Скачать или смотреть ধ্বংসের মুখে তিনশো বছরের সুপ্রাচীন বিষ্ণু মন্দির, বীরনগর, নদীয়া | Vishnu Temple, Birnagar, Nadia

ধ্বংসের মুখে তিনশো বছরের সুপ্রাচীন বিষ্ণু মন্দির, বীরনগর, নদীয়া

নদীয়া জেলার অন্যতম প্রাচীন ও সমৃদ্ধশালী একটি জনপদ হল উলা বা বীরনগর। একদা এই গ্রামটি ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী ছিল। গঙ্গার প্রাচীন খাত এখনও বীরনগরের অদূরে দেখা যায়। সুপ্রাচীন জনপদ হবার সুবাদে এখানে রয়েছে বেশ কিছু আকর্ষনীয় পুরাকীর্তির নিদর্শন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু প্রাচীন মন্দির, দোলমঞ্চ, সুবৃহৎ অট্টালিকা ইত্যাদি।

বীরনগরের প্রখ্যাত মিত্র-মুস্তাফি বাড়ির কাছে একটি পূর্বমুখী, ভগ্ন ও পরিত্যক্ত আটচালা বিষ্ণু মন্দির দেখা যায়। আগাছায় পরিপূর্ণ মন্দিরটির সামনের বারান্দা ও ছাদসহ ওপরের অংশ সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। প্রায় ৩৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মন্দিরটির সামনে তিনটি খিলান যুক্ত একটি অলিন্দ ছিল, যদিও বর্তমানে সেই অলিন্দের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। গর্ভগৃহের প্রবেশপথের দুপাশে টেরাকোটার সুদৃশ্য ফুলকারি নকশা ও জ্যামিতিক নকশা দেখা যায়। প্রবেশপথের ওপরে বেশ কয়েকটি ফাঁকা কুলুঙ্গি দেখা যায়, যেখান থেকে টেরাকোটা ফলকগুলি খুলে নেওয়া হয়েছে। মন্দিরের দক্ষিন দিকের দেওয়ালে অনেকগুলি পোড়ামাটির সুদৃশ্য পদ্মফুল আজও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।

মন্দিরটিতে একটি প্রতিষ্ঠা ফলক ছিল, যেখানে উল্লেখ ছিল:
"শুভমস্তু শকাব্দাঙ্কেভূমিবিন্দু মহীপতৌ।
শ্রী কাশীশ্বর মিত্রেন বিষ্ণুবেযৎ সমর্পিতম।।"
অর্থাৎ,
শ্রী কাশীশ্বর মিত্র ১৬০১ শকাব্দে (১৬৭৯ খ্রীষ্টাব্দে) এই মন্দিরটি নির্মাণ করে, ভগবান শ্রী বিষ্ণুর চরণে সমর্পন করলেন।

এই কাশীশ্বর মিত্র ছিলেন বীরনগরের প্রখ্যাত মিত্র মুস্তাফি বংশের প্রতিষ্ঠাতা রামেশ্বর মিত্রের কাকা। বীরনগরের প্রতিষ্ঠা ফলক যুক্ত মন্দিরগুলির মধ্যে এই বিষ্ণু মন্দিরটি সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। আমাদের নিদারুণ অবহেলায় মন্দিরটি এই মুহুর্তে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে। এই অপূর্ব পুরাকীর্তির নিদর্শনটি সংরক্ষণের জন্য কোনো উদ্যোগ কখনও নেওয়া হয়নি। অত্যন্ত দুঃখজনক, যে আমরা হারিয়ে ফেলতে বসেছি নদীয়া জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য এই সুপ্রাচীন বিষ্ণু মন্দিরটি। মন্দিরটি বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে তাতে এটা নিশ্চিত যে আর বড়জোর এক থেকে দুই বছরের মধ্যে মন্দিরটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হবে। যদিও তাতে কারও কিছু যাবে আসবে না, সভ্যতা তার আপন গতিতে চলতে থাকবে, শুধুমাত্র একে একে হারিয়ে যাবে আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী এই অপূর্ব পুরাকীর্তির নিদর্শনগুলি। অবশেষে আসবে এমন একটি সময়, যখন আমাদের আর গর্ব করবার মতো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।

এরকম আরও অনেক অজ্ঞাত মন্দির সম্পর্কে জানতে Temples with Atanu পেজটি লাইক করে সঙ্গে থাকুন।

© 2020 Atanu Das / [email protected]