মুসলিম সমাজে মসজিদের
মসজিদে বৈধ কাজসমূহ :
মসজিদ আল্লাহর ঘর, যেখানে মুসলমানগণ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করেন, রামাযান মাসের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করে থাকেন। এছাড়াও কিছু কাজ রয়েছে, যা মসজিদের মত পবিত্র স্থানে করা বৈধ। যেমন-
(১) শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদান করা : মসজিদ হ’ল শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম স্থান। মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় বিষয়াবলী প্রতিদিন ইমামের কাছ থেকে শিক্ষা নিবেন এবং সে অনুযায়ী আমল করবেন। আবার ইমামগণও বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জনসাধারণকে শিক্ষা দিবেন। আবু ওয়াক্বিদ আল-লায়ছী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) একদা মসজিদে বসেছিলেন, তাঁর সাথে আরও লোকজন ছিল। এমতাবস্থায় তিনজন লোক আসল। তন্মধ্যে দু’জন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে এগিয়ে আসল এবং একজন চলে গেল। আবু ওয়াক্বিদ (রাঃ) বলেন, তাঁরা দু’জন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। অতঃপর তাদের একজন মজলিসের মধ্যে কিছুটা খালি জায়গা দেখে সেখানে বসে পড়ল এবং অপরজন তাদের পেছনে বসল। আর তৃতীয় ব্যক্তি ফিরে গেল। যখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) অবসর হ’লেন তখন (ছাহাবীদের লক্ষ্য করে) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এই তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলব না? তাদের একজন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করল, আল্লাহ তাকে আশ্রয় দিলেন। অন্যজন লজ্জাবোধ করল, তাই আল্লাহ তার ব্যাপারে লজ্জাবোধ করলেন। আর অপরজন (মজলিসে হাযির হওয়া থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিল, তাই আল্লাহ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন’।[1] 
(২) বিচার-ফায়ছালা ও শারঈ সিদ্ধান্ত বা নছীহত করা : কোন বিষয়ে মীমাংসার প্রয়োজন হ’লে অথবা কোন বিষয়ে সমাধান দিতে চাইলে মসজিদে বসেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি তা করতে পারবেন। আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মসজিদে বসা ছিলাম। ইতিমধ্যে উটে আরোহণ করে এক ব্যক্তি আসল এবং সে উটকে মসজিদের (আঙ্গিনায়) বসাল ও বাঁধলো। আর উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞেস করল, তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (ছাঃ) কে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন উপস্থিতদের মধ্যে ঠেস দিয়ে বসা ছিলেন। আমরা তাকে বললাম, এই ঠেস দিয়ে বসা ফর্সা ব্যক্তি। তখন সে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলল, হে আব্দুল মুত্তালিবের বংশজাত! তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, আমি তোমার ডাকে সাড়া দিয়েছি। তখন সে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব এবং প্রশ্নের ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করব। আপনি কিছু মনে করবেন না। তখন তিনি বললেন, তোমার যা মনে চায় প্রশ্ন কর।
তখন সে বলল, আমি আপনাকে আপনার প্রভু এবং আপনার পূর্ববর্তীদের নতুন প্রভুর নামে শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে সমস্ত মানুষের হেদায়াতের জন্য পাঠিয়েছেন? রাসূল (ছাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। সে বলল, এখন আমি আপনাকে আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে রাতে-দিনে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর সে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে বছরের এ (রামাযান) মাসে ছাওম পালন করতে নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর সে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে আমাদের বিত্তশালীদের থেকে এ যাকাত নিয়ে তা আমাদের অভাবীদের মধ্যে বণ্টন করার নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। তারপর ঐ ব্যক্তি বলল, আপনি যা নিয়ে এসেছেন, তার উপর আমি ঈমান আনলাম। আর আমি নিজ গোত্রের অবশিষ্ট লোকদের জন্য দূতরূপে এসেছি এবং আমার নাম হ’ল যিমাম ইবনু ছা‘লাবা। আমি সা‘দ ইবনু বকর গোত্রের লোক।[2]
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, সূদ সম্পর্কিত সূরা বাক্বারার আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হ’লে নবী করীম (ছাঃ) মসজিদে গিয়ে সেসব আয়াত ছাহাবীগণকে পাঠ করে শুনালেন। অতঃপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম করে দিলেন।[3] 
(৩) মসজিদে অবস্থান ও খাওয়া-দাওয়া করা : অন্যান্য বৈধ কাজের ন্যায় মসজিদে অবস্থান করা ও খাওয়া-দাওয়া করা জায়েয। আয়েশা (রাঃ) বলেন,
لَمَّا أُصِيبَ سَعْدُ بْنُ مُعَاذٍ يَوْمَ الْخَنْدَقِ رَمَاهُ رَجُلٌ فِى الأَكْحَلِ فَضَرَبَ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم خَيْمَةً فِى الْمَسْجِدِ فَيَعُوْدُهُ مِنْ قَرِيْبٍ.
‘খন্দকের যুদ্ধের দিন এক ব্যক্তির নিক্ষিপ্ত তীরে সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ) আঘাতপ্রাপ্ত হ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার জন্য মসজিদের ভেতর একটি তাঁবু টানালেন। যেন তিনি কাছ থেকে তাকে দেখতে পারেন’।[4] আর যারা ই‘তিকাফ করবে তারা মসজিদে অবস্থান করবে এবং মসজিদেই খাওয়া-দাওয়া করবে। এছাড়াও রামাযান মাসে মসজিদে ইফতারেরও ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
(৪) প্রয়োজনীয় বৈধ কথা-বার্তা বলা : যিকির-আযকার, তাসবীহ-তাহলীলসহ যে কোন বৈধ কথা-বার্তা মসজিদে বলা জায়েয। সিমাক (রহঃ) বলেন,
قلتُ لجابرِ بنِ سَمُرةَ أكُنتَ تجالسُ رسولَ اللهِ صلّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ قالَ نعَم كثيرًا فَكانَ لا يقومُ من مصلّاهُ الَّذي صلّى فيهِ الغداةَ حتّى تطلُعَ الشَّمسُ فإذا طلَعت قامَ صلّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ
                         
                    
Информация по комментариям в разработке