Скачать или смотреть ফেতনার শাস্তি || আলোচকঃ ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ মাদানী || তাকওয়া ইসলামিক মিডিয়া

ফেতনার শাস্তি || আলোচকঃ ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ মাদানী || তাকওয়া ইসলামিক মিডিয়া

মানুষ হত্যার চেয়ে বড় পাপ আর কী হতে পারে? আল্লাহতায়ালা কোরআন মজিদে বলেছেন, যে ব্যক্তি অপর কোনো মুসলমানকে হত্যা করে তার কোনো ক্ষমা নেই; তাকে চিরকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। মুসলমান বলতে সেখানে শান্তিপ্রিয় বা নিরপরাধ মানুষ বোঝানো হয়েছে; কোনো সাম্প্রদায়িক ধারণার মাধ্যমে সেখানে মুসলিম-অমুসলিম ফারাক করার সুযোগ নেই।


মানুষ হত্যা আল্লাহর দৃষ্টিতে এবং মানবসভ্যতার দৃষ্টিতে দৃশ্যত সবচেয়ে বড় পাপ। ভুলবশত কেউ নিহত হলে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের মধ্যেমে মুক্তিলাভের একটা ব্যবস্থা ইসলামে অনুমোদন করা হয়েছে। এছাড়া ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে মুক্তির কোনো ব্যবস্থা নেই।

আল্লাহতায়ালা মানব সমাজকে আরো একটি বিপর্যয় সম্পর্কে হুঁশিয়ার করেছেন। বলা হয়েছে, ফিতনা হত্যার চেয়েও মারাত্মক। ফিতনা শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হতে পারে কলহ-দ্বন্দ্ব, বিভ্রান্তি, ভুল বোঝাবুঝি বা বিপথগামিতা। ফিতনা থেকে শুরু হয় অনৈক্য; বিশৃঙ্খলা, বিবাদ, সংঘর্ষ, হত্যাকাণ্ড ও সামাজিক বিপর্যয়। ইসলামের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশেষ করে ধর্ম নিয়ে ফিতনা সৃষ্টি সম্পর্কে উম্মতকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেছেন। মহানবী (সা.) সারাজীবন তার সাহাবীদের নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে বিরুদ্ধবাদী মুশরেক কাফেরদের বিরুদ্ধে জীবনপণ লড়াই করে গেছেন। কিন্তু ধর্মের নামেও যে ফিতনা বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে-- এ সন্দেহ থেকে তিনি মুক্ত ছিলেন না। তাই তিনি পরবর্তী উম্মতকে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন এবং ফিতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করে গেছেন।

আজ মুসলিম সমাজ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। ইসলাম ধর্মের নামে চরমপন্থি জঙ্গিবাদী সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের সর্বত্র এবং বাংলাদেশের মতো সহনশীল মুসলিম সমাজের ভেতরেও সৃষ্টি হয়ে গেছে ইসলামী জঙ্গিবাদী। আসলে এরা ইসলামী জঙ্গিবাদী নয় ইসলামবিরোধী জঙ্গিবাদী। ইসলামের অনুসারী কখনো জঙ্গিবাদী হতে পারে না। জঙ্গিবাদী যে হয় সে জন্মসূত্রে মুসলমান হলেও ইসলামবিরোধী। মুসলিম সমাজের এখন কর্তব্য হবে এদের ইসলাম থেকে খারিজ করে দেখা এবং ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করা।

জঙ্গিবাদীরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এমনকি আত্মঘাতী হয়ে মানুষ হত্যা করছে। হত্যাকাণ্ড যে ঘটানো হচ্ছে, এটি এক মহাপাপ কর্ম। কিন্তু এর চেয়েও বড় পাপ কর্ম হচ্ছে এরা যে ফিতনা সৃষ্টি করছে সেটা। ধরা যাক, এরা যদি এখন মানুষ হত্যা থেকে বিরত হয়ে ফিতনা সৃষ্টির অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করে তবে বলা যাবে না যে এরা সৎপথে ফিরে এসেছে। সৎপথে ফিরে আসতে হলে ফিতনা সৃষ্টির মতবাদ থেকেই তাদের ফিরে আসতে হবে। তাদের ঘটানো হত্যাকাণ্ডগুলোই কেবল মূল সমস্যা নয়, তাদের সৃষ্টি করা ফিতনাও মূল সমস্যা।

ইসলাম থেকে বিচ্যুত ও বিপথগামী এসব জঙ্গিবাদী যেসব কথা প্রচার করে ফিতনা সৃষ্টি করছে এর প্রধানতম একটা হচ্ছে মানুষের সৃষ্ট আইন ও বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা। এটা অত্যন্ত মারাত্মক এক বিভ্রান্তি। এত বড় বিভ্রান্তি মুসলিম সমাজের ইতিহাসে এর আগে আর কখনো সৃষ্টি করা হয়নি। মানুষ নিজেদের সমাজ সভ্যতার শান্তি-শৃঙ্খলা ও কল্যাণের জন্য যে আইন সৃষ্টি করেছে সেই আইন যতক্ষণ মানুষের কল্যাণে কাজে লাগে ততক্ষণ সেটাই তো আল্লাহর আইন। মানুষ আইন তৈরি করে প্রয়োজনে বদলায় বা সংস্কার করে এবং তা করে সার্বভৌম রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল নিয়ম অনুযায়ী। আল্লাহতায়ালা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে বলেছেন। সেটা তো মানুষকেই করতে বলেছেন। মানুষ যখন তা করে তখন সেটাই আল্লাহর আইন। মানবসভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আইন-কানুন ও আদালতসহ বিচার ব্যবস্থার বিপুল উন্নতি সাধিত হয়েছে। এ উন্নতি আল্লাহ প্রদত্ত দিকনির্দেশনার অনুকূলই শুধু নয়, বরং এটাই আল্লাহর নির্দেশ। কোরআন মজিদে তৎকালীন সমাজে প্রচলিত কতিপয় অপরাধ এবং সেগুলোর জন্য প্রচলিত কয়েকটি শাস্তির বিধানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তৎকালীন মুসলিম সমাজের বিচারব্যবস্থাও কি এ কয়টি বিধানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল? তা ছিল না। আর আধুনিক উন্নত সমাজে আইন-কানুন ও বিচার ব্যবস্থার যে বিপুল উন্নতি সাধিত হয়েছে সেগুলো হয় ইসলামের মৌল দৃষ্টিভঙ্গিকে ভিত্তি করে অথবা চিরন্তন ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বিকশিত হয়েছে। আইন সব সময়ই মহান ধর্মগুলোর সারবত্তাকে ধারণ করার চেষ্টা করেছে। সমাজ সভ্যতার বাস্তব প্রয়োজনের তাগিদে আইন ও বিচার ব্যবস্থার এ বিকাশ সাধিত হয়েছে। এখন যারা বলছে এ আইন ও বিচারব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে তারা মূর্খ। মানবসভ্যতা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা এদের নেই। আর তারা যে আল্লাহর আইনের কথা বলছে, তারা জানে না আল্লাহর আইন বলতে কী বুঝায়।

ফিতনা সৃষ্টির জন্য তারা আরো যেসব ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করে এর মধ্যে আরেকটি হলো ইসলামী শাসন কায়েম। এ প্রচারণাও মারাত্মক বিভ্রান্তিকর। সাধারণ মুসলমানকে এ ধরনের প্রচারণায় বিভ্রান্ত করা সম্ভব। কিন্তু তথাকথিত এসব ইসলামী শাসনবাদীরা এতটাই মূর্খ যে তারা জানে না সমাজ সভ্যতা ও শাসন আসলে কী? ইসলাম কি সে সম্পর্কেও তাদের কোনো ধারণা নেই। এ মূর্খদের গুরুরা আফগানিস্তানে ইসলামী শাসনের নামে তালেবান শাসন কায়েম করেছিল। এর ফলে বিশ্বব্যাপী তথাকথিত ইসলামী শাসনের চেহারা কিছুটা দেখেছেন। বাংলাদেশের কিছু মানুষকে এ ধরনের ইসলামী শাসনের কথা বলে বিভ্রান্ত করা যাবে। তবে পুরো জাতিকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। তথাকথিত ইসলামী জঙ্গিবাদীদের নিয়ে বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই বিভ্রান্তির ধূম্রজাল অনেক বড় করে ফেলা হয়েছে। এখন আমাদের মনে রাখতে হবে, এ বিষয়টা ইতিমধ্যেই ঘটে যাওয়া কতিপয় সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ডের চেয়েও অনেক বড়। বিভ্রান্তি যদি আরো বাড়িয়ে তোলা হয়, ফিতনার দিকে যদি জাতিকে আরো ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে এর সুদূরপ্রসারী পরিণতি হবে অনেক বেশি মারাত্মক।

➡️ শেষ প্রজন্মের মানুষের বা ফেতনার যুগে কি ক ঘটবেএবং সময়ের সৎব্যাহার ও ধৈর্যের ফল|Abu Tawha Adnan
▶️    • Видео