আদাব – সমরেশ বসু | গল্পপাঠ : প্রদীপ বৈদ্য | see description box|BNGG,SEM6(LCC)&BNG-H-IDC #37

Описание к видео আদাব – সমরেশ বসু | গল্পপাঠ : প্রদীপ বৈদ্য | see description box|BNGG,SEM6(LCC)&BNG-H-IDC #37

গ্ৰন্থ ঋণ : বাংলা ছোটগল্প – বীরেন্দ্র দত্ত
গল্পচর্চা : সম্পাদনা – উজ্জ্বল মজুমদার
*******

সমরেশ বসুর প্রথম গল্প 'আদাব'-এর প্রকাশ ঘটে মাসিক 'পরিচয়' পত্রিকার ১৯৪৬- এর শারদীয় সংখ্যায়। পরে প্রথম গ্রন্থভুক্ত হয় লেখকের প্রথম প্রকাশিত 'মরশুমের একদিন' নামের গল্প সংকলনে মোট বারোটি গল্পের রুমে শেষতম গল্প হিসেবে। গল্পের প্রথম পত্রস্থ হওয়ার সালটি লক্ষ করলে গল্পের বিষয় সম্পর্কে ভারতের এক ঐতিহাসিক তথ্যবহুল সময়ের বিশেষ কয়েকটি দিক মনে পড়বেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হয় ১৯৩৯ সালের ২রা সেপ্টেম্বরে, চলে ১৯৪৫-এর ২রা সেপ্টেম্বর সময় পরিধি ধরে। এই ছ'বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস বিচিত্র। উনিশশো তেতাল্লিশের মহামন্বন্তর এই সময়ে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার সামনে আনে সাধারণ শ্রমিক, কৃষক ও মধ্যবিত্তদের। ভারত তখন ঔপনিবেশিক বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। মন্বন্তরের পর রাজনীতির চালে ও কৌশলে যুদ্ধ-শেষের নোংরা তলানি হিসেবে আসে। মুসলমানদের ডাকে 'প্রত্যক্ষ সংগ্রাম' দিবসের (১৯৪৬, ১৬ আগস্ট) মুখ-নিচু করা পরিবেশ—যার মধ্যে প্রধান হয় হিন্দু-মুসলমানে রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এই দাঙ্গা কলকাতা সহ ভারত তথা সারা বাংলাদেশে দুরারোগ্য অসুখের বিষাক্ত বীজাণু ছড়ায়। উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নেতাদের স্বার্থসর্বস্বতার চালে পারস্পরিক সন্দেহ, বিশ্বাসহীনতা, ভয়, ঘৃণা, হিংসা, বিদ্বেষ এক অধোমুখ রক্তক্ষয়ী হানাহানির পরিবেশ তৈরি করে।
#
এই প্রেক্ষিতে পরস্পর বিপরীত দু'দিক থেকে দুটি গলির দুটি মুখ যে বড় একটি জায়গায় মিশেছে, সেই মোড়ে দুজন ভীতসম্বস্ত লোক পড়ে-থাকা এক ডাস্টবিনের আড়ালে চলে আসে নিঃসাড়ে। দুজনেই পরস্পরের আড়ালে বেশ কিছু সময় নীরব থাকে। ভয়-পরস্পর কে কোন জাতি ও ধর্মের। দুজনেই সন্দেহ করে—তাদের কে হিন্দু, কে মুসলমান—এমন ভীত-স্বর জিজ্ঞাসা দিয়ে। ক্রমশ সাহস একটু এলে দুজনের পরিচয় দুজন জানতে পারে তাদের পেশা দিয়ে। একজন নৌকার মাঝি, আর একজন সুতাকলের শ্রমিক। গভীর আতঙ্কে, অনড় সন্দেহে, স্থির অবিশ্বাসে দুজনেই ক্রমশ সে সব সরিয়ে আপনজন হতে থাকে। নিজেদের ধর্মের নামে এই দাঙ্গাকে ঘৃণা করে দুজনেই। পরস্পরের অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠার স্থির স্বভাবের মধ্যে নেশার জিনিস বিনিময় করে, কাছের হয়ে যায়। পরে ওরা বুঝে যায় নৌকার মাঝি হল মুসলমান, সুতাকলের শ্রমিক হল হিন্দু। আপন অন্তরঙ্গ কথার মধ্যে মাঝি কাল ঈদ থাকায় মেয়ের জন্যে দুটো জামা, একটা শাড়ি কিনেছে। যদি এখানেই দাঙ্গায় মারা যায় সে তবে বাড়ির অবস্থা হবে করুণতম, শোচনীয়। সুতাকলের শ্রমিকও তার পারিবারিক চরম অসহায়তার কথা অকপটে জানায়।


একসময়ে এমন দাঙ্গা, ব্যবসার ক্ষয়ক্ষতি ইত্যাদি কথাবার্তার মধ্যে সামান্য দূরে পুলিশ টহলদারির বুটের শব্দ কানে এলে ওরা নিজের নিজের মতো লুকিয়ে পড়ে, সেখান থেকে পালাবার পথ খোঁজে। ওরা এক সময়ে মুসলমানদের এলাকার কাছে এলে নৌকার মাঝি যুক্তি দেয়, সুতাকলের শ্রমিক বরং লুকিয়ে এখানে থাকুক, ভোরে বাড়ি ফিরবে। কারণ এই মুসলমান এলাকায় তার যাওয়া ঠিক নয়, নিরাপদও নয়। মাঝি নিজে বরং যেভাবে হোক বুড়ি গঙ্গা নদী সাঁতরে পার হয়ে ওর বাড়ি যাবে। ঈদের দিনে বাড়ি ফিরলে বিবির চোখের জল মোছাতে পারবে। সুতাকলের শ্রমিক সমবেদনায়, ভয়ে তাকে যেতে বারণ করলেও মাঝি শোনে না। দুজনের সম্পর্কের গভীর অনুকম্পার, সমবেদনার সম্পর্কের মধ্যে নৌকার মাঝি শুভ বিদায় জানিয়ে এক সময়ে চলে যায়। সূতাকলের শ্রমিক মাঝিকে নিয়ে দুর্ভাবনায় বুক-ভরা উদ্বেগে অস্থির চিন্তিত থাকে। যখন ভাবে বাড়ি-ফেরা নৌকার মাঝির বাড়ি ফিরে বিবির সাহচর্যের সুখের আনন্দের কথা, তখনি পুলিশ দৌড়তে দৌড়তে গুলি ছোঁড়ে ডাকাতের দিকে।
#
'আদাব' গল্পের পরিণামী সিদ্ধান্ত-চিত্রে গল্পকার অসাধারণ সংযমে রহস্য সৃষ্টিতে পাঠকদের ব্যঞ্জনা উপভোগের উপকরণ ও অনন্ত কৌতূহলকে জাগ্রত করে রেখেছেন— যা স্থায়ী সমাধানের প্রধানত আখ্যান সূত্রে চিরকালীন অতৃপ্তির দিককেই সু-স্বাদ্য করে রাখে। মনে হয়, গল্পের শেষ মাঝির বুলেটের গুলিতে মৃত্যুর সংবাদ দেয়। 

সুতা-মজুরের বিহ্বল চোখে ভেসে উঠল মাঝির বুকের রক্ত তার পোলা- মাইয়ার, তার বিবির, জামা, শাড়ি রাঙা হয়ে উঠেছে। মাঝি বলছে পারলাম না ভাই। আমার ছাওয়ালরা আর বিবি চোখের পানিতে ভাসব পরবের দিনে। দুশমনরা আমারে যাইতে দিল না তাগো কাছে।

Комментарии

Информация по комментариям в разработке