রাজা যযাতি তার পুত্রকে সিংহাসনে বসাবার পর তাকে যে সমস্ত বিষয়ে উপদেশ দিয়েছিল, শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে যে সমস্ত শিক্ষাদান করেছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সহিষ্ণুতা, সংযম, পরার্থপরতা, কোমলতা, সত্যবাদিতা, নির্লোভতা, রাজনীতির আদর্শ, ত্যাগ, এবং আত্মশুদ্ধির তত্ত্ব l একজন সত্যিকারের মহান ব্যক্তি কখনোই উত্তেজনায় ভেসে যায় না। সে অপমানেও শান্ত থাকে, কারণ তাঁর আত্মসংযমই তাঁর শক্তি। যে ব্যক্তি অন্যের দুঃখে কষ্ট পান, তিনিই প্রকৃত মানবিক। তাঁর বাক্য মধুর, আচরণ কোমল—এই গুণই সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য আনয়ন করে। একজন আদর্শ ব্যক্তি কখনোই মিথ্যা বলে না, সে নিজের কষ্টে অন্যকে রক্ষা করে। তাঁর জীবন নিঃস্বার্থ, এবং সে সর্বদা সত্যের পথে চলে। একজন রাজা তাঁর প্রজাদের সন্তানসম মনে করবে, দুষ্ট ও অন্যায়কারীকে রাজ্য থেকে দূর করবে। সে দান করবে, অতিথি সেবা করবে, এবং অনাথ বৃদ্ধদের রক্ষা করবে। শেষে রাজা রাজ্যভার পুত্রকে দিয়ে ফল-মূল আহার তপস্যায় লিপ্ত হবে। এটি আত্মশুদ্ধির চূড়ান্ত রূপ—যেখানে রাজা তাঁর দায়িত্ব পালন শেষে আত্মজ্ঞান ও মুক্তির পথে যাত্রা করে। একই রকম ভাবে রাজা যজাতিও তার সন্তান পুরু কে রাজ্য ভার দিয়ে বানপ্রস্থে গিয়েছিলেন, সেখানে বিভিন্ন রকমের তপস্যা করলেন এবং সর্বশেষে নিজের দেহত্যাগ করলেন, স্বর্গে পৌঁছালেন নিজ পুণ্য বলে l তিনি ক্রমে ক্রমে ইন্দ্রলোকে ও ব্রহ্মলোকে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে শুরু করেন l ঠিক সেই রকমই এক সময়ে ইন্দ্রদেবের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রাজা যযাতি নিজের পুণ্যফলের ব্যাপ্তি প্রকাশ করলেন এবং সেখান থেকেই তার পুণ্য ক্ষীন হতে শুরু করে l তিনি স্বর্গচ্যুত হন, এবং ভৌম-নরকের(নরক ধরিত্রী বা ভূমিদেবীর পুত্র, এই নরকের বংশকে ভৌম বংশও বলা হয় ।) উদ্দেশ্যে রওনা দেন, যেখানে ব্যক্তিগণ তাদের কর্মফল অনুযায়ী রজোবীর্য্যযুত হয়ে পুনঃপুনঃ দেহ ধারণ করে, কেউ দ্বিপদ কেউ চৌপদ হয়, কেউবা পশু, কীট, পতঙ্গ বিবিধ জন্মগ্রহণ করে, পুনঃপুনঃ মৃত্যুবরণ করে, কর্মের গতাগতি খন্ডন করতে পারেনা l পড়ে যাওয়ার সময় দেখা হল তার কন্যার পুত্র অষ্টক, শিবি, বসু ও প্রতর্দ্দন দের সাথে, তাদের পুণ্য বলে শেষ পর্যন্ত রাজা তাদের সাথে এক সঙ্গে পঞ্চ দিব্য রথে চড়ে আবার ইন্দ্রালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। পুণ্য তখনই পূর্ণরূপে গৃহীত হবে যখন সৃষ্টির উন্নয়নের বৃহৎ প্রয়াস নিহিত, সদগুণ সম্পন্ন, ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ভাব যুক্ত কোন কর্ম নিজের অজান্তেই হবে, যেখানে কোন গণনা থাকবে না, কোন উদ্দেশ্য থাকবে না,কোন আত্মস্বার্থ থাকবেনা, লাভ-ক্ষতির মানদন্ড থাকবে না, পাপ পুণ্যের ভয় থাকবে না, যেখানে ছলনা কঠোরতা থাকবে না, যেখানে অসহিষ্ণুতা অসঙ্গ থাকবে না l
মহাভারত শুধুমাত্র পৌরাণিক মহাকাব্য বা কাহিনী বা ইতিহাসই নয় বরং রাজনীতি, ধর্মতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, বিজ্ঞান তথ্য ইত্যাদির এক সুদৃঢ় মেলবন্ধন I বৃহৎ ভারতীয় সংস্কৃতির এক দিব্য উর্জাI এতে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ, ঘটনাক্রম শুধু উদাহরণই নয় বরং সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বপ্রকার শিক্ষার এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্তI স্থান, কাল, পাত্র ভেদে সকল স্তরের, সকল ব্যক্তিবর্গের এই উৎকৃষ্ট গ্রন্থ পাঠ করা উচিত ও তার মধ্যে নিহিত তথ্য অনুধাবন করা উচিত I যা আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পৃথিবী কে অনেক সুন্দর ও অনেক সার্থক করে তুলবে, যা মানবজাতির কল্যাণের পক্ষে সুখকর হয়ে উঠবে I
Информация по комментариям в разработке