#সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) উপমহাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একাধারে ‘রুহবানুল লাইল ওয়া ফুরসানুন নাহার’-রাতের তাপস আর দিনের ঘোড় সওয়ার (মুজাহিদ)। তিনি জীবনের মূল্যবান সময়কে দীন ইসলামের জন্য কুরবান করে গেছেন। উপমহাদেশে ইলমে নববী তথা ইলমে দীনের সার্থক উত্তরাধিকার ও যথাযথ প্রচারক শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.)-এর সুযোগ্য ছাহেবজাদা ও খলীফা হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.)-এর স্নেহধন্য শাগরিদ ও খলীফা হিসেবে তিনি যে সংস্কার ও বিপ্লব সাধন করে গেছেন এর কোনো তুলনা হয় না। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর জীবনেতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। তিনি বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের ফলে তৎকালীন বৃটিশ শাসক গোষ্ঠীর রোষানলে পতিত হন। শাসকগোষ্ঠীর মদদপুষ্ট লেখক ও ঐতিহাসিকরা তাঁর প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপন করে। ফলে তিনি বিকৃত ও ভুল ইতিহাসের শিকার হন। সে বিকৃত ইতিহাসের সূত্র ধরে আজো অপপ্রচার চলছে। অবশ্য, সাযি়্যদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে অনেক লেখক ও গবেষক ইতোমধ্যে কলম ধরেছেন। সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.)-এর আন্দোলন সামগ্রিক বিবেচনায় যে একটি সংস্কার আন্দোলন ছিল তাও তাঁরা প্রমাণ করেছেন। সায়্যিদ আহমদ বেরলভী (র.)-এর তরীকতের অধস্তন সিলসিলার কার্যধারা থেকেও তাঁর আন্দোলনের সত্যতা ও শ্রেষ্ঠত্ব সুপ্রমাণিত। ভারত উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশে জৌনপুর, ফুরফুরা, ফুলতলী, ছারছীনা, নারিন্দা, মৌকরাসহ যত হক সিলসিলা রযে়ছে সকলেরই পূর্বসূরী হলেন হযরত সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.)। হযরত সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) ছিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি ছিলেন একটি তরীকার প্রতিষ্ঠাতা, একজন মুরশিদে কামিল। তাঁর ব্যক্তিত্ব, স্বভাব-চরিত্র, দাওয়াত ও তাবলীগ সমকালে যেমন অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করেছিল তেমনি এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব আজো বিদ্যমান। তাঁর চারিত্রিকি বৈশিষ্ট্য ও দ্বীনী দাওয়াতের প্রভাব কেমন ছিল এর সম্যক ধারণা লাভ করা যায় আবুল হাসান আলী নদভী’র ‘তারীখে দাওয়াত ও আযীমত’ (সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস) গ্রন্থ থেকে। তিনি লিখেছেন : “শাহ সাহেব (শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী র.) এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা এমন কতিপয় উচ্চ যোগ্যতা, সাহসিকতা ও বিস্ময়কর ইচ্ছাশক্তির অধিকারী আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের পৃষ্ঠপোষকতার কাজ নিযে়ছেন যারা হাজার হাজার মানুষের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সৃষ্টি করে দিযে়ছেন এবং এক পূর্ণ শতক সামলে রেখেছেন। … এই দাবীর সত্যতার জন্য কেবল তার একান্ত খলীফা সায়্যিদ আহমদ শহীদ (র) (১২০১-১২৪৬ হি.)-এর নাম নেওয়াই যথেষ্ট। যিনি এই উপমহাদেশে এই মহান ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যার স্বয়ংসম্পূর্ণতা, প্রভাব শক্তি এবং ইসলামের সুমহান দাওয়াত, নববী আদর্শের নৈকট্য ও সাদৃশ্যতা না কেবল এই তের হিজরী শতকে দৃষ্টিগোচর হয় বরং বিগত কযে়ক শতকেও এ ধরনের ঈমানী চেতনা সৃষ্টিকারী আন্দোলন এবং নেককার বুযুর্গদের এমন সুবিন্যস্ত ও সুশৃঙ্খল জামাতের কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না। তিনি আকাইদ ও আমলের সংশোধন, মানুষের তরবিয়ত, ওয়াজ-নসীহত, তাবলীগে দীন, জিহাদ ও নির্ভীকতার বিশাল বি¯তৃত রণাঙ্গণে যেভাবে কর্মতৎপর ছিলেন, এর প্রভাব কেবল তার কর্মময় স্থান ও তার সমসামযি়ক বংশধর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং তা ভবিষ্যত প্রজন্ম, তৎপরবর্তীকালে আগত আহলে হক, দীনের দাঈ, ঝা-াবাহী ও খাদেমদের উপর গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে। ক্রমবর্ধমান ইংরেজ শক্তির মোকাবেলায় ভারতবর্ষ ও তার প্রতিবেশি মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর হেফাজত, খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা-স
ংগ্রামের সূচনাও তিনিই করেছেন। … এই আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া শিক্ষা-সাহিত্য, ইসলামী চিন্তাধারা, ভাষা ও বাচনভঙ্গি বর্ণনায়ও পডে়ছিল। এ আন্দোলন সমাজ সংস্কার, জাহেলী রীতিনীতির ভ্রান্ততা প্রমাণ, হিন্দু ধর্মের প্রভাব দূরীভূত করা এবং সঠিক ইসলামী জীবনের প্রতি প্রত্যাবর্তনের মহান কাজ আঞ্জাম দিযে়ছে। (শাহ আবদুল হালীম হুসাইনী অনূদিত, সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২৫৭-২৫৮)
আবুল হাসান আলী নদভী তার পূর্বোক্ত গ্রন্থে সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র) এর দাওয়াত ও তরবিয়তের প্রভাবের ব্যাপকতা, শক্তি, গভীরতা ও কার্যকারিতা প্রসঙ্গে বিভিন্ন লেখক ও চিন্তাবিদের রচনাবলি থেকে কিছু উদ্ধৃতিও পেশ করেন। তিনি লিখেন- “ভারতবর্ষের বিখ্যাত লেখক ও ঐতিহাসিক নবাব সিদ্দীক হাসান খান, গভর্নর, ভূপাল (মৃত্যু ১৩০৭ হি.), যিনি সাইযি়দ (র)-এর শিক্ষা-দীক্ষার প্রভাব স্বয়ং প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং তাকে প্রত্যক্ষকারীদের এক বিরাট দলের যুগ পেযে়ছিলেন, তিনি ‘তিকসারু যুয়ূদিল আহরার’ গ্রন্থে লিখেন, ‘সৃষ্টিজীবের পথ প্রদর্শন এবং আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনা ও প্রত্যার্পণে তিনি ছিলেন আল্লাহর একটি নিদর্শন। এক বিরাট মানবগোষ্ঠী ও এক পৃথিবী তার আত্মিক ও শারীরিক তাওয়াজ্জুহে বেলায়েতের মর্যাদায় পৌঁছে গেছে। তার খলীফাগণ ওয়াজ-নসীহতের মাধ্যমে ভারতের মাটিকে শিরক-বিদ’আত ও কুসংস্কারের খড়কুটো থেকে পবিত্র করে দিয়েছে, কুরআন-সুন্নাহর বিশ্বরোডে এনে দাঁড় করিযে়ছে। আজও তাদের ওয়াজ-নসীহতের বরকত যথারীতি চালু আছে।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘মোটকথা এ যুগে পৃথিবীর কোনও রাষ্ট্রে এমন সুযোগ্য ব্যক্তিত্বের কথা শোনা যায়নি। যে ফয়েয-বরকত এই হকপন্থী দলের মাধ্যমে সৃষ্টিজীবের হযে়ছে, তার দশ ভাগের একভাগও এ যুগের উলামা মাশাযি়খের দ্বারা হয়নি।” (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-২৫৮)
হযরত শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী (র)-এর শাগরিদ মাওলানা হায়দার আলী রামপুরী টোঙ্কী (মৃত্যু ১২৭৩ হি.) ‘সিয়ানাতুন নাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘তার হেদায়াতের নূর সূর্যের মত পূর্ণ ক্ষিপ্রতার সাথে বিভিন্ন শহর-নগর ও মানুষের অন্তরে উদ্ভাসি। • সৈয়দ আহমেদ বেরলভী (রহঃ) শানে মিথ্যা অ...
Информация по комментариям в разработке