সড়কের বেহাল অবস্থা
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
দূর থেকে যে কেউ দেখলে মনে করতেই পারেন ফসল ফলানোর জন্য কৃষকরা হাল চাষ করছেন। বাস্তবে এটি কোনো ফসলি জমি নয়, সীমান্ত এলাকার লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। সম্প্রতি কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তাহিরপুর সীমান্ত সড়ক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্ত ঘেঁষা পর্যটন স্পট বারেকটিলা, শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী লেক), ট্যাকেরঘাট, লাকমা, লালঘাট, বাঁশতলা, চারাগাঁও, কলাগাঁও, জঙ্গলবাড়ী, লামাকাটা, বাগলীসহ বাঙালভিটা পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থা দেখলে এই পথে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতেও ভয় পাবেন যে কেউ। সড়কের কোথাও ভাঙা, কোথাও গর্ত, কোথাও আবার কাঁচা মাটির সড়ক কাঁদা হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আবার সড়কের কিছু পাকা অংশের কংক্রিট উঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির টহল দলসহ স্থানীয় লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এই সড়ক দিয়েই সীমান্ত এলাকার লোকজনকে জেলা শহরসহ পাশ্ববর্তী কমলাকান্দা, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলা শহরে যেতে হয়। সীমান্ত সড়কটি দ্রুত নির্মাণ হলে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগে বড় পরিবর্তন আসবে। জানা যায়, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কারেন্টের বাজার থেকে মধ্যনগর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক ও ৪টি সংযোগ সড়ক মিলিয়ে ১৩টি প্যাকেজের মাধ্যমে ২ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। তবে এই কাজের গতি একেবারে কম। কবে কাজ শেষ হবে এই নিয়ে সীমান্তের লোকজনের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে তাহিরপুর উপজেলার বারেকটিলা থেকে মহেশখলা পর্যন্ত সড়কে বিপাকে পড়তে হচ্ছে যাত্রী, পরিবহন চালক ও পথচারীদের। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন কষ্টের সীমা থাকে না। সড়কের একাধিক ছোট ছোট সেতুর দুইপাশের মাটি সড়ে গিয়েও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কারেন্টের বাজার থেকে মধ্যনগর পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশের মোট ২২টি প্যাকেজে কাজ শেষ করার কথা। এরমধ্যে ১৩টি প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে। বাকি নয়টি প্যাকেজের আটটি ইভালুয়েশন (মূল্যায়ন) পর্যায়ে আছে। ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি এই প্রকল্পের প্রথম প্যাকেজের কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৬ সালে। কিন্তু বাস্তবে এই সময়ের কাজ শেষ হওয়ার কোন আলামত নেই। কলাগাঁও গ্রামের সামছু মিয়া বলেন, রাস্তাঘাট ভাল হলে ব্যবসা বাণিজ্য সহ যোগাযোগ সহজ হয়। এ সড়কের মধ্যে একাধিক ছোট ছোট ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়ক দেবে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে। গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, সামান্য বাইক ঠেলে নিতে জীবন শেষ হয়ে যায়।লামাকাটা গ্রামের জামাল হোসেন বলেন, সীমান্ত সড়কের কোন উন্নয়ন নেই। অনেক অংশে কাঁচা সড়ক। বৃষ্টি হলেই মোটরসাইকেল দিয়ে চলাচল করা যায় না। সড়কের সেতুগুলোতে খালি গাড়ি নিয়ে উঠাই যায় না। এই ভাঙা সড়কে দুর্ঘটনায় লোকজন বার বার আহত হচ্ছেন। বুরুঙ্গাচড়া গ্রামের অটোরিকশা চালক রমিজ মিয়া বলেন, সীমান্ত সড়কে পর্যটক সহ যাত্রী নিয়ে অনেক কষ্টে তাদের গাড়ি চালাতে হয়। গাড়ির যন্ত্রপাতি ঘন ঘন নষ্ট হয়। তিনি বলেন, এই সড়কে তেমন উন্নয়নমূলক কাজ না হওয়ায় এখন চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ।বারেকটিলার মাহিবুর রহমান বলেন, পর্যটন স্পটসহ তাহিরপুর সীমান্তেই তিনটি শুল্কস্টেশন রয়েছে। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীসহ পর্যটকরা আসেন। সড়কপথ খারাপ হওয়ায় তারা একবার আসলে আর আসতে চান না। সীমান্ত সড়কটির দ্রুত কাজ হলে নৌ-পথের পাশাপাশি সড়ক পথেই দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়লাপাথর পরিবহন করা যেতো, পর্যটনেও নতুন গতি আসতো। চারাগাঁও কয়লা আমদানি কারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ জানান, তাহিরপুর সীমান্ত এলাকায় তিনটি শুল্ক স্টেশন রয়েছে। এখান থেকে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছেন। অথচ এই সড়কের কোন উন্নয়ন নেই। নদীপথ ছাড়া কয়লাÍপাথর রপ্তানির কোন ব্যবস্থা নেই। শুষ্কু মৌসুমে নদী শুকিয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। এই সড়কটি হলে ব্যবসায় অনেক পরিবর্তন আসবে। সুনামগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বললেন, জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কারেন্টের বাজার থেকে মধ্যনগর পর্যন্ত সীমান্ত সড়কের কাজসহ এর সঙ্গে চারটি উপজেলাকে সংযুক্ত করার সড়ক প্রকল্প প্রস্তাবনায় রয়েছে। ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা এটি। এক পর্যায়ে ২২টি প্যাকেজে এই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়। ২৮৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ প্যাকেজের কাজ চলছে। আটটি প্যাকেজ মূল্যায়ন পর্যায়ে আছে, একটির অনুমোদন মেলে নি। এই প্রকল্পে এবার বরাদ্দ মিলেছে ৯১ কোটি টাকা। তিনি বলেন, নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ হবে না, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হবে।
: https://newturn24.com/সড়কের-বেহাল-অবস...
Информация по комментариям в разработке