Скачать или смотреть !! জয়পুরহাটের ঐতিহাসিক হিন্দা শাহী মসজিদ !! Historical Hinda shahi mosjid !!

বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে,
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে,
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপর
একটি শিশির বিন্দু।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই কবিতায় যথার্থই বলেছেন। আমরা অজস্র অর্থ, সময় ও শ্রম ব্যয় করে বহু দূর-দূরান্তে বিদেশ বিভূঁইয়ে ঘুরে বেড়াই।
কিন্তু আফসোসের বিষয় আমাদের দেশটাকেই আমরা ঘুরে দেখার আগ্রহ বোধ করি না বা আমাদের সময় হয়ে ওঠে না। অথচ বাংলাদেশের পড়তে পড়তে লুকিয়ে রয়েছে সীমাহীন সৌন্দর্য। অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই সুজলা সুফলা বঙ্গভূমি।
নদী-নালা, বন-বনানী, পর্বতমালা কি নেই এই দেশটিতে। আর শস্য ভরা সমতলভূমির সৌন্দর্যের কথা তো আমাদের সকলেরই জানা।
আসুন আজ আমরা এই বঙ্গভূমির উত্তরের এক সমৃদ্ধ জেলা জয়পুরহাটের ঐতিহাসিক এক স্থাপত্য নিদর্শনের সাথে পরিচয় হয়ে নিই।
আমাদের ভ্রমণ টিমের আজকের গন্তব্য ঐতিহাসিক হিন্দা কসবা শাহী মসজিদ। আজকের এই ভ্রমণ টিমে আমার সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন আমার বন্ধু তুল্য বড় ভাই জনি, জয়পুরহাটের টগবগে তরুণ হাসিব এবং তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ।
আমাদের এই ভ্রমণের একটি উদ্দেশ্যও রয়েছে। মহান স্রষ্টা তাঁর এই পৃথিবীকে কত সুন্দরভাবে সৃজন করেছেন তা স্বচক্ষে দেখা এবং সেই সাথে আপনাদেরকেও দেখানোর চেষ্টা করা। আর যদি এই দেখা এবং দেখানোর মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করা যায় সেটাই হলো বড় পাওনা।
হিন্দা-কসবা শাহী মসজিদ (Hinda Kasba Shahi Mosjid) জয়পুরহাট জেলায় অবস্থিত ইসলামী স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন।
জয়পুরহাট শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের হিন্দা গ্রামে এ মসজিদটি অবস্থিত।
মসজিদটিতে ভ্রমণের জন্য আমরা একটি ইজি বাইক ভাড়া নিয়েছি। আমাদের ইজি বাইকের ড্রাইভার ফরিদ ভাই অত্যন্ত চমৎকার স্বভাবের মানুষ। তার নিরাপদ ড্রাইভিং আমাদের ভ্রমণকে করেছে বেশ আনন্দময়।
ভ্রমণপথের সৌন্দর্যও ছিল যথেষ্ট উপভোগ্য। রাস্তার দুপাশে রংবেরঙের গাছের সারি, সবুজে মাখা ফসলের জমি, জলে ভরা পুকুর- বিল আরো কত দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য হৃদয় মনকে করেছে আপ্লুত।
পথের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে এক সময় আমরা হাজির হয়ে গেলাম হিন্দা গ্রামের ঐতিহাসিক সেই হিন্দা কসবা শাহী মসজিদে।
বাংলা ১৩৬৫ সালে বাগমারী পীর হিসাবে খ্যাত চিশতিয়া তরিকার অন্যতম পীর হযরত আব্দুল গফুর চিশতীর (রহ) নির্দেশে তাঁরই সুযোগ্য খলিফা মাওলানা আব্দুল খালেক চিশতি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। জানা যায় যে, হযরত আব্দুল গফুর চিশতী (রহ) নিজেই এই মসজিদের নকশা তৈরি করেন ও ভিত্তি প্রস্তরও তাঁর হাতেই স্থাপিত হয়।
মসজিদটি মুঘল স্থাপত্যের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে। এর কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে পোড়ামাটি, কাঁচ, চিনামাটির টুকরা এবং মোজাইক। এর দেয়ালে রয়েছে টেরাকোটার তৈরি বাহারি নকশা।
মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৪৯.৫০ ফুট ও প্রস্থে ২২.৫০ ফুট লম্বা। ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের সাথে সাদৃশ্য রেখে এই মসজিদটিতে পাঁচটি গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে। মাঝেরটি বড় ও চারপাশে রয়েছে ৪টি ছোট গম্বুজ । ছাদের চারকোনে চারটি তুলনামূলক বড় মিনার এবং এদের মাঝে আরো বারটি ছোট মিনার রয়েছে। এবং মসজিদের উত্তর-পূর্ব পাশে মসজিদ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে ৪০ ফুট উঁচু একটি মিনার রয়েছে। এই মসজিদটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এতে কোন রোড ব্যবহৃত হয়নি।
মসজিদ চত্বরে প্রবেশের জন্য বাহিরের দিকে যেই প্রবেশ ধারটি রয়েছে সেটিও অত্যন্ত সুন্দরভাবে কারুকাজমন্ডিত। সুন্দর এই প্রবেশদ্বার অতিক্রম করেই মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করতে হবে। মসজিদ চত্বরে রংবেরঙের নানা সুগন্ধিযুক্ত ফুল গাছের সমারোহ মসজিদটির সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ পাশে চমৎকার একটি অযুখানা রয়েছে । অজু করে পবিত্রতা অর্জন করে দু'রাকাত নামাজ করে নিন। সত্যিই অন্তরে একটি বিশেষ প্রশান্তি অনুভূত হবে।
মসজিদটির পূর্ব পাশে রয়েছে হযরত শাহ্‌ সুলতান বখতির ৪ জন শিষ্যের মাজার।
মাজার দুটি হল শাহ কালামজী এবং শাহ্ এলেমজী এর মাজার । সূদুর ঘোড়াশাল থেকে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে আসেন । তবে তাদের কবর দুটি সাধারন কবর থেকে অনেক লম্বা ।
মসজিদ এর উত্তর প্রান্তে আরো একটি মাজার রয়েছে। মাজারে শায়িত সাধকের প্রকৃত নাম কেউ না জানলেও আল্লাহ ভক্ত এই মানুষটিকে সাধারণ মানুষ সিফাত পাগলা বলেই জানেন ।
কীভাবে যাবেন: ঢাকার কল্যাণপুর/উত্তরা থেকে শ্যামলী, হানিফ, কেয়া, এস আর ট্রাভেলস সহ বেশ কিছু পরিবহনের বাসে জয়পুরহাট চলে আসতে পারেন। ভাড়া ৫৫০ থেকে ১২০০ টাকা।
চাইলে আপনারা কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ট্রেনেও চলে আসতে পারেন জয়পুরহাটে। একতা, দ্রুতযান এবং নীলসাগর নামক তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন যোগে জয়পুরহাটে অনায়াসেই ভ্রমণ করা যায়। ট্রেনে শ্রেণী ভেদে ভাড়া ৩২৫ টাকা থেকে ১১৬০ টাকা।
জয়পুরহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাসে করে ক্ষেতলালের ইটাখোলায় যেতে হবে। সেখান থেকে রিকশা নিয়ে চলে যাবেন হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ।

কোথায় থাকবেন:
জয়পুরহাটে পৃথিবী হোটেল, হোটেল সৌরভ ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। ভাড়া দরদাম করে থাকতে পারেন এখানে।