Скачать или смотреть ডায়মন্ড ডাব (ঘুঘু) পাখি পালন ও পরিচিত ll present by Riad Media ll

ডায়মন্ড ডাভ (ঘুঘু) পালন ও পরিচর্যা
HomeBirdডায়মন্ড ডাভ (ঘুঘু) পালন ও পরিচর্যা
BIRDডায়মন্ড ডাভ (ঘুঘু) পালন ও পরিচর্যা
July 29, 2020
ডায়মন্ড ডাভ (ঘুঘু) পালন ও পরিচর্যা
ঘুঘু কবুতর গোত্রের একটি পাখি। বাংলাদেশের বহুল পরিচিত পাখির মধ্যে ঘুঘু অন্যতম। মূলত আকর্ষণীয় ডাকের জন্যই এরা বেশি জনপ্রিয়। আমাদের দেশে এই পাখি এখন গ্রামাঞ্চলেই দেখা যায়। লোকালয়ের কাছে বসবাস করলেও এরা আড়ালে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। পৃথিবীতে শুধু ঘুঘুর প্রজাতি রয়েছে প্রায় ৩৬টি। তার মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় ৬টি প্রজাতি। কিন্তু এসব বন্য ঘুঘু পাখি শিকার, ধরা বা খাঁচায় পোষা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।

তবে এদেশে খাঁচায় পোষা যায় এমন কিছু বিদেশি জাতের ঘুঘুও পাওয়া যায়। এদের মধ্যে অন্যতম ডায়মন্ড ডাভ। এর আদিনিবাস অস্ট্রেলিয়া। এই পাখিটি অস্ট্রেলিয়ার প্রকৃতিতে পাওয়া সবচাইতে ছোট জাতের ডাভের মধ্যে অন্যতম। যথারীতি এই পাখিটাও খাঁচায় পোষ মানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রজনন করানো হচ্ছে। একারণে এরা বন্য পরিবেশে থাকা ঘুঘুর চেয়ে আলাদা স্বভাবের হয়। খাঁচায় যত্ন সহকারে ডায়মন্ড ডাভ পালন করলে সাধারণত ৮-১০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।

ডায়মন্ড ডাভ
অস্ট্রেলিয়ান ডায়মন্ড ডাভ
অস্ট্রেলিয়ান ডায়মন্ড ঘুঘুর বৈশিষ্ট্য
দেখতে কবুতরের মতো হলেও আকারে এরা বেশ ছোট। লেজসহ লম্বায় প্রায় ০৮ থেকে ১১ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। প্রজাতিভেদে ডায়মন্ড ঘুঘুর গায়ের রঙ হালকা থেকে গাড় ছাই বা ধুসর, বাদামী ও তামাটে বর্ণের হয়। ঠোঁটের রঙ গাড় ছাই বর্ণের। পায়ের রঙ গোলাপী বর্ণের। তবে শিশু অবস্থায় এদের সম্পূর্ণ গায়ের রং ফ্যাকাশে ধূসর বা ধুসর বর্ণের থাকে। পূর্ণবয়স্ক ঘুঘুর চোখের চারপাশে লাল বা কমলা রঙের বৃত্ত বা আইরিং তৈরী হয়। পুরুষ ঘুঘুর আইরিং পুরু হয়। সাধারণত রিঙের পরিধি হয় ২-৩ মিলিমিটার পর্যন্ত। কিন্তু স্ত্রী ঘুঘুর চোখের বৃত্ত চিকন (প্রায় ১ মি.মি.) হয়। অস্ট্রেলিয়ান ডায়মন্ড ঘুঘু চেনার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে এদের ডানায় থাকা ছোট ছোট অসংখ্য সাদা রঙের ফোটা। এই ফোটাগুলোকে ডায়মন্ডের সাথে তুলনা করে এদেরকে ডায়মন্ড ডাভ বলা হয়।

স্বভাবঃ
ডায়মন্ড ডাভ শান্ত স্বভাবের পাখি। এরা সাধারণত জোড়া বেঁধে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাই জোড়াপ্রতি আলাদা খাঁচা দিলে প্রজননের ফলাফল ভাল হয়। ডাভকে হাত দিয়ে ধরলে কামড়ায় না। কলোনিতে অন্যান্য পাখির সাথে রাখা উচিত না। কারণ নিজেদের অন্যান্য পাখিদের থেকে রক্ষা করতে অভ্যস্ত নয়।

ডাকঃ
ডাভ টিয়া বা ফিঞ্চ জাতীয় পাখির মত অবিরত ডাকাডাকি করেনা। তবে দীর্ঘ বিরতিতে ক্যু ক্যু শব্দে ডাকে যা অনেকটা করুণ বাঁশির সুরের মত মনে হয়। সাধারণত পুরুষ পাখি লেজ তুলে ক্যু ক্যু শব্দে ডেকে থাকে। যারা পাখি পালতে চান, কিন্তু পাখির অবিরত চেঁচামেচিতে বাসায় বা আশেপাশের প্রতিবেশীদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে ভাবছেন তারা নিঃসন্দেহে এই পাখি বাছাই করতে পারেন।

স্ত্রী-পুরুষ ঘুঘু চেনার উপায়ঃ
ঘুঘু পাখির নর-মাদি চেনায় উপায়
ছেলে (ডানে) ও মেয়ে (বামে) ঘুঘু
ডায়মন্ড ডাভের মেইল এবং ফিমেইল দেখতে অনেকটা একইরকম। তবে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে এদের পৃথকভাবে চেনা যায়।

১। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ঘুঘুর আইরিং (চোখের বৃত্ত) সাধারণত মোটা হয় এবং স্ত্রী ঘুঘুর আইরিং তুলনামূলক চিকন হয়।

২। ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষ ঘুঘু স্ত্রী ঘুঘুর চেয়ে আকারে তুলনামূলকভাবে বড় হয়।

৩। পুরুষ ঘুঘুর মাথা ও ঠোঁট মোটা হয়। অপরদিকে স্ত্রী ঘুঘুর মাথা তুলনামূলক ছোট এবং ঠোঁট চিকন ও কিছুটা লম্বাটে আকৃতির হয়।

৪। প্রাপ্তবয়স্ক নর ঘুঘু ভরাট কন্ঠে ক্যু ক্যু শব্দে উচ্চ স্বরে ডাকাডাকি করে। ডাকার সময় তাদের লেজ হাতপাখার মত মেলে ধরে। অপরদিকে স্ত্রী ঘুঘু খুব একটা ডাকাডাকি করে না। এদের ডাক সংক্ষিপ্ত এবং ডাকার সময় লেজ তুলেনা।

ডায়মন্ড ডাভের মিউটেশনঃ
খাঁচায় পোষা ডায়মন্ড ডাভের মধ্যে মিউটেশন এর ভিন্নতা দেখা যায়। বাংলাদেশে সহজলভ্য মিউটেশন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গ্রে ডায়মন্ড ডাভ, সিলভার ডায়মন্ড ডাভ, রেড ডায়মন্ড ডাভ, হোয়াইট ডায়মন্ড ডাভ ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে পাইড ডায়মন্ড ডাভ, সিনামন ডায়মন্ড ডাভ, ইয়োলো ডায়মন্ড ডাভ ইত্যাদি।

ঘুঘু পাখির খাঁচাঃ
ডায়মন্ড ডাভ পার্চ বা বসার লাঠির চেয়ে খাঁচার ফ্লোরে বেশিরভাগ সময় হাঁটাহাটি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। খাঁচার শিক বেয়ে ওঠানামা করা বা ঝুলে থাকায় অভ্যস্ত নয়। তারা সরাসরি সামনের দিকে উড়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচলে অভ্যস্ত। তাই এসব বিষয় মাথায় রেখে তাদের জন্য তুলনামূলক বড় খাঁচা প্রয়োজন। এদের জন্য কমপক্ষে ১৮”-১৮”-১৮” ইঞ্চি মাপের খাঁচা দেয়া উচিত।

ডায়মন্ড ডাভের খাবারঃ
অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘুর প্রধান খাদ্য শষ্যদানা। এরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ঘাসজাতীয় গাছের বীজদানা যেমন – চিনা, কাউন, গুজিতিল, তিশি, পোলাও ধান, মিলেট মিক্স, ক্যানারী সিড ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এসকল বীজদানা নির্দিষ্ট অনুপাতে একসাথে মিশিয়ে খাওয়ালে ডাভ পরিমিত পুষ্টি পাবে। বীজদানাগুলো অবশ্যই ধুলাবালিমুক্ত হতে হবে।

এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি এবং ফলমুল রয়েছে ঘুঘু পাখির খাদ্যতালিকায়। অন্যান্য খাঁচার পাখির মত বীজের খোসা ছাড়িয়ে না খেয়ে বীজ সরাসরি গিলে ফেলে। তাই ডাভের জন্য খাঁচায় গ্রীটের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। গ্রীট এদের খাবার হজমে সাহায্য করে। এছাড়া খাঁচায় সবসময় পরিষ্কার ফুটানো পানি দিয়ে রাখতে হবে।

ডায়মন্ড ডাভের প্রজনন
ঘুঘু পাখির বাসা
প্রকৃতিতে ঘুঘুকে ভারী বৃষ্টিপাতের পর প্রজনন করতে দেখা যায়। এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে এবং ব্রিডিং সিজনে পুরুষ ঘুঘু বাসা তৈরী করার পর স্ত্রী ঘুঘুকে মেটিং এর ক্যু ক্যু শব্দে ডেকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। পুরুষ ঘুঘু ডাকার সময় তার লেজগুলো হাতপাখার মত মেলে ধরে।

খাঁচায় পোষা ঘুঘুকে সারাবছরই প্রজনন করানো যায়। তবে বছরে ৩ বারের অধিক ব্রিডিং করানো উচিত নয়। এর বেশি হলে পাখির শরীরের ক্ষতি হবে। ডায়মন্ড ডাভ সাধারণত ৬ মাস বয়স হলেই ডিম পাড়ার উপযোগী হয়। তবে ব্রিডিং করানোর জন্য বয়স এর চেয়ে বেশি হলে ভাল হয়।
Thank you!!