Скачать или смотреть বীর প্রতীক মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা! | কুমিল্লা- চৌদ্দগ্রাম | মুক্তিযোদ্ধা | bnanews24

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮ সালের সামরিক আইন, ৬২ সালের শিক্ষা সংকোচন নীতি, ৬৬ সালের ৬ দফা, ৬৭ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ৭০ সালের নির্বাচন, ৭১ সালের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ও অসহযোগ আন্দোলন এবং ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের অপারেশন সার্চ লাইট এর পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৩০ লাখ শহীদ ও তিন লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাঙ্গালী পেয়েছে একটি স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন ভূ-খন্ড এবং জাতীয় সংগীত। আর এই সব অর্জনের অগ্রনায়ক হচ্ছে দেশের সুসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট প্রায় দুই হাজার বছর আগে আমাদের দেশ সম্পর্কে তার মন্ত্রীকে বলেছিলেন, 'সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! তার প্রমাণ মিলেছে এবার।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করেছে জামায়াত ইসলামীর কর্মীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা কানু কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। স্থানীয় এমপি মুজিবুল হকের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে তার বিরুদ্ধে আগে একাধিক মামলা হয়েছিল। রোববার দুপুরে একা পেয়ে স্থানীয় ১০ থেকে ১২ জন তাকে হেনস্তা করেএবং গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। শুধু জুতার মালা পরিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, তাকে কুমিল্লা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছে। হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে জামায়াত ইসলামীর কর্মীদের থেকে নিজেকে রক্ষা করেছে এই বীর প্রতীক মুক্তিযোদ্ধা। গত রোববার দুপুরের দিকে চৌদ্দগ্রামের কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আব্দুল হাই কানু। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা । তার অপরাধ, তিনি আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় জামায়াত সমর্থক প্রবাসী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে অহিদ, রাসেল, পলাশ সহ ১০ থেকে ১২ জন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কানুর গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। তিনি জুতার মালা সরিয়ে এলাকায় আর আসবেন না বলেও জানান। এ সময় তার ভিডিও ধারণ ও ছবি নেওয়া হয়। ওই ব্যক্তিরা বলতে থাকেন ‘এক গ্রাম লোকের সামনে মাফ চাইতে পারবেন কিনা? অন্যরা বলতে থাকেন তিনি কুমিল্লা আউট, এলাকা আউট, ছেড়ে দাও।’

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু বলেন, হঠাৎ আমাকে একা পেয়ে জোর করে ওরা জুতার মালা গালায় দিয়ে ভিডিও করেন। বিচার কার কাছে চাইব? মামলা দিয়ে আর কী হবে? তারা সবাই জামায়াতের রাজনীতি করে। আমি আওয়ামী লীগ করলেও বিগত দিনে তাদের কোনও ক্ষতি করিনি। উল্টো আওয়ামী লীগের এমপির রোষানলে পড়ে ৮ বছর এলাকা ছাড়া ছিলাম।

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর ওই মুক্তিযোদ্ধা মোবাইল ফোনে বিষয়টি আমাকে অবগত করেছিলেন। তবে তিনি মামলা করবেন না বলে জানান।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে রোববার রাতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এ ঘটনার সাথে স্থানীয় জামায়াতের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসী আবুল হাসেম আমাদের দলের কেউ নয়। তবে সমর্থক কিংবা অনুসারী হলেও হতে পারে।

একজন বীর প্রতীক খেতাবপ্রা্প্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরিয়ে জামায়াত ইসলামীর কর্মীদের উল্লাস, গ্রাম ঘুরানো এবং এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশের ঘটনাটি সারাদেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। দেশের লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা ফুঁসে উঠছে।