উচিত যতক্ষণ না সে নিজের কোনও ক্ষতি করবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাচ্চাকে ছেড়ে ঘর থেকে বাইরেও বেরিয়ে আসতে পারেন। যদি বাচ্চা রাগের মাথায় কাউকে মারা (গায়ে হাত তোলা) কামড়ানো, লাথি মারা ইত্যাদি করতে থাকে বা জিনিসপত্র ছুড়ে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে– তাহলে বাচ্চাকে তৎক্ষণাৎ ওই জায়গা থেকে অন্যত্র সরিয়ে দিন। বাচ্চাকে বুঝতে দিন ওর এই অত্যাচার করা বা জিনিস ছুড়ে ভেঙে ফেলার মতো ব্যবহার কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। যতটা সম্ভব হয় ততক্ষণ পর্যন্ত নিজের কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। এতে বাচ্চাটি বুঝতে পারবে এই ধরনের জেদ দেখিয়ে ও কারও মন জয় করতে পারবে না, কেউ ওকে সমর্থন করবে না।
তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চাকে কখনও কখনও নিজের রাগ বাইরে প্রকাশ করতে দেওয়া উচিত। এর ফলে ভিতরের ফিলিংস বাইরে বেরিয়ে এসে বাচ্চাকে অবসাদমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
সর্বপরি কথা হল আপনার বাচ্চাকে আপনার চেয়ে ভাল কেউ বুঝবেনা , সুতারাং আপনার বাচ্চাকে বোঝার চেষ্টা করণ এবং আপনার ইনভেটিভ চিন্তা দিয়ে বাচ্চাকে বোঝান তা হলেই দেখবেন সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ।
Информация по комментариям в разработке