Скачать или смотреть সচিবালয়ে আগুন: পরিকল্পিত? বেসরকারি তদন্ত জরুরি

বাংলাদেশ সচিবালয়ে কারা বসেন? দেশের ক্ষমতাধর সরকারি ব্যক্তিরা। সঙ্গতকারণেই সচিবালয়ের নিরাপত্তা বেষ্টনী অনেক মজবুত। এই সচিবালয়ে সাধারণ মানুষের আসা-যাওয়া প্রায় অসম্ভব; যারা আসা-যাওয়ার সুযোগ পান, তারা একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই নিরাপত্তা বলয়ে প্রবেশ করেন! সচিবালয়ের অগ্নি নিরাপত্তার প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস সদা প্রস্তুত থাকার কথা অভ্যন্তরেই।
চলুন, বুঝার চেষ্টা করা যাক, সচিবালয়ে আগুন লাগার সম্ভাব্য কিছু উৎস। উৎসের প্রথমেই আসে বিদ্যুতের নাম। সচিবালয় অত্যন্ত নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকলেও বেশ কয়েকটি ভবনে বিদ্যুতের সংযোগের অবস্থা মোটেও ভালো নয়, বিশেষ করে পুরাতন ভবনগুলোতে। যদি একবারের জন্য ধরেও নিই যে ৭ নম্বর ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ ভালো নয়, অথবা যেকোনভাবে বিদ্যুৎ থেকেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তাহলে প্রশ্ন উঠে ভবনের দুই পাশ থেকে কেন আগুন/ধোঁয়া বের হচ্ছিল প্রকটভাবে; মাঝ অংশেও আগুন জ্বলছিলো, তবে তা প্রকট নয় বলেই দৃশ্যমান। ফলে প্রশ্ন উঠছে কিভাবে সম্ভব এমনটি। দ্বিতীয় উৎস হিসেবে বিবেচনা করা যায় গ্যাস সংযোগ। গ্যাসের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। তৃতীয় যে উৎসের কথা ভাবা যায় সেটি হলো বিড়ি সিগারেট থেকে আগুন। সচিবালয়ে একবার একজনের রুমে গিয়ে মনে হয়েছিলো যেন একটি ধূমপান-বলয়ে প্রবেশ করেছি! যাইহোক, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি রাতে হওয়ায় সাধারণভাবে ধারণা করা যায়, বিড়ি-সিগারেট থেকে অগ্নিকাণ্ড হয়নি। এতরাতে কেহ যদি বিড়ি-সিগারেট ফুঁকতে যায়ও তাহলে আবারও সেই একই প্রশ্ন উঠে ভবনের দুই দিকে কেন বেশি আগুন। চতুর্থ উৎসের কথা ভাবা যায় পরিকল্পিত ঘটনা। এমনটি অসম্ভব নয় যে, আগুন যাতে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে দেয়া যায়, সেই বিবেচনায় একাধিক স্পট টার্গেট করা হয়েছে!

বেশ কয়েকদিন ধরেই প্রশাসন ক্যাডারের ক্ষমতা বলয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। শেখ হাসিনা কিন্তু স্বৈরাচারী একাএকা হননি। তাদের সহযোগী হিসেবে শক্ত ভূমিকা পালন করেছে প্রশাসনের লোকজন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতন হলেও বহাল তবিয়তে আছেন রাতের ভোটের প্রধান সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। জনপ্রশাসনকে সংস্কার করে জনবান্ধব করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। লুটতন্ত্রের প্রধান সহযোগীরা সেই সংস্কারের প্রধান বাধা। ফলে প্রশ্ন আসছে, লুটতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গায়েব করার অংশ হিসেবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নির্মাণ করা হয়েছে কিনা অথবা এই সরকারের উপর ভিন্নমাত্রায় চাপ প্রয়োগ করতে চায় কিনা লুটেরা বাহিনী। যাইহোক, সাধারণত একটি ফাইলের বেশ কয়েকটি কপি থাকে। প্রত্যাশা করি পুড়ে যাওয়া ফাইলের কপি উদ্ধার করা যাবে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনুসন্ধানে অন্তত দুই শক্তিশালী কমিটি গঠন করা জরুরি। একটি কমিটিতে সরকারের লোকজন থাকবে। এই কমিটিতে স্বরাষ্ট সচিব/অতিরিক্ত সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব/অতিরিক্ত সচিব, বিদ্যুৎ/জ্বালানী সচিব/অতিরিক্ত সচিব, গণপূর্ত সচিব/অতিরিক্ত সচিব, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক এবং অগ্নিনির্বাপক গবেষক/বিশেষজ্ঞ থাকতে হবে। দ্বিতীয় কমিটি হবে বেসরকারি। এই কমিটিতে মূলত থাকবেন অগ্নিনির্বাপক/গণপূর্ত/বিদ্যুৎ-গ্যাস-জ্বালানী গবেষক/বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/শিক্ষক, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক/গবেষক। বেসরকারি এই তদন্ত কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করবে; তাদের তদন্তকাজে সরকার কোনভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যেহেতু আলোচনায় এসেছে পরিকল্পিতভাবে এই অগ্নিকাণ্ড নির্মাণ করা হয়ে থাকতে পারে, সেহেতু শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবে এখনই বলা মুশকিল অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত কিনা। সরকারি ও বেসরকারি আলাদা তদন্ত কমিটির কাছেই তদন্তের ভার দিয়ে রাখতে চাই!

বাধা সচিবালয়ের ফটক: বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের বড় বাধা ফটক। নিরাপত্তার খাতিরে জনতার প্রবেশ যেমন কঠিন, তেমনি কঠিন ফায়ার সার্ভিসের জন্যও! ৫টি ফটকের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সুযোগ আছে দুইটি দিয়ে। তবে এই দুইটি ফটক দিয়েও ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি ঢুকতে বেগ পেতে হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে আমলাদের ভাবনায় পরিবর্তন আসা জরুরী।

ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা: ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে রাত ১টা ৫২ মিনিটে তারা আগুনের সংবাদ পায়, তাদের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ১টা ৫৪মিনিটে। তারা বুঝাতে চাইলো তারা কতো ফাস্ট! বাস্তবতা হলে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা অনেক কম। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জীবন দিয়ে অগ্নিনির্বাপনের জন্য কাজ করলেও তাদের হাতে আধুনিক সরঞ্জামের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বড় বড় গাড়ি যেখাতে প্রবেশ করতে পারবে না, সেখানে আপনার হাতে অনেক বিকল্প থাকা জরুরি। সবচেয়ে বেশি জরুরি সড়ক ও ভবনের আশপাশে ফায়ার হাইড্রেন্ট রাখা বাধ্যমূলক করা; তাতে সহজেই পানি পাওয়া যাবে; পানি নিয়ে টেনশন কম করা লাগবে ফায়ার সার্ভিসের।

ভিডিও: মাহমুদ রাকিব ভাইয়ের ফেসবুক থেকে।