© নীলফামারীর মানুষ তথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডাঃ মোঃ আবুল কালাম আজাদ গত ২০১৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদে ছিলেন। সেই মহাপরিচালক পদের মেয়াদ শেষ হয় গত ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর তিনি সরকারের কাছ থেকে আরো দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। এই বছর তথা ২০২১ এর এপ্রিলে তার সেই বাড়তি মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মহাপরিচালক হওয়ার আগে বেশ কয়েক বছর তিনি অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তার আগে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) ও রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ছিলেন।
© বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডাঃ মোঃ আবুল কালাম আজাদ বিশ্ব পরিস্থিতি এবং অভিজ্ঞতা বিচারে বিশ্ব ও বাংলাদেশের করোনা ভাইরাসের আলোকে গত বছরের জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে বলেছিলেন, "করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হবে না। এটি দুই থেকে তিন বছর ধরে চলতে পারে। যদিও সংক্রমণের মাত্রা একই হারে নাও থাকতে পারে।"
ডা. আজাদ আরো বলেন, "টেস্ট বাড়ালে মৃদু ও সুপ্ত করোনা ভাইরাস বের হয়ে আসবে, সেক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা যে কমেছে সেটা বোঝা যাবে না।"
সেসময় ডাঃ আজাদের বলা এই মন্তব্যকে "দায়িত্বজ্ঞানহীন" বলে মন্তব্য করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তথা সড়ক ও সেতুমন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের সাহেব।
© আবার অনিয়মের অভিযোগে যখন রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছিলেন যে, অধিদফতরের আমন্ত্রণেই নাকি তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তখন তার জবাবে মহাপরিচালক দাবি করেছিলেন যে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তারা চুক্তিটি করেছিলেন।
এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের দ্বন্দ্ব যখন সামনে চলে আসে, তখন মন্ত্রণালয় নিজেদের দোষ ঘাড়ে নিতে চাচ্ছে না বলেই উল্টো ডাঃ আজাদ নিজেই বাধ্য হয়েই পদত্যাগ করলেন। যদিও ডাঃ আজাদের চলে যাওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে আগে থেকেই নিশ্চিত হয়েই ছিল।
কারন, অপসারিত হওয়ার চেয়ে পদত্যাগ সম্মানজনক। তাই তিনি সেই কাজটিই করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ডাঃ আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগের সুযোগটাই বেছে নিলেন।
*************************************
প্রশ্নঃ১- দেশবাসীর কাছে আমার প্রশ্ন - পদাধিকার বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বড়, নাকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বড়? হয়তো সবাই বলবেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বড়। তাহলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ের চেয়ে পদে ছোট হওয়া সত্বেও কিভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান করতে পারে? জবাব আপনাদের কাছেই থাক!!
প্রশ্নঃ২- ডাঃ আবুল কালাম আজাদের ভাষায় এক, দুই, তিন মাসের কথা না বলে বরং এক, দুই, তিন বছরেও করোনা শেষ হবে না এই বাস্তব সত্যিটা বলেছিল বলেই কি এটাই ওনার দোষ ছিল?
© কই, করোনা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর তো চলেই গেল, আপনি স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালিকই হোন, কিংবা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদেরই হোন, কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক ডাঃ আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমই হোন না কেন, আপনারা কি করোনাকে এই দেড় বছরেও বিলুপ্ত করতে পেরেছেন? যদি তা এতদিনেও বিলুপ্ত করতে নাই পারেন, তাহলে আপনারা সবাই মিলে কেন সেসময় ডাঃ আবুল কালাম আজাদের বলা বাস্তব সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে বাধ্য করিয়েছেন ওনাকে পদত্যাগ করাতে?
জানি, ডাঃ আজাদের মধ্যে মনুষত্ববোধ, মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত আছে বলেই তিনি চক্ষুলজ্জা থেকেই আপনাদের দেয়া মিথ্যা অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজেই পদত্যাগ নিয়েছেন। কিন্তু আপনারা আজ পর্যন্ত না পারলেন বাংলাদেশকে একেবারে করোনা মুক্ত করাতে, না পারলেন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পদত্যাগ করানো ডাঃ আজাদের কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে, না পারলেন নিজেদের ভুলের মাসুলস্বরুপ নিজেরাও পদত্যাগ করতে, না পারলেন এমন মিথ্যে কেলেঙ্কারি তৈরির জন্য দেশবাসীর কাছেও ক্ষমা চাইতে।। আসলে আপনারা শক্তিশালী করোনার বাস্তবতার চেয়ে নিজের পদের আসনের শক্তিটাকেই বড় করে দেখেন। কিন্তু দেখেন, ডাঃ আজাদ কিন্তু পদের চেয়ে নিজের মানসম্মানটাই বড় মনে করে বাধ্য হয়েই পদত্যাগের মাধ্যমে নতি স্বীকার করেছিলেন। পদ পেলে মানুষের মনুষ্যত্ববোধ যে কতটা নিচে চলে যায়, তা আপনাদেরই তৈরি "সত্যের পেটে লাথি মারা"র কর্মকান্ডগুলো না দেখলে বুঝতে পারতাম না।
অথচ দেখেন, আমাদের উত্তরবঙ্গের নীলফামারী জেলার নির্ভেজাল, সৎ ও খাঁটি মনের মানুষ তথা ডাঃ মোঃ আবুল কালাম আজাদ সেসময় সারা বিশ্ব ও বাংলাদেশের করোনার বাস্তবতার আলোকে ঘটিত সত্যি কথাটা দেশবাসীর সামনে বলার সাহস দেখিয়েছেন! যা আপনাদের চাপা মিথ্যার কাছে ওনার বলা সত্য কথা শেষ পর্যন্ত ওনার পরিচালকের পদে থাকা কাল হয়ে গেছিল। আর শাস্তিস্বরুপ আপনারা ওনাকে বাধ্য করিয়েছেন পদত্যাগ করাতে। তবুও তিনি নিরাশ হননি!
কিন্তু দেখেছেন তো, সত্য কখনো চাপা থাকে না? ডাঃ আবুল কালাম আজাদের বলা সত্য কথার জন্য তিনি নিজে পদত্যাগ করেও দেশবাসীর কাছে কখনো পরাজিত হয়ে যাননি, বরং আপনারাই আপনাদের মিথ্যের কাছে উল্টো নিজেদের নাক কেটে ডাঃ আজাদের পাশাপাশি পুরো দেশবাসীর কাছে পরাজিত হয়ে আছেন।
অতএব, আসুন আমরা সবাই মিলে সত্যকে সত্য বলতে, আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে শিখি। কারন, মিথ্যা দিয়ে কখনোই কোন সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না। যেমন পারেননি কেউ ডাঃ আজাদের বলা সত্যকে ঢেকে রাখতে। কাজেই, এই ঘটনা থেকে আপনাদের আমাদের সবাইকেই শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
#মোঃ আখতারুজ্জামান (লাবু)
অবস্থানঃ নীলফামারী
Информация по комментариям в разработке