কবরে নাকীর-মুনকার ফেরেশতা দু’জনের প্রশ্নকে কবরের ফিতনা বলা হয়। ফেরেশতা দু’জনের প্রশ্নের মাধ্যমে কবরস্থ মৃত ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা হবে। কবরের এ ফিতনার ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির হাদীছ রয়েছে। তার মধ্যে বারা ইবনে আযিব, আনাস ইবনে মালেক, আবু হুরায়রা এবং অন্যান্য সাহাবীর হাদীছ অন্যতম। আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর সন্তুষ্ট হোন। আমীন।
** পাগল ও শিশুদেরকে কবরে প্রশ্ন করা হবে কি না?
কবরের ফিতনা বা প্রশ্ন সকল প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকেই করা হবে। তবে নবীদেরকে কবরে প্রশ্ন করা হয় কি না, এ ব্যাপারে আলেমদের মতভেদ রয়েছে। এমনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু এবং পাগলদেরকে প্রশ্ন করার ব্যাপারেও আলেমদের মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না। কেননা প্রশ্ন তো করা হবে ঐসব লোকদেরকে যারা শরী‘আতের সম্বোধন বুঝে। অন্যরা বলেছেন যে, তাদেরকেও প্রশ্ন করা হবে।
যারা বলেছে যে, পাগল ও শিশু বাচ্চাদেরকেও প্রশ্ন করা হবে, তাদের দলীল হলো তাদেরও জানাযার সালাত পড়া হয়, তাদের জন্য দু‘আ করা হয় এবং আল্লাহ তা‘আলার কাছে এ প্রার্থনাও করা হয় যে, তিনি যেন তাদেরকে কবরের আযাব ও ফিতনা থেকে বাঁচান।
ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ স্বীয় মুআত্তায় আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একদা তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে একটি শিশুর জানাযা সালাত পড়েছেন। তিনি সেদিন তাকে এ দু‘আ করতে শুনেছেন,
«اللَّهُمَّ أَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ»
হে আল্লাহ তুমি তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।
তারা আরো বলেন যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বারযাখী জীবনে পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধি দান করবেন। এতে করে তারা তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবে। অতঃপর তাদেরকে যে বিষয়ে কবরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তার জবাব সম্পর্কেও অবগত করা হবে। শিশু ও পাগলদেরকে আখিরাতে পরীক্ষা করার ব্যাপারে অনেক হাদীছ রয়েছে। সুতরাং তাদের আখিরাতে যেহেতু পরীক্ষা করা হবে, তাই কবরের ফিতনায় তারা আক্রান্ত হতে কোনো মানা নেই।
*** কবরের প্রশ্ন কি মুসলিম, মুনাফেক, কাফের সকলের জন্য? না কি এটি শুধু মুসলিম ও মুনাফেকের জন্য?
কেউ কেউ বলেছেন কবরের প্রশ্ন মুসলিম ও মুনাফেকের জন্য। নাস্তিক, কাফের ও বাতিল পন্থীদের জন্য নয়। কেউ কেউ বলেছেন, তা সমস্ত কাফের ও মুসলিমের জন্য। কুরআন ও সুন্নাহ এ কথারই প্রমাণ বহন করে। কাফেরকে কবরের প্রশ্নের আওতামুক্ত রাখার কোনো দলীল নেই।
‘‘মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীগণ দাফনের কাজ শেষ করে যখন সেখান থেকে চলে যায় তখন মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আগমন করেন এবং তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? মুমিন ব্যক্তি বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তার রসূল। তখন তাকে বলা হয় তুমি তোমার জাহান্নামের ঠিকানা দেখো। আল্লাহ তা‘আলা তা পরিবর্তন করে জান্নাতে তোমার ঠিকানা নির্ধারণ করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় স্থানকেই দেখতে পায়।
আর মৃত ব্যক্তি যদি কাফের বা মুনাফেক হয়ে থাকে তাহলে তাকেও ফেরেশতাদ্বয় জিজ্ঞাসা করবেন, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? সে উত্তর দিবে আমি কিছুই জানি না। মানুষেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। অতঃপর তাকে বলা হবে, তুমি জান নাই এবং শিখো নাই। অতঃপর লোহার একটি মুগুর দিয়ে তার উভয় কানের মাঝখানে এমন জোরে আঘাত করা হয়, যাতে সে ভয়ানকভাবে চিৎকার করতে থাকে। জিন এবং মানুষ ব্যতীত পৃথিবীর অন্যান্য সকল বস্তুই সে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পায়’’।
আবু হাতিমের সহীহ গ্রন্থে অন্য একটি হাদীছে এসেছে, নীল চোখ বিশিষ্ট দু’জন কালো আকৃতির ফেরেশতা আগমন করে। তাদের একজনের নাম নাকীর এবং অন্যজনের নাম মুনকার।
আর কাফেরের ব্যাপারে কথা হলো, ফেরেশতা যখন তার মাথার নিকট থেকে আসবে, তখন কোনো প্রতিবন্ধকতা পাবেনা, ডান দিক থেকে আসলেও কোনো বাধা থাকবে না, বাম দিক থেকে আসলেও না এবং তার দুই পায়ের দিক থেকে আসলেও কোনো বাধা থাকবে না। অতঃপর বলা হবে, বসো। সে তখন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে বসবে। অতঃপর বলা হবে যেই ব্যক্তিকে তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছিল, তার ব্যাপারে তুমি কী বলতে? কাফের তখন বলে, কোন্ ব্যক্তি? ফেরেশতা বলবে, যিনি তোমাদের মধ্যে ছিলেন। সে তার নাম বলতে পারবেনা। অতঃপর তাকে বলা হবে, তিনি তো ছিলেন মুহাম্মাদ। কাফের তখন বলবে, জানিনা, লোকদেরকে কিছু একটা বলতে শুনেছি। আমিও মানুষের মত বলেছি। অতঃপর তাকে বলা হবে, এ অবস্থাতেই তুমি জীবিত ছিলে, এ অবস্থাতেই তুমি মৃত্যু বরণ করেছো এবং এর উপরই তোমাকে পুনরুত্থিত করা হবে, ইনশা-আল্লাহ।
অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের একটি দরজা খোলা হবে। বলা হবে, এটি তোমার ঠিকানা এবং এ শাস্তিগুলো আল্লাহ তোমার জন্য তাতে প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। এতে তার দুঃখ-দুর্দশা আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর জান্নাতের একটি দরজা খুলে দেয়া হবে এবং তাতে যেসব নিয়ামত প্রস্তত করা হয়েছে, তা দেখিয়ে তাকে বলা হবে, তুমি যদি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করতে তাহলে এ হতো তোমার ঠিকানা। এতে তার দুঃখ-কষ্ট ও দুর্দশা আরো বেড়ে যাবে। অতঃপর তার কবরকে এমন সংকীর্ণ করে দেয়া হবে যে, কবরের চাপে তার এক পার্শ্বের পাজরের হাড্ডী অন্যপার্শ্বের পাজরের হাড্ডীর মধ্যে ঢুকে যাবে। এটিই হবে তার সংকীর্ণ জীবন
Информация по комментариям в разработке