Скачать или смотреть মাহরাম ছাড়া নারীরা হজে যেতে পারবেন কি?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। সুপ্রিয় দর্শক শ্রোতা আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আমাদের আজকের জিজ্ঞাসা- মাহরাম ছাড়া কোনো নারী হজ্বে যেতে পারবেন কিনা? প্রশ্নটি আরেকটু বিস্তারিতভাবে পেশ করা হচ্ছে। আমরা জানি হজ্বের ব্যাপারে নারীদের ক্ষেত্রে যে মাহারাম ছাড়া নারীদের হজ্ব পালন হয় না। কিন্তু সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, সৌদি সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, দলগত ভাবে নারীরা মাহারাম ছাড়া হজ্ব করতে পারবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, মাহারাম ছাড়া কি নারীদের হজ্ব পালন হবে? মাহারাম ছাড়া নারীদের হজ্ব পালনের ব্যাপারে কুরআন এবং হাদিসে কি বলা আছে?

উত্তর

পুরুষের চেয়ে একটি শর্ত বেশি পালন সাপেক্ষে নারীর জন্য হজ ফরজ। আর তাহলো- ‘মাহরাম’। মাহরাম ছাড়া নারীর জন্য হজ পালনে বাধ্যবাধকতা নেই। চাই সে যত সম্পদশালীই হোক না কেন। তবে নারীদের হজ পালন প্রসঙ্গে ইমামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
নারীদের জন্য মাহরাম কারা? নারীর জন্য প্রথম মাহরাম হলো- স্বামী। অতঃপর যাদের সঙ্গে ইসলামি বিধান মোতাবেক দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়েজ এবং যাদের সঙ্গে বিবাহ হওয়া হারাম। ইসলামের পরিভাষায় তারাই নারীর জন্য মাহরাম। এ সব লোকদের সঙ্গে সামর্থবান নারীরা হজে গমন করতে পারবেন।

সুতরাং মাহরাম থাকলে নারীর হজে যাওয়ার জন্য স্বামী অনুমতি না দিলেও হজ আদায় করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে স্বামী অনুমতি ছাড়াই নারী হজে যেতে পারবে।

নারীদের হজ পালনে ইমামদের বক্তব্য-
চার মাজহাবের দুই মাজহাবের ইমাম অর্থাৎ ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, নারীর হজ ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো ‘মাহরাম’। মাহরাম না থাকলে সম্পদ যতই থাকুক না কেন, নারীর ওপর হজ ফরজ হবে না।’ (বাদায়িউস সানা)

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মাহরাম ছাড়া কোনো নারী কোনো পুরুষের সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ব্যতিত সফর করবে না।

এক সাহাবি বলেন, হে আল্লাহর রসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার স্ত্রী হজ করতে যাচ্ছে আর আমি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজে যাও।’ (বুখারি ও মুসলিম)
তবে চার মাজহাবের অপর দুই মাজহাবের ইমাম অর্থাৎ ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, নারীর ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য ‘মাহরাম’ শর্ত নয়। বরং নারীর হজ পালনে শর্ত হলো হজে গমনকারী নারীর দীর্ঘ সফরের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া। সফরের পথ যদি নিরাপদ হয় তবে মাহরামবিহীন একজন নারী একদল মাহরামওয়ালী নারীর সঙ্গে হজে যেতে পারবে।

হজরত আদি ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আদি! যদি তোমার জীবনকাল দীর্ঘ হয়, তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে, ইরাকের হীরা অঞ্চল থেকে একজন নারী একাকি উটের হাওদায় বসে কাবা তওয়াফ করবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ইলমে ফিকহের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হেদায়া’য় এসেছে, ‘কোনো নারী যদি মাহরাম ছাড়া হজ করে তবে ওই নারীর হজ আদায় হয়ে যাবে ...কিন্তু মাহরাম ব্যতিত হজের দীর্ঘ সফর করার কারণে ওই নারী গোনাহগার হবে।’

আবার কেউ কেউ বলেন, ‘নারীর উচিত মাহরাম পাওয়ার জন্য জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা। যদি কোনো মাহরাম না পান তবে তিনি নিজে না গিয়ে অন্যের মাধ্যমে বদলি হজের ব্যবস্থা করা। আর এটাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত।

উল্লেখ্য যে, নারীদের হজের এ শর্তাদি ওমরার বেলায়ও প্রযোজ্য।
পরিশেষে...সার্বিক নিরাপত্তার বিবেচনায় বর্তমান সময়ে হজ আদায়ে নারীর জন্য মাহরাম একান্ত আবশ্যক। মাহরাম ছাড়া কোনো নারীর পক্ষে পর্দা মেনে হজ সম্পাদন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বরং এটা অসম্ভব নয় যে মাহরাম না থাকায় নারীরা হজের সফরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও যৌন হয়রানির শিকার হবেন। এমনকি কোনো নারীর সেচ্ছায় গুনাহে জড়িয়ে পড়াও অসম্ভব নয়। তাই মাহরাম ব্যতিত কোনো নারীর জন্যই হজে যাওয়া উচিত নয়। হজের সফর দীর্ঘ দিনের হয়। এ সফর মাহরাম ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণও বটে। কথিত আধুনিকতা বা গ্লোবালাইজেশনে ঠুনকো যুক্তি দেখিয়ে নারীদের মাহরাম ছাড়া হজে যাওয়া উচিত নয়।

উত্তর দিয়েছেন:
মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা।
###