Скачать или смотреть ঋকবেদের পরিচয় পর্ব ৪

ঋকবেদের পরিচয়-পর্ব-৪ অষ্টোত্তর শত উপনিষদের সংকলক পণ্ডিত বাসুদেব শর্মা বলেনঃ উপ অর্থে গুরুর উপদেশ হতে লম্ব; নি অর্থে' নিশ্চিত জ্ঞান; সং অর্থে জন্মমৃত্যুর বন্ধনকে খন্ডন করে। সুতরাং অর্থ দাঁড়ায় গুরুর নিকট হতে লম্ব যে নিশ্চিত জ্ঞান জন্মমৃত্যুর বন্ধন খণ্ডন করে তাই হল উপনিষদ। মনে হয় উপনিষদের একটি সহজ ব্যুৎপত্তিগত অর্থ পাওয়া যায়। অপরদিকে উপরের ব্যাখ্যাগুলির বিপক্ষে কিছু তথ্যও পাওয়া যায়। উপনিষদের আলোচনা গুরুশিষ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত না। বৃহদারণ্যক উপনিষদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়ে আমরা দেখি ব্রহ্মতত্ত্বের আলোচনা প্রকাশ্য সভায় অনুষ্ঠিত হত। কাজেই জয়সন ও ম্যাক্সমুলারের উক্তি সম্পূর্ণভাবে সমর্থিত হয় না। বাসুদেব শর্মা মুক্তির উপায় হিসাবে উপনিষদের ব্যবহার করেছেন এবং সেই অর্থ তার মধ্যে আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু উপনিষদের যুগে মুস্তির স্পৃহা মানুষের মধ্যে বলবতী হয় নি। সেটা ঘটেছিল পরবর্তীকালে বড় দর্শনের যুগে। কর্মফল ও পরজন্মবাদ বন্ধমূল সংস্কারে রূপান্তরিত হবার পরেই মুস্তির চিন্তা ভারতীয়দের মনে উদয় হয়। উপনিষদের যুগে জন্মান্তরবাদ ঠিক গড়ে ওঠে নি। এ বিষয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলেছে মাত্র। কাজেই তখন মুক্তি-স্পৃহা জানবার সময় আসে নি। বিশ্ব হতে পলায়ন করবার মনোভাব তখনও মানুষের মনে জাগেনি। জীবনকে আনন্দময় মনে করা হত। বিশ্বকে বলা হত 'আনন্দর পম- মৃতং যদ্বিভাতি'। সূতরাং এই মানসিক পরিবেশে মুক্তিচিন্তা মানুষের মনে আসে না। কাজেই মনে হয় বাসুদেব শর্মার ব্যাখ্যা কম্পিত এবং গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং উপনিষদের সহজ সরল ব্যুৎপত্তিগত অর্থ গ্রহণ করাই যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। উপনিষদ অর্থে বুঝি যা এক প্রান্তে অবস্থিত। বেদের একপ্রান্তে বসে আছে বলেই তা উপনিষদ। তাকে বেদান্তের সমার্থবোধক শব্দ হিসাবে ব্যবহার করতে পারি। বেদান্তেরও অর্থ বেদের শেষে যা আছে তাই। শব্দটি শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে ব্যবহৃত হয়েছে। আমরা এখনি বলেছিলাম যে উপনিষদগুলি বেদের আশ্রিত হয়ে গড়ে উঠেছে। কিন্তু পরবর্তীকালে পরিস্থিতির আনুকূল্যে অন্য সূত্রেও অনেক উপনিষদ রচিত হয়েছে। তারা বেদের অঙ্গীভূত নয়। এমন ঘটার একটা কারণ ছিল। প্রাচীনকালে উপনিষদের মর্যাদা এমন বৃদ্ধি পেয়েছিল যে পরবর্তীকালে বিভিন্ন দার্শনিক তত্ত্ব উপনিষদ নামে প্রচারিত হয়েছিল। সম্ভবত নামের আভিজাত্যের গুণে তাদের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবার ইচ্ছা এই রীতির পেছনে সক্রিয় ছিল। মুক্তিক উপনিষদে ১০৮ খানি উপনিষদের উল্লেখ আছে। নির্ণয় সাগর প্রেস হতে বাসুদেব লক্ষণ শাস্ত্রী উপনিষদের যে সংকলন গ্রন্থ বার করেছিলেন তাতে ১১২টি উপনিষদ স্থান পেয়েছে। তার যে সাম্প্রতিক সংস্করণ বেরিয়েছে তাতে ১২০ খানি উপনিষদ প্রকাশিত। এদের বেশীর ভাগই বেদের যুগে রচিত নয়, পরবর্তীকালে রচিত হয়েছিল। এখন আমাদের প্রকৃত বৈদিক যুগের উপনিষদ হতে পরবর্তীকালে রচিত উপনিষদগুলি পথেক করে নেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সৌভাগ্যক্রমে এ বিষয়ে আমাদের সাহায্য করতে পারে এমন দুটি অনুকূল অবস্থা পাওয়া যায়। প্রথমত দেখি ভারতীয় দার্শনিক চিন্তার রূপ বিভিন্নকালে পরিবর্তিত হয়েছে। বেদের কর্মকাণ্ডে যে চিন্তা পাই উপনিষদে তা পাই না। ষড় দর্শনের যুগে আবার চিন্তার গ্রুপ পরিবর্তিত হয়েছে।