রাসুল (সঃ) এর ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার অলৌকিক ঘটনা সহিহ হাদিস দ্বারা সত্য বলে প্রমাণিত। আল্লাহর তাআলার বিরাট শক্তির একটা ছোট্ট নিদর্শন আমাদের তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। নবী (সঃ) এর কাছে আরবের লোকজন এসে বলেছিল, আমাদের এমন নিদর্শন দেখান যেটা প্রমাণ বহন করে যে আপনি আল্লাহর রসূল। একটি বর্ণনা অনুযায়ী হযরত জিবরাইল আঃ নবীজি (সঃ) কে বলে দিলেন রাতে এক স্থানে এসে জমা হতে যাতে তারা নিদর্শন দেখতে পাবে। রসুলুল্লাহ (সঃ) জিব্রাইল আঃ এর কথা তাদের জানালে তারা রাতে এসে দেখতে পায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের উপর আছে। লোকজন সেটা নিজেদের চোখে দেখেছিল।
একটি বর্ণনা মতে, কাফের আবু জাহেল (যার প্রতি আল্লাহর লানত) সহ এই জাতিয় কিছু লোক এসে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) কে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করে দেখাতে বলে। নবীজি (সঃ) বললেন এটা করলে কি তোমরা ইসলাম গ্রহণ করবে? তারা সম্মতি দিলে তাদের কথা অনুযায়ী মহানবী মুহাম্মাদ মুস্তফা (সঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া করে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করে দেখান। চাদের এক অংশ থাকে কুবায়স পাহাড়ে এবং অপর অংশ থাকে কাঈকাআন পাহাড়ে। রাসুল (সাঃ) এর ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার অলৌকিক ঘটনা ঘটলে তিনি তাদেরকে ডেকে উক্ত ঘটনা দেখান।
যাদের ঈমান আনার তারা এই অলৌকিক ঘটনা দেখে ঈমান এনেছিল কিন্তু কাফেররা কুফরি করল। তারা বলেছিল মুহাম্মাদ (সঃ) একজন জাদুকর এবং তার ইশারায় চাঁদ খন্ডিত হওয়ার ঘটনাটি ছিল একটি জাদু।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “কিয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। ওরা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে যে এটা তো চিরাগত জাদু। তারা মিথ্যারোপ করছে, এবং নিজেদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করছে। প্রত্যেক কাজ যথাসময়ে লক্ষ্যস্থলে পৌছবে।
হাদিস বিশারদগণরা এই ব্যাপারে সবাই একমত যে রসূল (সঃ) এর জামানায় চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটেছিল।
ইসলামের ইতিহাসে এমন বহু অলৌকিক ঘটনা রয়েছে, যা মানব ইতিহাসের সীমাকে ছাড়িয়ে যায়, বিজ্ঞানের ধারণাকেও চ্যালেঞ্জ করে এবং মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে—এই পৃথিবীর নিয়মের বাইরেও এক মহান সত্তা আছেন, যিনি সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। “রসূল (সঃ) এর ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার অলৌকিক ঘটনা” ঠিক তেমনই এক মহাবিস্ময়কর নিদর্শন, যা পবিত্র কুরআনেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই ঘটনা ছিল মহানবুয়ত প্রমাণের জন্য কুরাইশ কাফেরদের দাবির জবাব। তারা বলেছিল—
“যদি তুমি সত্যিই আল্লাহর রাসূল হও, তাহলে আকাশের চাঁদকে দুই টুকরো করে দেখাও!”
তা ছিল এজন্য যে তারা নবুয়তের সত্যতা মানতে চাইছিল না। তারা অলৌকিক কিছু দেখতে চেয়েছিল, যেন তা বিশ্বাস করার একমাত্র কারণ বানায়। তখন মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে নির্দেশ দিলেন তাঁদের সামনে এক মহা নিদর্শন প্রদর্শন করতে।
✦ চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার প্রকৃত ঘটনা
রাতের আকাশ ছিল পরিষ্কার, চাঁদ পূর্ণিমার মতো আলো ছড়াচ্ছিল। সবাই চাঁদের দিকে তাকিয়ে ছিল। তখন রাসূল (সঃ) আঙুল দিয়ে আকাশের দিকে ইশারা করলেন। আর আশ্চর্যজনকভাবে, চাঁদ ঐ মুহূর্তে দুই টুকরো হয়ে গেল।
একটি অংশ থাকল পাহাড়ের এক পাশে, এবং অন্য অংশ থাকল পাহাড়ের অন্য পাশে। এমনভাবে বিভক্ত হয়েছিল যেন দুটি আলাদা চাঁদ আকাশে ঝুলছে।
এটা কোনো চোখের ভ্রম ছিল না, কোনো জাদু ছিল না, কোনো কল্পনাও নয়। এটি ছিল বাস্তব ঘটনা, বহু মানুষ নিজের চোখে তা প্রত্যক্ষ করেছিল। কাফেররাও তা অস্বীকার করতে পারেনি। তারা শুধু বলেছিল—
“এতো এক ভয়ংকর জাদু!”
✦ কুরআনে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার উল্লেখ
পবিত্র কুরআনের সূরা আল-কামার (সূরা চন্দ্র)-এর ১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন —
“কিয়ামত নিকটবর্তী এবং চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়েছে।”
এই কুরআনিক আয়াত আজও মানবজাতির জন্য এক জীবন্ত সাক্ষ্য বহন করে যে, চাঁদ সত্যিই দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল।
এই আয়াত প্রমাণ করে, ইসলাম শুধু বিশ্বাসের ধর্ম নয়, বরং ঐতিহাসিক সত্য ও অলৌকিক বাস্তবতার উপরে দাঁড়িয়ে আছে।
✦ কেন এই মুজিজা দেখানো হয়েছিল?
এই মুজিজা প্রকাশের পেছনে বেশ কিছু গভীর কারণ ছিল:
১. নবুয়তের সত্যতা প্রমাণ
২. কাফেরদের দাবি পূরণ
৩. আল্লাহর কুদরতের প্রকাশ
৪. কেয়ামতের পূর্বাভাস
৫. মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি
এই ঘটনা ছিল মূলত অবিশ্বাসীদের জন্য সতর্কবার্তা—যদি আজও তারা ঈমান না আনে, তবে তাদের পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।
✦ সাহাবীদের বর্ণনা
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন —
“আমরা সবাই রাসূল (সঃ) এর সাথে ছিলাম, সেই রাতে আমরা চাঁদকে পরিষ্কারভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হতে দেখেছি।”
এ ঘটনা অনেক সাহাবি প্রত্যক্ষ করেছিলেন:
– ইবনে মাসউদ (রাঃ)
– ইবনে আব্বাস (রাঃ)
– আনাস (রাঃ)
– হুযাইফা (রাঃ)
এতে এ কথা পরিষ্কার হয়, ঘটনাটি গ্রহণযোগ্য ও প্রমাণিত।
✦ বিজ্ঞান কি বলে?
আধুনিক বিজ্ঞানীরা চাঁদের গায়ে কিছু ফাটলের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছে, যা আজও বিদ্যমান। অনেক গবেষক বলেন, চাঁদের সেই দাগগুলো এক সময় বড় ভাঙনের সাক্ষ্য বহন করে।
যদিও বিজ্ঞান তা অন্যভাবে ব্যাখ্যা করতে চায়, কিন্তু একজন প্রকৃত মুসলমানের জন্য পবিত্র কুরআনের বর্ণনাই যথেষ্ট প্রমাণ।
কারণ আল্লাহর কুদরতের সামনে বিজ্ঞানও পরাজিত।
✦ চাঁদ দ্বিখণ্ডন আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
এই ঘটনা আমাদের শেখায়—
✅ আল্লাহর ক্ষমতা সীমাহীন
✅ নবী (সঃ) সত্য রাসূল
✅ কুরআন আল্লাহর বাণী
✅ কেয়ামত খুব নিকট
✅ গাফেল মানুষের চোখ খুলবে একদিন
যদি চাঁদ আল্লাহর ইশারায় দ্বিখণ্ডিত হতে পারে, তবে মানুষের অহংকার কী মূল্য রাখে?
✦ কাফেরদের পরিণতি
এই অলৌকিক ঘটনা দেখার পরও বহু মানুষ ঈমান আনেনি। বরং তারা মিথ্যা ও অহংকারের পথ বেছে নেয়। যার ফল স্বরূপ—
– তারা বদরের যুদ্ধে ধ্বংস হয়
– মক্কা বিজয়ের দিন অপমানিত হয়
– ইতিহাসে চিরকলঙ্কিত হয়
আর যারা বিশ্বাস করেছিল, তারা সাহাবি হয়ে ইসলাম প্রচারের সামনের সারিতে জায়গা করে নেয়।
✦ বর্তমান বিশ্বের জন্য বার্তা
আজকের যুগের মানুষ বিজ্ঞানের পেছনে দৌড়ায়, কিন্তু আল্লাহর নিদর্শন ভুলে যায়। চাঁদ দ্বিখণ্ডনের ঘটনাই বলে দেয়—
এই বিশ্ব মানুষের সৃষ্টি নয়,
এই মহাবিশ্ব আল্লাহর কুদরতে তৈরি।
এবং সত্য একদিন সবার সামনে প্রকাশ পাবেই।
#চাঁদ_খন্ড #নবীদের_জীবনী #মহানবী
Информация по комментариям в разработке