Скачать или смотреть একসময় ছিলো দুইশ ভবন, প্রায় দুইশ একর জমির উপর গড়ে উঠেছিল রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি/রাজবাড়ি।Zamindar house

ইতিহাস সব সময়ই মানুষের কাছে বিস্ময়ের জন্ম দেয়। পুরোনো জিনিসের মাঝে মানুষ খোঁজে নতুনত্ব। ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক স্থানের মাঝে মানুষ মূলত তার নিজের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়ায়। যুগ যুগ ধরে মানুষ তার অস্তিত্ব এবং ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতেই স্থাপনা তৈরি করেছে। সভ্যতার শুরু থেকেই নির্মিত এসব স্থাপনার সৌন্দর্য ও অভূতপূর্ব শৈলী মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তেমনি একটি নিদর্শন হলো রায়েরকাঠি জমিদারবাড়ি।

পিরোজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে রায়েরকাঠি গ্রামে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক জমিদারবাড়ি।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে যুবরাজ সেলিম বিদ্রোহ করে বাংলায় আসেন। এরপর তিনি ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলার কিছু অংশ নিয়ে একটি পরগণা গঠন করেন এবং নিজের নামে এর নাম দেন সেলিমাবাদ।

১৬২৮ সালে সেলিমাবাদ পরগনার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পান মদনমোহন। তিনি তাঁর ছেলে শ্রীনাথের নামে কিছু জমি নেন। পরবর্তীকালে মোগল সম্রাট শ্রীনাথকে “রাজা” উপাধি দেন। ১৭৫৮ সালে রাজা শ্রীনাথ রায়ের ছেলে রুদ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী পিরোজপুরের অদূরে বসতি স্থাপন করেন। বনজঙ্গল কেটে তিনি রাজবাড়ি ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকেই এ স্থানের নামকরণ হয় রায়েরকাঠি।

তবে অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, রায়চৌধুরী বংশের ইতিহাস আরও প্রাচীন। আনুমানিক ১২০৩ সালে রত্নেশ্বর সেন এখানে আসেন। তাঁরা ছিলেন ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় এবং কান্যকুব্জ থেকে আগত। ভুঁইয়া কিংকর সেন বারো ভুঁইয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।



প্রায় ২০০ একর জমির ওপর তৈরি হয়েছিল ছোট-বড় ২০০টির মতো ভবন। এখানে ছিল ১১টি মঠ, প্রতিটি মঠেই শিবলিঙ্গ স্থাপিত ছিল। বর্তমানে শুধু একটি মঠে একটি বিশাল শিবলিঙ্গ আছে, যার ওজন প্রায় ২৫ মণ। এছাড়া এখানে ৪০-৫০টি গগনচুম্বী অট্টালিকা ছিল, যা রাজবাড়ির শোভা বৃদ্ধি করত।
বর্তমানে মন্দিরগুলোর তদারকি করছে ইসকন। আগে বছরে একবার কালীমন্দিরে মহোৎসব হতো। লোকমুখে প্রচলিত আছে, উৎসব এলেই পুকুর থেকে নিজে থেকেই রান্নার পাত্র উঠত এবং হাজারো মানুষের জন্য ভোজের আয়োজন হতো। কিন্তু একবার এক ব্যক্তি পাত্রটি গোপনে রেখে দেন, এরপর আর কখনো সেই পাত্র ওঠেনি।
রায়েরকাঠি জমিদারবাড়ির বেশিরভাগ স্থাপনা এখন ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। তবে প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো কালীমন্দির, শিবমন্দির ও রাধাগোবিন্দ মন্দির আজও টিকে আছে। বর্তমানে মন্দিরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পিরোজপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. দীপক হালদার এবং সেক্রেটারি হিসেবে আছেন গোপীনাথ দাশ। প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষে ভূমি একাদশী এবং চৈত্র মাসের শেষে শিব চতুর্দশী উপলক্ষে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষের সমাগম হয়।
জমিদার বংশধররা কোথায়?

রাজা রুদ্র নারায়ণ চৌধুরীর বংশধরদের মধ্যে বর্তমানে আছেন গৌড় রায় চৌধুরী ও গৌতম নারায়ণ চৌধুরী। রায়েরকাঠি শিব ও কালীমন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং রাজবংশের ২৯তম ও শেষ পুরুষ হলেন গৌতম নারায়ণ চৌধুরী।
কীভাবে যাবেন রায়েরকাঠি জমিদারবাড়ি

ঢাকা বা অন্য যেকোনো স্থান থেকে সড়কপথে বাসযোগে পিরোজপুর পৌঁছানো যায়। পিরোজপুর শহর থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় করে সহজেই যাওয়া যায় রায়েরকাঠি জমিদারবাড়ি।
নৌপথে যেতে চাইলে সদরঘাট থেকে লঞ্চে পিরোজপুর আসতে হবে। হুলারহাট ঘাট থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় রায়েরকাঠি যাওয়া যায়।
শেষকথা
ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। অবহেলা নয়, যত্নের মাধ্যমে এই নিদর্শনগুলোকেই ধরে রাখতে হবে। কারণ ইতিহাসকেই ঘিরে মানুষের অস্তিত্ব টিকে আছে।