Скачать или смотреть মহাত্মা ফকির লালন শাইজির ধর্ম কি ছিল |Lalon fakir |folk artist

#kustia #lalonshahbridge #lalon #lalonsong #lalonakhra
বন্ধুরা আজ আমরা এসেছি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাউল সঙ্গীত শিল্পি ফকির লালন শাহ এর আখড়ায়
ফকির লালন শাহ শুধু একজন আধ্যাতিক ফকির সাধক ছিলেন না তিনি একাধারে মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ধারণা করা হয় তিনি ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার হারিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আবার কিছু লালন গবেষক মনে করেন, তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাড়ারা গ্রামে জন্মেছিলেন। তিনি কোন ধর্মের অনুসারী বা জন্মে ছিলেন সে সম্পর্কে আজ পর্যন্ত সঠিক কোন তথ্য জানা যায়নি। তবে লালন তাঁর প্রকৃত পরিচয়কে গোপন রেখেছেন এবং বলতেন মানুষের কোনো জাত-ধর্ম নেই।
প্রবেশ পথ থেকেই মহাত্মা ফকির লালন শাহ এর সমাধি চোখে পরে, লালনের সমাধির সামনেই একটি বিশালাকার একতার তৈরি করে রাখা হয়েছে। এটা হলো লালন শাইজির সমাধি সমপ্লেক্স, তার সমাধির সামনে তার বেশ কিছু শিস্যের কবর এখানে রয়েছে, এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন জনপ্রিয় লালন সঙ্গীত শিল্পি। প্রায় ১০ বছর পূর্বে যখন লালন শাহর আখড়ায় এসেছিলাম তখন তখন মাজারের খাদেম ফকির মোহাম্মদ আলী শাহর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম, আজ তিনি এখানে নেই তবে তার ছেলে ফকির রিপন শাহর সাথে কিছু সময় কাটালাম।
ফকির লালন শাহ অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তার গান উনিশ শতকে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। মহাত্মা গান্ধীরও ২৫ বছর আগে, ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম, তাকে মহাত্মা’ উপাধি দেয়া হয়েছিল।
যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। তার গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে।
ফকির লালন শাহ ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেউরিয়ায় মৃত্যু বরণ করেন। প্রতিবছর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় “লালন মেলা” অনুষ্ঠিত হয় যেখানে দেশ-বিদেশের হাজারো বাউল-ভক্ত সমবেত হন। লালনের গানের জন্য উনিশ শতকে বাউল গান জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বাউল গান মানুষের জীবন দর্শন সম্পৃক্ত বিশেষ সুর সমৃদ্ধ। বাউলরা সাদামাটা জীবনযাপন করেন[৪০][৪১] এবং একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোই তাদের অভ্যাস।[৪২] বাংলা লোকসাহিত্যের একটি বিশেষ অংশ। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো বাউল গানকে বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে।
লালন শাহ এর সমাধীর পেছনেই রয়েছে তার স্মৃতি জাদুঘর, এখানে প্রবেশ করতে ১০ টাকার টিকিট নিতে হয় তবে র্শিশুদের জন্য প্রবেশ মূল্য দিতে হবে না। এখানে সাইজির ব্যবহৃত জিনিসপত্র দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে। এখানে ফকির লালন শাহর যৌবন ও বিভিন্ন বয়সের চিত্র অঙ্কন করে রাখা হয়েছে। ফকির লালন শাহ এর মাজারে এলেন অথচ জাদুঘরে প্রবেশ করলেন না তাহলে এখানে আসাই আপনার অনর্থক হয়ে যাবে।
মৃত্যুর দিন ভোর ৫টা পর্যন্ত তিনি গান-বাজনা করেন এবং এক সময় তার শিষ্যদের বলেন, “আমি চলিলাম”, এবং এর কিছু সময় পরই তার মৃত্যু হয়। তার নির্দেশ বা ইচ্ছা না থাকায় তার মৃত্যুর পর হিন্দু বা মুসলমান কোনো ধরনের ধর্মীয় রীতি নীতিই পালন করা হয় নি। তারই উপদেশ অনুসারে ছেউড়িয়ায় তার আখড়ার মধ্যে একটি ঘরের ভিতর তার সমাধি গড়ে তোলা হয়।

লালনের গান ও দর্শনের দ্বারা অনেক বিশ্বখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক প্রভাবিত হয়েছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ লালনের মৃত্যুর ২ বছর পর তার আখড়া বাড়িতে যান এবং লালনের দর্শনে প্রভাবিত হয়ে ১৫০টি গান রচনা করেন।[৪৮] তার বিভিন্ন বক্তৃতা ও রচনায় তিনি লালনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন।[৪৯] লালনের মানবতাবাদী দর্শনে প্রভাবিত হয়েছেন সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলাম