Скачать или смотреть Flyover in Hawor| কিশোরগঞ্জ হাওড়ে উড়াল সড়ক নির্মাণ। ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা।

সরকার হাওড় এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করতে যাচ্ছে উড়াল সড়ক। কিভাবে নির্মান করা হবে উড়াল সড়ক এবং এ সড়ক নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের মানুষের কি ধরণের সুবিধা হবে সে বিষয়ে জানতে পুরো ভিডিওটিতে আমাদের সাথেই থাকুন।
কিশোরগঞ্জের হাওড় অঞ্চল যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলে নৌকা ছাড়া মানুষের চলাচল অসম্ভব। আবার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় শুকনা মৌসুমে পায়ে হাঁটা ছাড়া কোন বিকল্প নেই ষ। হাওড়বাসীর এ দুঃখ গোছাতে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের ইচ্ছায় ২০২০ সালে ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কিশোরগঞ্জের ইটনা মিঠামইনসহ কয়েকটি উপজেলার মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সড়কটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সড়ক চালু হওয়ার পর হাওড়ে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা পাল্টে যায়। তবে চোখ জুড়ানো সেই সড়ক আদতে পূর্ণতা পায়নি। এর সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলা সদর তথা সারাদেশের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। ফলে ৮৭৪ কোটি টাকার এই সড়কের প্রধান বাহন শুধু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক।
এই অপূর্ণতা ঢাকতে তিন উপজেলাকে সরাসরি জেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে দিগন্ত বিস্তৃত হাওরের জলরাশির বুক চিরে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উড়াল সেতু নির্মিত হতে যাচ্ছে। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
নতুন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। উড়াল সড়ক নির্মাণে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, যা জোগান দেওয়া হবে সরকারের কোষাগার থেকে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উড়ালসড়কটি হবে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থেকে করিমগঞ্জের মরিচখালী পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৩১ কিলোমিটার পথে। গত জুলাই মাসে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে সেতু বিভাগ। প্রকল্পের আওতায় উড়ালসড়ক নির্মাণ ছাড়াও ১৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়ক প্রশস্ত করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবটি এখন সেতু মন্ত্রণালয়ে আছে। সেখান থেকে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। এটি বাস্তবায়ন করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত।
সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২০ সালে চালু হওয়া ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের মধ্যে নির্মিত সারা বছর (অল ওয়েদার) চলাচলের উপযোগী সড়কের পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না। কারণ, ৮৭৪ কোটি টাকায় নির্মিত ওই সড়ক হাওরের তিন উপজেলার সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের সংযোগ তৈরি করতে পারেনি। সড়কটির অপূর্ণতা দূর করতে এবার হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
উড়ালসড়ক প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামসহ এর আশপাশের এলাকার সঙ্গে কিশোরগঞ্জ সদরের সংযোগ তৈরি হবে, মিঠামইন উপজেলার সঙ্গে সেখানকার নির্মাণাধীন সেনানিবাস সরাসরি যুক্ত হবে। এর বাইরে নাকভাঙ্গা মোড় থেকে মরিচখালী বাজার পর্যন্ত বিদ্যমান সড়ক প্রশস্ত করা হবে। হাওরের বুকে সড়ক নির্মাণের ফলে পানিপ্রবাহ ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এমন সমালোচনা থাকায় হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণে জোর দিচ্ছে সরকার।
উড়ালসড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) দায়িত্ব দিয়েছিল সেতু বিভাগ। এ কাজে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বুয়েট সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নযোগ্য বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের ব্যয়, প্রাথমিক নকশা প্রণয়নসহ আনুষঙ্গিক প্রাথমিক প্রস্তুতিমূলক কাজ করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছে, সরকারের একটা হাওর পরিকল্পনা আছে। এই উড়ালসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করতে সুনামগঞ্জসহ আরও কিছু এলাকা থেকে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যানবাহন চলাচল বাড়বে। পর্যটকও বাড়বে। হাওরে উড়ালসড়ক প্রকল্পের সুফল হিসেবে পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধি এবং কৃষিপণ্য পরিবহন সহজ হবে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে উড়ালসড়কে তিনটি অবজারভেশন ডেক বা মঞ্চ রাখা হবে। পুরো প্রকল্পের জন্য ১৫১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
দৃষ্টিনন্দন অলওয়েদার সড়কের কারণে তিন দিনের দূরত্ব এখন দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় এসেছে। এমন যুগান্তকারী উন্নয়নের কথা হাওরের মানুষ একদিন স্বপ্নেও ভাবত না। এখন হাওরবাসীর সামনে উড়াল সড়কের হাতছানি।
স্বপ্নের উড়াল সড়ক নির্মিত হলে পাল্টে যাবে এক সময়ের অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ এ হাওর জনপদের সামগ্রিক জীবনচিত্র এমনটাই প্রত্যাশা করছেন হাওড়ার অঞ্চলের মানুষেরা।