Скачать или смотреть রবীন্দ্রনাথের জীবন কাহিনী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুরো জীবন কাহিনী বর্ণনা করা হলো:
​শৈশব ও প্রারম্ভিক জীবন (১৮৬১-১৯০০)
​রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ই মে (বাংলা ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু এবং মা সারদা দেবী। পারিবারিক ঐতিহ্য ও পরিবেশের কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করেন। তাঁর শৈশবের লেখাপড়া মূলত গৃহশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানেই হয়েছিল, কারণ তিনি প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি প্রথম কবিতা লেখেন এবং এরপর থেকে তাঁর সাহিত্যচর্চা চলতে থাকে।
​১৮৭৮ সালে তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইংল্যান্ড যান, কিন্তু সেখানে তাঁর মন টিকল না। তিনি প্রথাগত পড়াশোনা ছেড়ে প্রকৃতি, সঙ্গীত ও সাহিত্যের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হন। দেশে ফিরে তিনি নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন। এ সময়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো 'সন্ধ্যাসংগীত', 'প্রভাতসংগীত' এবং 'কড়ি ও কোমল'। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সাথে তাঁর বিয়ে হয়।
​সৃষ্টিশীলতার স্বর্ণযুগ (১৯০১-১৯২০)
​১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে একটি ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। এই সময়টা তাঁর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি একদিকে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন, তেমনি তাঁর সাহিত্যপ্রতিভা নতুন মাত্রা লাভ করে। এই সময়কার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিগুলো হলো 'নৈবেদ্য', 'খেয়া', 'গীতাঞ্জলি' এবং 'গীতিমাল্য'।
​১৯১২ সালে তিনি 'গীতাঞ্জলি' কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ 'Song Offerings' প্রকাশ করেন। এই বইটি পাশ্চাত্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ১৯১৩ সালে এই কাজের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এই পুরস্কার তাঁর খ্যাতিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়। এর ফলে তিনি কেবল ভারতের নন, আন্তর্জাতিক মহলেও একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
​দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক ভাবনা (১৯২১-১৯৪০)
​নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবনা আরও গভীর হয়। তিনি সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত না থাকলেও দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনকে বিভিন্নভাবে সমর্থন করেন। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া 'নাইটহুড' উপাধি ত্যাগ করেন। তাঁর রচিত গান 'জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে' পরবর্তীতে ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এছাড়া, 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
​১৯২০ থেকে ১৯৩০-এর দশকে তিনি একাধিকবার ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। তাঁর বক্তৃতা এবং লেখার মাধ্যমে তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ঘটানোর চেষ্টা করেন। এই সময়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হলো 'বলাকা', 'পূরবী', 'মহুয়া' এবং 'শেষের কবিতা'।
​জীবনের শেষ অধ্যায় (১৯৪০-১৯৪১)
​জীবনের শেষ দিকে এসে রবীন্দ্রনাথের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। এই সময়েও তাঁর সৃষ্টিশীলতা থেমে থাকেনি। ১৯৪১ সালে তাঁর ৮০তম জন্মদিনে রচিত 'সভ্যতার সংকট' প্রবন্ধে তিনি আধুনিক সভ্যতার প্রতি তাঁর গভীর হতাশা ব্যক্ত করেন।
​১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট (বাংলা ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২শে শ্রাবণ) এই মহান কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ তাঁর জোড়াসাঁকোর বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রাঙ্কন এবং সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
​রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একজন কবি বা সাহিত্যিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ, যিনি তাঁর চিন্তা, কর্ম ও সৃষ্টির মাধ্যমে ভারত এবং সমগ্র বিশ্বে এক গভীর প্রভাব রেখে গেছেন। তাঁর কাজ আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।