শিশু-কিশোরদের চরিত্র গঠনে ‘সোনামণি’ সংগঠনের ভূমিকা
মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
কেন্দ্রীয় পরিচালক, সোনামণি।
চরিত্র মানব জীবনের সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ। সুন্দর এ ধুলির ধরণীতে চরিত্রবান মানুষের সংখ্যা বেশী হলেই তা শান্তির নীড়ে পরিণত হবে। আজকের শিশু-কিশোর আগামী দিনের দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাদের চরিত্র গঠনে ‘সোনামণি’ সংগঠন সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিশু-কিশোরদের চরিত্র গঠনে ‘সোনামণি’র ভূমিকা আলোচনার পূর্বে উত্তম চরিত্র ও তার সুফল সম্পর্কে কিছু আলোচনার প্রয়োজন বলে মনে করি। সোনামণিদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয় এই পৃথিবীতে সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদ কোনটি? তাহলে হয়ত অনেকেই উত্তর দিবে টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, মণি-মুক্তা ইত্যাদি। আর যার নিকট এসব সম্পদ আছে সেই সর্বোক্তম ব্যক্তিই! বাস্তবে কিন্তু তা নয়। এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে সর্বোত্তম সম্পদ হল মানুষের উত্তম চরিত্র। আর চরিত্রবান ব্যক্তি পৃথিবীর সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদ। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম’ (বুখারী হা/৩৫৫৯; মিশকাত হা/৫০৭৫)।
দুনিয়াবাসী সচ্চরিত্রের মত মহৎ গুণ অর্জন ও বাস্তব জীবনের প্রতিটি স্তরে তা প্রয়োগ করতে পারলে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে জান্নাতি আবহাওয়া প্রবাহিত হবে। দুনিয়ায় অধিকাংশ বস্তুই অর্থের বিনিময়ে লাভ করা যায়। কিন্তু সচ্চরিত্র কোন কিছুর বিনিময়ে খরিদ করা যায় না। জীবনের বাঁকে বাঁকে কঠোর সাধনার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হয়। চরিত্র শব্দটি বিশ্লেষণ করলে অর্থ দাঁড়ায় মানুষ হিসাবে সমগ্র উত্তম গুণাবলী ধারণ করা। ইংরেজীতে প্রবাদ আছে, Character is the crown of a man ‘চরিত্র মানুষের মুকুট স্বরূপ’। আর চরিত্রহীন মানুষ পশুর চেয়েও অধম।
সুন্দর পরিবার, সমাজ ও দেশ গড়তে হলে চরিত্রবান মানুষ ও নেতা আবশ্যক। যা ব্যতীত সুষ্ঠু সমাজ গড়া সম্ভব নয়। সেকারণ যুগে যুগে আল্লাহ যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন তাদেরকে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী করে পাঠিয়েছেন। কারণ কেবল কথা শুনে নয়, বরং সুন্দর চরিত্র ও আচরণ দেখে মানুষ মানুষকে ভালবাসে ও তাকে অনুসরণ করে (দিগদর্শন-২, পৃ. ১৫৫)।
তবে সচ্চরিত্রের সিঁড়ি বেয়ে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করা খুবই কষ্টকর। আল্লাহ, তাঁর রাসূল (ছাঃ) ও যোগ্য আমীরের আনুগত্য, পিতা-মাতা, শিক্ষক-মুরব্বী, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা ও ছোটদের প্রতি স্নেহ-মমতাবোধ, সত্যবাদিতা, ওয়াদা পালন ইত্যাদি গুণাবলীর সমন্বিত রূপই সচ্চরিত্র। একজন ব্যক্তিকে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, শিক্ষক-গুরুজনদের কাছে চরিত্রবান হিসাবে গড়ে উঠতে হয়। এর অধঃগতি খুবই সহজ। মিথ্যা, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, ওয়াদা বরখেলাপ ইত্যাদি অপকর্মে জড়িত হলে অল্প সময়েই একজন মানুষ চরিত্রহীন হিসাবে আখ্যায়িত হয়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এ ব্যাপারে খুবই অসচেতন। এ জন্য মুসলিম জাগরণের কবি ড. ইকবাল আক্ষেপ করে বলেন, ‘মানুষ সূর্যের আলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মাটির মানুষ হয়ে বিচরণ করতে পারে চাঁদের মাটিতে। অথচ সে পৃথিবীতে মানুষের মত চলতে পারে না’ [মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী, অনুবাদ মুহাম্মাদ যইনুল আবেদীন, প্রবন্ধ একটি আদর্শ সমাজের সন্ধানে, মাসিক অগ্রপথিক (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৯৭ খ্রি.), ঈদ-ই মিলাদুন্নবী সংখ্যা, পৃ. ২৮১। গৃহীত : মাসিক আত-তাহরীক, ১৬/৬ মার্চ ২০১৩, পৃ. ১৯]।
উত্তম চরিত্রের ফলাফল
১. উত্তম চরিত্রের অধিকারী দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি : উত্তম চরিত্রের ফলাফল সুদূর প্রসারী। উত্তম চরিত্রের অধিকারী দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তিনি ছোট, বড়, নারী ও পুরুষ যেই হোন না কেন। আবার তিনি যেই বংশেই জন্মগ্রহণ করুন না কেন; উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি ইহকাল ও পরকালে সফল। যিনি উত্তম চরিত্র ও কর্ম দ্বারা জীবনকে সাজাতে পারবেন তিনিই সম্মানিত। শুধু বংশ মর্যাদার কারণে একজন ব্যক্তি সম্মানিত হতে পারেন না। কবি আবুল হাশেম (১৮৯৮-১৯৮৫ খ্রি.) বলেন,
নহে আশরাফ যার আছে শুধু বংশের পরিচয়
সেই আশরাফ জীবন যাহার পুণ্য কর্মময়।
তাই একজন চরিত্রবান ব্যক্তি দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, قَالَ لَمْ يَكُنِ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَاحِشًا وَلاَ مُتَفَحِّشًا وَكَانَ يَقُولُ إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا ‘নবী করীম (ছাঃ) অশ্লীলভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম’ (বুখারী হা/৩৫৫৯; মিশকাত হা/৫০৭৫)।
Информация по комментариям в разработке