Скачать или смотреть Mysterious Kholpetua river ।। রহস্যভরা খোলপেটুয়া নদী

রহস্যভরা খোলপেটুয়া নদী
চিরন্তন সেই সুর:‘নদীর এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা/সকাল বেলার আমীর রে ভাই, ফকির সন্ধ্যা বেলায়...’ এমন অসংখ্য মানুষের জীবনের উত্থান পতনের গল্প নিয়ে বয়ে চলেছে হাজারও নদী। তেমনি একটি নদী খোলপেটুয়া।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের বড় নদীগুলোর এটি একটি। গঙ্গার স্রোতধারাই পদ্মা হয়ে বয়ে গেছে এই নদীতে।

পদ্মপুকুর থেকে যে খোলপেটুয়া দক্ষিণ-পূর্বে গেছে সেথানে ইংরেজি ওয়াই আকৃতি নিয়েছে। নীলডুমুরের পূর্ব পাড়ে দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা আর দক্ষিণেই শুরু সুন্দরবন।
এই নদীর বুক চিরে রয়েছে হাজারও রহস্য। এই জনপদের যেমন জীবিকার সন্ধান দিয়েছে তেমনি কেড়ে নিয়েছে মানুষের শেষ সম্বলটুকুও।

বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যে যেমন বিধ্বংসী হয়ে ওঠে খোলপেটুয়া। আর এই বিধ্বংসী চেহারাকে অনেকটাই প্রতিরোধ করে সুন্দরবন। দক্ষিণ থেকে আসা ঝড়কে আর উত্তরে যেতে দেয় না।

তবুও আইলা, সিডর, আম্পানের মত দৈত্যের হানায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে এই জনপদ। মানুষ গাছের আগায় উঠেও পরিত্রাণ পায়নি। সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। দক্ষিণ উপকূল দুমড়ে মুচড়ে করেছে বিদ্ধস্ত। যার ফলে আইলার ১১ বছরেও মাথা তুলে দাঁড়ানো পরের কথা, পিঠ সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি এই অঞ্চলের মানুষ।

খোলপেটুয়া এই অঞ্চলের মানুষকে দিয়েছে জীবিকা। এই নদীতে প্রায় সারা বছরই মাছ ধরে দ্বীপের মানুষ। নদীর মোহনায় ধরা পড়ে প্রচুর মাছের পোনা। যা পরবর্তীতে চাষের জন্যে বিক্রি হয়। এই নদীতে সারা বছর ধরেই কাঁকড়া পাওয়া যায়। সুন্দরবন ঘেঁসে জাল ফেললে মাছও অনেক।

শীতে খোলপেটুয়া দেখায় এক শান্ত রূপ। উত্তরের বাতাসে পানিও যেন নড়তে চায়না শীতের ভয়ে। সকালে কুয়াশাকে ঠেলে রোদ ছড়াতে অনেক সময় নেয় সূর্য। সেই আলো অবশ্য খুব বেশি তাপ ছোড়ে না। নদীর ওপরের কুয়াশার সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে থাকে সূর্য। খোলপেটুয়ার বাঁকে বাঁকে সূর্যের রুপ পরিবর্তন হতে থাকে। যত বেলা গড়াতে থাকে তত পরিষ্কার হতে থাকে চারিপাশ। সেখানে সকালের শুভ্রতা থাকে। সকালের রোদকে আলিঙ্গন করে খোলপেটুয়া।

সুন্দরবনের পাড় ধরে খোলপেটুয়ার বাঁক ধরে ঘুরতে থাকলে হরিণের দৌড়, লাফ দিয়ে গাছের পাতায় মুখ দেয়া, বানরের বাঁদরামি আনে চঞ্চল ভাব।

এক সময় এই নদীর সুবিশাল বুক জুড়ে ছিল নৌকার অবাধ বিচরণ। স্থানে স্থানে নদীর থৈ থৈ রূপালি পানির ধারে ছিলো খেয়া পারাপারের মুখরতা। ঘাটে ঘাটে সারাক্ষণ ছিল বৈঠা ও পানির শব্দ। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। যান্ত্রিক সভ্যতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা ও নদী। ফুরিয়ে গেছে মাঝিদের সোনালি দিন।

তবুও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় হয় খেয়া পারাপার। নৌকা এসে ভেড়ে, আবার ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। ব্যস্ত হয়ে ওঠে নদী। শীতে খুব বেশি ঢেউয়ের শব্দ শোনা যায় না। কিন্তু বর্ষায় নদী পার হতে বুকের ভেতর দুরু দুরু করে।

ঘোলা পানি যেন অদৃশ্য করে নিতে চায় সব। তবুও উৎসব মুখর হয়ে এই নদীকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকে এই জনপদ। এরকম হাজারও মানুষের জীবনে অনেক গল্প এই নদীর বুক চিরে বয়ে চলছে।