গবেষণা সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর মেঘনা উপকূলীয় একটি জনপদ। চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত গ্রাম এ অঞ্চল কে সম্মৃদ্ধ করেছে। মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের কুল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ জনপদ, নারিকেল, সুপারি, ইলিশ এবং সয়াবিনের জন্য, পুরো দেশে বিখ্যাত।
লক্ষ্মীপুর জেলার নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মত প্রচলিত রয়েছে।
হিন্দু ধর্মানুসারে লক্ষ্মী অর্থ হল, ধন-সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী, আর পুর অর্থ হল নগর। এ হিসাবে লক্ষ্মীপুর এর সাধারণ অর্থ দাঁড়ায়, সম্পদ সমৃদ্ধ শহর বা সৌভাগ্যের নগরী।
লক্ষ্মীপুরের প্রাচীন নাম লক্ষ্মদহ। দহ শব্দের অর্থ হল বদ্ধ জলাশয় বা বিশাল পুকুর। এখানে একটি বিশাল আকৃতির বদ্ধ জলাশয় ছিল, যেখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। মৎস্য আহরণ করে এলাকাবাসী, প্রচুর অর্থ আয় করতো। তাই লক্ষ্মী বা সৌভাগ্যের এই দহটি, এলাকার সবার কাছে, লক্ষ্মীদহ বা লক্ষ্মদহ নামেই, পরিচিতি ছিল।
ঐতিহাসিক কৈলাশ চন্দ্র সিংহ, রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস লিখতে গিয়ে, তৎকালীন নোয়াখালীর পরগণা ও মহালগুলোর নাম, উল্লেখ করেছেন। এতে দেখা যায়, বাঞ্চানগর ও সমসেরাবাদ মৌজার পশ্চিমে, লক্ষ্মীপুর নামে একটি মৌজা ছিল। বর্তমানে পশ্চিম লক্ষ্মীপুর মৌজাই হল, তৎকালীন লক্ষ্মীপুর মৌজা।
কেউ কেউ ধারণ করেন, সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা, আরাকান পালিয়ে ওয়ার সময়, ১৬২০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই ম, ঢাকা ত্যাগ করেন। তিনি ধাপা ও শ্রীপুর হয়ে ৯ ই ম, লক্ষ্মীদাহ পরগনা ত্যাগ করে , ভুলুয়া দুর্গের ৮ মাইলের মধ্যে আসেন। ১২ই মে ভুলুয়া দুর্গ জয় করতে না পের, আরাকান চলে যান। সেই লক্ষ্মীদাহ পরগনা থেকেই, লক্ষ্মীপুর নামকরণ করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর শহরের পূর্ব পাশে, শাহ সুজার নামানুসারে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়, যা সুজা বাদশা সড়ক নামে পরিচিত।
বিখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সানাউল্লাহ নূরী, সুজা বাদশা সড়ক নামে একটি ইতিহাস গ্রন্থও , রচনা করেছেন।
১৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে মগ ও ফিরিঙ্গীদের মিলিত বাহিনী, ভুলুয়া, ভবানীগঞ্জ ও ইসলামাবাদ আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়। স্যার যদুনাথ সরকার , এ সংক্রান্ত বর্ণনায় লিখেছেন, ইসলামাবাদ চাটগাঁ শহর নয়। বরংচ এটি হল ভুলুয়ার পশ্চিমে, একটি দুর্গ সমৃদ্ধ শহর। ঐতিহাসিক ড. বোরাহ , মগ ও ফিরিঙ্গীদের জালিয়ে দেওয়া সেই ইসলামাবাদকে , লক্ষ্মীপুর বলে ধারণা করেছেন।
সুতরাং এভাবে বলা যেতে পারে যে , তৎকালীন লক্ষ্মীপুর মৌজার অংশ , মেঘনা পাড়ের দুর্গ সমৃদ্ধ কামানখোলাই ইসলামাবাদ এবং মগ ও ফিরিঙ্গীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল।
শ্রী সুরেশ চন্দ্রনাথ মুজমদার , রাজপুরুষ যোগীবংশ নামক , গবেষণামূলক গ্রন্থে লিখেছেন , দালাল বাজারের জমিদার , রাজা গৌর কিশোর রায় চৌধুরী , ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী থেকে , রাজা উপাধি পেয়েছেন। তার পূর্বপুরুষরা ১৬২৯ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে , দালাল বাজার আসেন। তার বংশের প্রথম পুরুষের নাম লক্ষ্মী নারায়ণ রায় এবং রাজা গৌর কিশোরের স্ত্রীর নাম লক্ষ্মী প্রিয়া। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, লক্ষ্মী নারায়ণ রায় বা লক্ষ্মী প্রিয়ার নাম অনুসারে , লক্ষ্মীপুরের নামকরণ করা হয়।
১৯৭৬ সালের পহেলা সেপ্টম্বর তৎকালীন ৫নং বাঞ্ছানগর ইউনিয়ন লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় রুপান্তরিত হয়। ১৯৭৯ সালের ১৯ শে জুলাই লক্ষ্মীপুর মহকুমা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারী , লক্ষ্মীপুর জেলা হিসেবে আত্নপ্রকাশ পায়।
Информация по комментариям в разработке