Скачать или смотреть প্রাণো বন্ধুরে কোন বা দোষে হইলাম অচেনা । Prano Bondhure Kon ba Doshe

এই গীতির অন্তর্নিহিত বিষয় (নারীচেতনার দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ)

🕊 ১. এক নারীর আর্তনাদ –
“প্রাণো বোন্ধুরে, কোন বা দোষে হইলাম অচেনা।”

এটি এক নারীর আত্মিক ক্রন্দন।
সে জানে না, কী অপরাধে তার প্রিয়জন তাকে ভুলে গেছে —
তবু সে ভুলতে পারে না।
এখানে নারী কেবল প্রেমিকা নয়,
সে এক আত্মবোধসম্পন্ন নারী,
যে ভালোবাসার প্রতিদান না পেয়েও ভালোবাসার পবিত্রতা ধরে রেখেছে।

এই আর্তনাদে রবীন্দ্রনাথের “বিরহিণী নারী”র প্রতিধ্বনি শোনা যায় —
যেখানে বিচ্ছেদে নারী দুঃখে নয়, বরং অভ্যন্তরীণ শক্তিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে।

🌿 ২. শ্যামের বাশি – নারীর প্রেম-চেতনার প্রতীক
“শ্যামের বাশি বাজায় বনে, নারীর ও মন উচাটনে...”

এখানে “শ্যাম” হলো চিরপ্রেমিক,
আর “নারী” হলো সেই চির-প্রেম-গ্রহীতা আত্মা,
যার ভেতরে প্রেম জাগে, জ্বলে, ও পুড়ে যায়।

শ্যামের বাঁশির সুর শুনে নারী নিজের সব সামাজিক বন্ধন ভুলে যায় —
“ঘরেতে বান্ধিয়া রাখা যায় না।”
এই পঙ্‌ক্তি নারী-মনস্তত্ত্বের গভীরতম সত্যকে ছুঁয়ে যায়:
নারী ভালোবাসার টানে কখনো কখনো সমাজ, পরিবার, এমনকি নিজস্ব মানমর্যাদাও ত্যাগ করে।
এটি সেই প্রেমযন্ত্রণা ও আত্মসমর্পণের প্রতীক,
যা বাংলা সাহিত্য ও ভক্তিকাব্যে রাধারূপে প্রকাশ পেয়েছে।

🔥 ৩. ‘দোষের দোষী কাংগালিনী’ – আত্মত্যাগের সর্বোচ্চ রূপ
“দোষের দোষী কাংগালিনী, জাত কুলো মান থাকে না।”

এই পঙ্‌ক্তিতে নারী সমাজের দৃষ্টিতে “অপরাধিণী” হয়ে যায়,
কিন্তু ভালোবাসার দৃষ্টিতে সে হয়ে ওঠে পরম শুদ্ধ আত্মা।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এই রকম নারীচরিত্র পাওয়া যায় —
চণ্ডীদাসের “রাধা”,
মীরাবাই,
লালন ফকিরের “ভক্তিনারী” —
যারা সমাজের নিয়মে নয়, প্রেমের অন্তঃসত্যে বেঁচে থাকে।

এই নারী ভালোবাসার জন্য সমাজ হারায়, কিন্তু আত্মাকে খুঁজে পায়।
তাই তার “অচেনা হওয়া” মানে মানুষের দৃষ্টিতে হারানো, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে খুঁজে পাওয়া।

🌸 ৪. নারীর আত্মবোধ – প্রেমই তার মুক্তি
এই গানটি এক নারীর আত্ম-উন্মোচনের যাত্রা।
প্রথমে সে প্রশ্ন করে — “কোন দোষে?”
শেষে এসে সে বুঝতে পারে,
প্রেমে হারিয়ে যাওয়া কোনো দোষ নয়;
এটাই তার সত্তার পরিপূর্ণতা।

এইভাবে গানটি নারীকে দুর্বল প্রেমিকা নয়, বরং এক আত্মানুভবী সত্তা হিসেবে দেখায় —
যে ভালোবাসার মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে মুক্তি খুঁজে পায়।

💫 সাহিত্যিক সারমর্ম:
“প্রাণো বন্ধুরে” গানে নারী কেবল প্রিয়জনকে ডাকে না,
সে নিজের ভেতরের নারীত্ব, প্রেম ও আত্মার সুরকেও জাগিয়ে তোলে।

তার অচেনা হওয়া মানে সমাজে হারিয়ে যাওয়া নয় —
বরং প্রেমের গভীরে নিজেকে নতুন করে চেনা।

এটি এমন এক নারীর গান,
যিনি ভালোবাসার কারণে সমাজ হারান,
কিন্তু প্রেমে খুঁজে পান নিজস্ব অস্তিত্ব ও আধ্যাত্মিকতা।

লিখেছেন – রাকিব মোহাম্মদ ( মিলকান)
রচনা কাল – ০৫/০৪/২০২৪ ইং
E-mail : [email protected]
#প্রাণোবোন্ধুরে #BanglaSong #বিরহেরগান #EmotionalSong #FolkFusion