সূরা মরিয়ম (Surah Maryam) – কুরআনের ১৯তম সূরা, যেখানে আলোচিত হয়েছে মরিয়ম (আ.)-এর পবিত্রতা, ঈসা (আ.)-এর অলৌকিক জন্ম, নবী যাকারিয়া (আ.)-এর দোয়া ও আল্লাহর রহমতের বিস্ময়কর ঘটনা।
সূরাটিকে আল্লাহ এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যেখানে একটি নারী চরিত্র – মরিয়ম (আঃ)-এর নামেই পুরো সূরাটি নামকরণ করা হয়েছে। এটি কুরআনের একমাত্র সূরা, যা একজন নারীর নামে নামকরণ করা হয়েছে। এই দিক থেকে সূরা মারইয়াম নারী সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়।
সূরাটির পরিচয়
নাম: সূরা মারইয়াম (Maryam)
ক্রম: ১৯তম সূরা
আয়াত সংখ্যা: ৯৮টি
অবতীর্ণ স্থান: মক্কা
মূল বিষয়: নবীদের কাহিনী, মরিয়ম ও ঈসা (আঃ)-এর জন্ম, আল্লাহর করুণা ও প্রতিশ্রুতি
সূরা মারইয়াম-এর সারাংশ
সূরাটি মূলত কয়েকটি অধ্যায়ে ভাগ করে বোঝা যায়:
১. নবী জাকারিয়া (আঃ) ও নবজাতক ইয়াহইয়া (আঃ)
সূরার শুরুতেই নবী জাকারিয়া (আঃ)-এর দোয়া ও সন্তান লাভের অলৌকিক ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এক নবী যখন সন্তান লাভের জন্য আল্লাহর কাছে কাতর মিনতি করেন, আল্লাহ তাঁকে নবী ইয়াহইয়া (আঃ)-কে দান করেন। এটি আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা থাকলে অসম্ভবও সম্ভব হয়।
২. মরিয়ম (আঃ)-এর নিঃসন্তান গর্ভধারণ ও ঈসা (আঃ)-এর জন্ম
মরিয়ম (আঃ)-এর জীবনের অন্যতম অসাধারণ অধ্যায় এই সূরায় বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। একা এক নারী, যিনি কোনো পুরুষের সংস্পর্শে না গিয়েও আল্লাহর আদেশে ঈসা (আঃ)-কে গর্ভে ধারণ করেন। এটি ইসলামী বিশ্বাসের অন্যতম অলৌকিক ঘটনা, যা কুরআনে অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে
৩. ঈসা (আঃ)-এর শিশু অবস্থায় কথা বলা
মরিয়ম (আঃ) যখন ঈসা (আঃ)-কে কোলে করে তার সম্প্রদায়ের সামনে হাজির হন, তখন লোকেরা অপবাদ দিতে থাকে। সেই সময়েই শিশু ঈসা (আঃ) অলৌকিকভাবে কথা বলে, নিজের নবুয়তের ঘোষণা দেন, মায়ের পবিত্রতা প্রতিষ্ঠিত করেন। এই ঘটনা আমাদের বোঝায় – সত্য কখনো চাপা থাকে না, আল্লাহ নিজেই তার প্রমাণ দেন।
৪. ইব্রাহিম (আঃ), মূসা (আঃ), ইসমাঈল (আঃ) ও অন্যান্য নবীদের স্মরণ
সূরাটিতে এরপর বেশ কিছু নবীর কাহিনী সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে ইব্রাহিম (আঃ)-এর বর্ণনা। তাঁর তাওহিদের প্রতি একনিষ্ঠতা, নিজের পিতাকে দ্বীনের দিকে আহ্বান করার দৃঢ়তা ও ধৈর্য একটি বড় শিক্ষা।
৫. কিয়ামতের ভয়াবহতা ও পাপীদের শাস্তি
সূরার শেষ অংশে কিয়ামতের ভয়াবহতা, অবিশ্বাসীদের জন্য শাস্তি এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও দয়াকে গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ অংশ হৃদয়কে নাড়া দেয় এবং ঈমানকে জাগ্রত করে।
গর্ভাবস্থায় সূরা মরিয়ম শুনুন | মানসিক শান্তি ও আল্লাহর রহমত লাভের জন্য কুরআনিক উপহার 🌸
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীর ও মন—দুটোই থাকে স্পর্শকাতর। এই সময় আল্লাহর কিতাব কুরআন শোনা মায়ের মনে শান্তি এনে দেয় এবং সন্তানের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এই ভিডিওতে রয়েছে সূরা মরিয়ম-এর সুন্দর তেলাওয়াত, যা গর্ভবতী মা ও অনাগত সন্তানের জন্য হতে পারে আল্লাহর বিশেষ রহমত।
অনেক ইসলামি পণ্ডিত ও আলেমদের মতে, গর্ভাবস্থায় সূরা মারইয়াম নিয়মিত শ্রবণ ও পাঠ করলে নিচের উপকার পাওয়া যায়:
গর্ভবতী নারীর মন শান্ত থাকে
সন্তান শান্ত, ধৈর্যশীল ও ভালো চরিত্রের হয় ইনশাআল্লাহ
সন্তান ও মায়ের সম্পর্ক শক্তিশালী হয়
গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমে
এটি আল্লাহর উপর বিশ্বাস বাড়ায়
বিশেষ করে যারা সন্তান জন্ম নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন, তাদের জন্য এটি একটি হৃদয় জাগ্রতকারী সূরা।
আজকের সমাজে সূরা মারইয়াম এর প্রাসঙ্গিকতা
বর্তমান সময়ে মানুষ প্রযুক্তি ও ভোগবাদে এতটাই ডুবে আছে যে, আত্মার শুদ্ধি ও চরিত্র গঠনের কথা ভুলে যাচ্ছে।
সূরা মারইয়াম সেই আত্মিক জাগরণের ডাক দেয়:
নারী ও মাতৃত্বের সম্মান
আল্লাহর উপর বিশ্বাস
সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ধৈর্য
র্সত্য প্রতিষ্ঠার দৃঢ়তা
আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি
এই ভিডিওতে আপনি শুনবেন বা জানতে পারবেন:
মরিয়ম (আ.)-এর জীবন কাহিনী
ঈসা (আ.)-এর পিতা ছাড়াই জন্মগ্রহণ
ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলের মহান শিক্ষা
নারীত্ব ও পবিত্রতার ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি
বিচার দিবসের সতর্কতা
🕌 প্রতিটি আয়াতে রয়েছে অন্তরের গভীরে স্পর্শ করার মত বার্তা।
📌 ভিডিওতে কী আছে:
✔️ আরবি তেলাওয়াত
✔️ বাংলা অনুবাদ
✔️ হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ব্যাখ্যা
সূরা মারইয়াম নিয়মিত শুনলে যা পাওয়া যায়:
আল্লাহর রহমত ও বরকত
অন্তরে শান্তি ও সুকুন
জীবনের পরীক্ষায় ধৈর্যের শক্তি
সূরা মারইয়াম-এর শিক্ষা ও বার্তা
১. নারীর মর্যাদা ও মরিয়ম (আঃ)-এর চরিত্র
মরিয়ম (আঃ) ছিলেন এক পরিশুদ্ধ নারী। আল্লাহ তাঁকে বিশেষভাবে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর ধৈর্য, ঈমান ও নির্জনতায় আল্লাহর ইবাদতের প্রতি নিষ্ঠা, সকল নারী ও পুরুষের জন্য উদাহরণ।
শিক্ষা: পবিত্রতা ও তাকওয়ার মাধ্যমে নারীরা ইসলামি সমাজে কতটা মর্যাদাবান হতে পারে তা এই সূরা দেখায়।
২. আল্লাহর প্রতি আস্থা
জাকারিয়া (আঃ) বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান লাভের জন্য দোয়া করেছিলেন, মরিয়ম (আঃ) সমস্ত সমাজের কটুক্তির মুখে একা ছিলেন। কিন্তু তাঁরা আল্লাহর উপর নির্ভর করেই সফল হয়েছেন।
শিক্ষা: আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন, তখন অসম্ভবকেও সম্ভব করে তোলেন।
৩. মাতৃত্ব ও সন্তানের দায়িত্ব
মরিয়ম (আঃ)-এর মাতৃত্ব, তার কষ্ট, সমাজের চাপ, ঈসা (আঃ)-এর প্রতিরক্ষা – সবকিছু মাতৃত্বের পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবি।
শিক্ষা: গর্ভাবস্থায় এই সূরা পাঠ ও শ্রবণ একটি মানসিক প্রশান্তি ও বিশ্বাস জাগায়।
৪. সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও আল্লাহর ন্যায়বিচার
মানুষ কিভাবে গুজব ও অপবাদ ছড়ায়, আর আল্লাহ কিভাবে সত্যকে প্রকাশ করেন – তার বাস্তব উদাহরণ এই সূরায় পাওয়া যায়।
শিক্ষা: সত্য একসময় প্রকাশ পায়; আল্লাহ তাঁর বান্দাকে নিরাশ করেন না।
৫. কিয়ামত ও আখিরাতের গুরুত্ব
আখিরাতের ভয়াবহতা, পাপীদের শাস্তি ও মুমিনদের পুরস্কারের কথা এই সূরায় স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
শিক্ষা: এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী; প্রস্তুতি নিতে হবে আখিরাতের জন্য।
Информация по комментариям в разработке