ধ্বংসস্তূপে ফিরেও খুশি গাজার মানুষ, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা
Follow us:
=========
Facebook: / varendratv
Youtube: / varendratv
ধ্বংসস্তূপে ফিরেও খুশি গাজার মানুষ, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি তাদের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়িতেই ফিরছেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ঘরমুখো এই যাত্রা শুরু হয়, যা গতকাল শনিবারও অব্যাহত ছিল। গতকালও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি হেঁটে, গাড়িতে বা গরুর গাড়িতে করে গাজার উপকূলীয় রাস্তা ধরে উত্তরে নিজের আবাসস্থলে দিকে ছুটতে দেখা গেছে। শুক্র ও শনিবার মিলিয়ে অনেক ফিলিস্তিনি নিজেদের আবাসস্থলে পৌঁছেও গেছেন, যেখানে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন। তবে ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও নিজেদের আবাসস্থলে ফিরতে পেরেই উচ্ছ্বসিত অনেকে, যদিও অনশ্চিয়তা ভরা ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কাও রয়েছে। সঙ্গে আছে দুই বছরের যুদ্ধে স্বজনসহ প্রায় সর্বস্ব হারানোর বেদনাও। নতুন করে এই বেদনা আরও গাঢ় হচ্ছে, যখন ধ্বংসস্তূপে মিলছে স্বজনদের লাশ। গাজার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে এখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ধ্বংসস্তূপে আরও অনেক লাশ চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত জনপদের চরম মানবিক সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরছে।
আনন্দ ও কষ্টের মিশ্র অনুভূতি: যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলি বাহিনীর গাজার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো থেকে সরে যাওয়ার পর আল-রশিদ উপকূলীয় সড়ক আবারও খুলে দেওয়া হয়। সমুদ্রসৈকতের ধার ঘেঁষে লম্বা সারি ধরে মানুষ পায়ে হেঁটে গাজা উপত্যকার বৃহত্তম শহরাঞ্চল গাজা সিটির দিকে রওনা হন। এই এলাকাটি মাত্র কয়েক দিন আগেও ইসরায়েলের অন্যতম বৃহৎ আক্রমণের শিকার হয়েছিল। যুদ্ধ ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর নিজের আবাসস্থলে ফেরা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে মিশ্র অনুভূতি লক্ষ করা গেছে। একদিকে নিজের আবাসস্থলে ফেরার আনন্দ, আরেকদিকে আছে সব হারানোর বেদনা। গাজা সিটিতে ফিরে আসা অনেকেরই মুখে একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনার ছাপ ছিল। অনেকেই জানতেন না তাদের বাড়িঘর টিকে আছে নাকি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, তবুও তারা আশার ওপর ভরসা করে ফিরেছেন।
গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকায় নিজের বাড়িতে ফিরে ৪০ বছর বয়সী ইসমাইল জায়দা বেশ খুশি, কারণ তার বাড়িটি এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ, আমার বাড়ি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তবে চারপাশের জায়গাটা ধ্বংস হয়ে গেছে, আমার প্রতিবেশীদের বাড়িঘর, পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপ হয়ে গেছে।’
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে ফেরা নাবিলা বাসার নামের একজন এই অনুভূতিকে ‘অবর্ণনীয়’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব, খুব খুশি যে যুদ্ধ থেমেছে, আর দুর্ভোগের শেষ হয়েছে।’
নাইম ইরহিম তার অস্থায়ী তাঁবু গাড়িতে তুলে নিয়ে বলেন, ‘আমি গাজা সিটি যাচ্ছি, যদিও সেখানে জীবনের কোনো ব্যবস্থা নেই—কোনো অবকাঠামো নেই, খাবার পানি নেই। সবকিছুই অত্যন্ত কঠিন, সত্যি কঠিন, কিন্তু আমাদের ফিরে যেতে হবে।’
আরেকজন বাসিন্দা মরিয়ম আবু জাবাল বলেন, ‘আমরা অজানা গন্তব্যে ফিরেছি, আর আমরা জানি না আমাদের বাড়ি এখনো আছে কি না। আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে আশা করছি, আমাদের বাড়ি এখনো দাঁড়িয়ে আছে।’
আহমেদ আল-ব্রিম নামে একজন বলেন, ‘আমরা আমাদের এলাকায় গিয়েছিলাম। সেটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমরা এর পরে কোথায় যাব জানি না। আমরা আসবাবপত্র, বা কাপড়, এমনকি শীতের কাপড়ও কিছু উদ্ধার করতে পারিনি। কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবে যুদ্ধ বন্ধ হওয়ায় আমরা খুশি।’
টিকে থাকার অদম্য ইচ্ছা: অবিরাম বোমাবর্ষণে গাজা সিটির প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই; কোনো কার্যকরী অবকাঠামো, পরিষ্কার পানি বা বিদ্যুৎ নেই। তবুও ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িতে ফিরতে বদ্ধপরিকর। আলজাজিরার একজন সাংবাদিকের বর্ণনায় দেখা যায়, লোকজন তাদের অস্থায়ী তাঁবু খুলে নিয়ে যাচ্ছে, যা তারা ধ্বংস হওয়া বাড়ির উপরে আবার স্থাপন করবে।
ধ্বংসস্তূপে মিলছে মরদেহ: যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সুযোগে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, মেডিকেল টিমগুলো গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫১টি মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া মরদেহের মধ্যে ১১৬টি আগের, যারা যুদ্ধের সময় নিহত হয়েছেন। এই মরদেহগুলো গত ২৪ ঘণ্টায় ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনা হয়েছে। এ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে যে, গাজা উপত্যকাজুড়ে এখনো সাড়ে ৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। তারা রেড ক্রসকে ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয় করে নিখোঁজদের শনাক্ত করতে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছে।
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে গাজার শাসন ব্যবস্থা: গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনার অধীনে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-বন্দি বিনিময় চুক্তিটি দুই বছরের যুদ্ধ অবসানের পথে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের শান্তি পরিকল্পনার আওতায় এটি স্থায়ী শান্তিতে পৌঁছাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে।
Disclaimer: This video is for informational and entertainment purposes only and is not professional advice. Always consult a licensed expert for guidance. It complies with applicable laws, including FTC and copyright regulations. Affiliate links or sponsorships may be included and disclosed as required. Use the information at your own risk. Offensive or inappropriate comments may be removed.
Информация по комментариям в разработке