ইসলামে খেলাফত ব্যবস্থা কি?
খিলাফত: একটি ইসলামী শাসনব্যবস্থা যেখানে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় । নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ, এবং রাষ্ট্রপ্রধান (খলিফা) হলেন নবী মুহাম্মদের উত্তরসূরি। বিকল্প বানানগুলির মধ্যে রয়েছে খিলাফা, খুলাফা, খলিফা এবং খলিফাত।
ইসলামী খেলাফত : একটি পর্যালোচনা
ইসলাম একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামের বিধান সকল যুগে সকল মানুষের জন্য চিরস্থায়ীভাবে চিরকল্যাণকর। মূলতঃ ইসলামের তাওহীদী মূল দর্শনের উপরেই গড়ে উঠেছে রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার মূল ভিত। মৌলিকভাবে ইসলামী খেলাফত বিশ্বমানবতাকে এক শান্তিময় সমাজ উপহার দিয়েছে। যা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। উল্লেখ্য যে, মানুষের সমাজ জীবনসহ তাদের সার্বিক জীবনকে পরিপূর্ণভাবে সুন্দর ও সুবিন্যস্ত এবং শান্তিময় করার জন্য যতগুলো সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তন্মধ্যে রাষ্ট্র হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বোচ্চ সংস্থা। আর নির্দিষ্ট ভূখন্ড, জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌমত্ব হ’ল একটি রাষ্ট্রের মূল উপাদান।
খেলাফতের পরিচয় :
‘খেলাফত’ (اَلْخِلَافَةُ) শব্দটি আরবী, যা اسم مصدر। خَلَفَ يَخْلفُ خِلَافَةً অর্থাৎ স্থলাভিষিক্ত হওয়া। বাব نصر-ينصر। মাছদার اَلْخِلَافَةُ অর্থঃ ইমারত, ইমামত, শাসন, কর্তৃত্ব প্রভৃতি। পারিভাষিক অর্থে ‘আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও আইনগত কর্তৃত্বকে স্বীকার করে নিয়ে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর মৌলিক নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে পরিগঠিত রাষ্ট্র ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনাকে ইসলামী খেলাফত বলা হয়। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ‘খেলাফত বলতে এমন রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বুঝায় যা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত’। মোটকথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ বাস্তবায়ন করার প্রতিনিধিত্বই হল খেলাফত।
পরিস্থিতি মূল্যায়ন :
আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সমস্ত বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। পৃথিবীর এক প্রান্তের খবর অন্য প্রান্তে পৌঁছানো যেন মুহূর্তের ব্যাপার। তাই নিজ দেশের পরিস্থিতিকে আর বিশ্ব পরিস্থিতি থেকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। মাত্র কয়েকদিন পূর্বে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের মানসকন্যা খ্যাত ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সূচি তথাকথিত গণতান্ত্রিক বিজয়ের জয়মাল্য পরিধান করেছেন। বুকভরা আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল লাঞ্ছিত, অবহেলিত ও বঞ্চিত আরাকানের অসহায় রোহিঙ্গা মুসলিম মানবতা। কিন্তু বিশ্বকে হতাশ ও বিমূঢ় করে ১৯৪২, ১৯৭৮ ও ১৯৯২-এর ন্যায় ২০১২ সালের ৮ই জুন সূচি’র দেশের নরপশু সদৃশ সামরিক বাহিনী কর্তৃক নিরীহ মযলুম রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর অমানুষিক নির্যাতনের ষ্টীমরোলার চালায়। ছুটে আসে তারা আশ্রয় নেওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী মুসলিম রাষ্ট্রের দিকে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীদের পদলেহী আমাদের মুসলিম নামধারী সরকার চূড়ান্ত অমানবিকতা প্রদর্শন করে তাদের এতটুকু আশ্রয় প্রদান করতে সম্মত হয়নি। বিশ্ববাসী এই অমানবিক নিপীড়নের মর্মান্তিক দৃশ্য অসহায়ের মত অশ্রুসজল নেত্রে অবলোকন করেছে। তাদের চোখে অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে যে, মানুষের তৈরী করা বিভিন্ন মতবাদ ও তন্ত্রমন্ত্রের হোতাদের নগ্ন চেহারা কত বীভৎস। তাই সারাবিশ্ব এখন উন্মুখ হয়ে চেয়ে আছে মুক্তির প্রকৃত সত্য পথের দিকে।
উন্নত রাষ্ট্র আর উন্নয়নশীল বিকাশমান রাষ্ট্রের (মুসলিম বা অমুসলিম) দিকে দৃষ্টি দিলে সহজেই বুঝা যায় যে, বিশ্ব সভ্যতার সূচনাকারী এবং বিশ্ব মানবতার সুখ-শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদানকারী ও অধিকর্তা মুসলিম জাতির অবস্থা আজ অত্যন্ত করুণ। জাতিসংঘ ও ফ্যাসিবাদী সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে নিশ্চিহ্ন ও উজাড় করে চলেছে একের পর এক মুসলিম জনপদ ও দেশসমূহকে। পারমাণবিক বোমা নামক মারণাস্ত্রের আঘাতে জর্জরিত অসহায় মানবতা অত্যাচার-নির্যাতনে নিষ্পিষ্ট ও নিগৃহীত হচ্ছে অবিরত। অন্যদিকে চরম অনৈতিকতার বিস্তার ঘটছে তাদের চালু করা আকাশ সংস্কৃতির বিভিন্ন রকমারী আয়োজনের হিংস্র থাবায়। পাশাপাশি রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল (?) রাখতে অনুসরণ করছে মস্তিষ্কপ্রসূত নানা মতবাদের। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনুসরণ করছে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি বস্ত্তবাদী মতাদর্শের। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনুসরণ করছে সূদ-ঘুষের পুঁজিবাদী অর্থনীতি। ধর্মীয় ক্ষেত্রে অনুসরণ করছে তথাকথিত মাযহাব, মতবাদ, ইযম, তরীকাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিশেষের মতাদর্শ। এছাড়া দেশের আদালতগুলিতে ইসলামী বিধান অনুযায়ী বিচার ব্যবস্থা না থাকায় মানবরচিত আইনে মুমিনকে জেল-ফাঁসি বরণ করতে হচ্ছে। ফলে আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং সামাজিক অস্থিতিশীলতা ব্যাপকতা লাভ করেছে। এভাবেই সমস্ত দুনিয়া আজ মিথ্যা, অন্যায়, অকল্যাণের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে।
ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা
মুসলিমদের সামগ্রিক জীবনে ইসলামপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামী খেলাফত বা রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। নির্ভেজাল তাওহিদ বা শিরকমুক্ত ঈমান বজায় রাখা, হালাল-হারাম উপার্জনের নিশ্চয়তা, জিনা-ধর্ষণ, হত্যারোধ, বৈষম্যমুক্ত অর্থনীতি প্রচলনসহ ফৌজদারি ও দেওয়ানি আইনের বাস্তবায়নে ইসলামী খেলাফত বিকল্পহীন একটি ব্যবস্থা। তাই এটিই ইসলামের একটি বড় ও জরুরি ফরজ। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর নির্দেশ ও ঘোষণা হচ্ছে- ১. নিশ্চয়ই পৃথিবীতে আমি খলিফা (প্রতিনিধি শাসক) পাঠাব। (সূরা বাকারা, আয়াত-৩০)
২. আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানানুযায়ী যারা বিচার করে না, তারা কাফির। যারা আল্লাহর বিধানানুযায়ী বিচারকার্য সম্পাদন করে না, তারা জালিম। যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার করে না, তারা ফাসিক। (সূরা মায়িদা, আয়াত : ৪৪-৪৫-৪৭)
৪. হে রাসূল, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, আপনি তা দিয়ে বিচার-ফায়সালা/শাসন করুন। আপনার কাছে যে সত্য এসেছে, সে ব্যাপারে ওদের মনগড়া কথাবার্তার অনুসরণ করবেন না। (সূরা মায়িদা, আয়াত-৪৯)
৮. তিনি সেই মহান সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীনসহ পাঠিয়েছেন যেন তাঁকে সব দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন। (সূরা সফ-৯)
Информация по комментариям в разработке