মৌসুমি ফল কদবেলের পুষ্টিগুণ :
প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলের মধ্যে ১৩৪ ক্যালরি শক্তি, সাত গ্রাম প্রোটিন, চার গ্রাম ফ্যাট, দুই গ্রাম খনিজ, পাঁচ গ্রাম ফাইবার, ১৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১১০ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে।
কদবেলে রয়েছে ফাইটোকনস্টিটিউয়েন্ট মারমেনল, মারমিন, মারমেলোসিন, মারমেলাইড, সোরালেন, অ্যালোইম্পেরেটোরিন, রুটারেটিন, স্কোপোলেটিন, এজেলিন, মারমেলিন, ফ্যাগারিন, লিমোনিন, এ-ফেল্যান্ডরিন, বেটুলিনিক অ্যাসিড এবং অ্যানহাইড্রোমারমেলিন।
এছাড়াও ট্যানিন, রিবোফ্লাভিন এবং অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড এবং ম্যালিক অ্যাসিডের মত বিভিন্ন জৈব অ্যাসিডে ভরপুর কদবেল।
কদবেলের উপকারিতা :
ডায়রিয়া প্রতিরোধ এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি
কদবেলে ডায়রিয়া প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ই কোলাই এবং শিগেলা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট পাকস্থলীর সংক্রমণ বন্ধ করতে পারে। কদবেলের অপরিপক্ক ফল অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করা বন্ধ করতে পারে। আয়ুর্বেদ এবং লোকজ ওষুধ বহু শতাব্দী ধরে ডায়রিয়ার জন্য কদবেল ব্যবহার করে আসছে। এর ভেতরের রাসায়নিক উপাদান রাইবোফ্লাভিন এবং থায়ামিন শরীরকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এর রস কিডনির রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং অন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
বদহজমের প্রাকৃতিক ঔষধ
উচ্চ ফাইবার সামগ্রী এবং রেচক গুণের কারণে কদবেল কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজমের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা হিসেবে সহায়ক।
ছত্রাক, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বিরোধী
কদবেলে এমন যৌগ রয়েছে যা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাসিলাস সাবটিলিস, স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস, ই. কোলাই এবং সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসার মতো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর। এছাড়াও মেনিনজাইটিস, হেমোরেজিক কনজাংটিভাইটিস, মায়োকার্ডাইটিস এবং এনসেফালাইটিস রোগগুলোর জন্য দায়ী কক্সস্যাকি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কদবেলের অ্যান্টি-ভাইরাল কার্যকারিতা রয়েছে।
হাঁপানির বিরুদ্ধে কার্যকারিতা
হাঁপানির উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য কদবেল পাতার নির্যাসের আয়ুর্বেদিক ব্যবহার আছে। উদ্ভিদের অ্যালকোহলযুক্ত নির্যাসটিতে অ্যান্টিহিস্টামাইন কার্যকলাপ রয়েছে, যা অ্যালার্জির ট্রিগারের কারণে অ্যাজমার উপসর্গগুলোকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। এটি ফুসফুসের হিস্টামিন প্ররোচিত সংকোচন উপশম করতে সাহায্য করে।
মধুর সঙ্গে ৮ থেকে ১৬ গ্রাম তাজা কদবেল পাতার নির্যাস হাঁপানির বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর। কারণ কদবেল ফলের পাতায় থাকে অ্যালকালয়েড এবং এজেলিন দায়ী।
ক্যান্সার থেকে প্রতিরক্ষা
কদবেলের নির্যাস স্তন ক্যান্সার সৃষ্টিকারি কোষের বিস্তার বন্ধ করতে পারে। লুপেওল, ইউজেনল, সিট্রাল, সিনেওল এবং ডি-লিমোনিনের মত ফাইটোকেমিক্যালগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধের মতো কাজ করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
কদবেল ফল উচ্চ কোলেস্টেরল পরিচালনায় সহায়ক হতে পারে। এর পাতার গুঁড়া অপরিশোধিত ফাইবারের একটি সমৃদ্ধ উৎস। জলীয় নির্যাসে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যালকালয়েড এবং ফেনোলিক্স মানবদেহে লিপিড-হ্রাসকারী প্রভাবের জন্য দায়ী। তাই এই ফলের রস দেহের জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হতে পারে।
আলসার নিরাময়
কদবেল পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হতে পারে, কারণ এতে আলসার নিরাময়ে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কদবেলে ট্যানিক এবং ফেনোলিক উপাদান রয়েছে, যা মুলত উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর তাই পাইলস এবং আলসারের চিকিৎসায় এটি সহায়ক হতে পারে।
কিডনির স্বাস্থ্য এবং রক্তচাপের জন্য ভালো
কদবেল একটি মূত্রবর্ধক, যা কিডনিকে সাহায্য করে প্রস্রাবের আকারে শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম অপসারণ করতে। ফলে রক্তচাপ কমে যেয়ে রক্ত শিরা এবং ধমনী থেকে চাপ কমে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
শরীরে কার্বোহাইড্রেটের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে কদবেল ডায়াবেটিসের অগ্রগতি ধীর করে দেয়। এই সময় এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর চিনির বৃদ্ধি প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কদবেলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য
অতিরিক্ত কদবেল খাওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য পাচন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং ডায়রিয়ার লক্ষণগুলো পরিচালনার জন্য এই ফল খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া
রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর সম্ভাবনা থাকায় কদবেল একটি উপকারি ফল। কিন্তু এর অত্যধিক ব্যবহার রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমিয়ে দেয়। এতে মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি এবং চেতনা শূন্যতা অনুভূত হতে পারে। এই ধরনের হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
এলার্জি প্রতিক্রিয়া
এই মৌসুমি ফলে বেশ কিছু ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান রয়েছে, যা কখনো কখনো অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বমি বমি ভাব, বমি, পেট খারাপ, শ্বাসকষ্ট, ত্বকে ফুসকুড়ির মতো আরও গুরুতর লক্ষণের মাধ্যমে এই প্রতিক্রিয়াগুলো প্রকাশ হতে পারে।
কাদের জন্য কদবেল খাওয়া উচিত নয়
ফল খাওয়া ভালো কিন্তু অতিরিক্ত ফল খাওয়া বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে। তাই অন্যান্য ফলের মতো এই ফলের বেলায়ও বিশেষজ্ঞগণ ভারসাম্য বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
থাইরয়েড সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের এই ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়া গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদেরও এই ফল পরিত্যাগ করা উচিত। দীর্ঘ সময় ধরে কদবেল খেলে এতে থাকা ট্যানিন অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দ্রুত গর্ভপাতের দিকে ধাবিত করতে পারে।
যারা বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এই ফলটি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। বেশি পরিমাণে এই ফল খাওয়ার ফলে গ্যাস, ফোলাভাব এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর ফলে পরিপাকতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
#কদবেল
#Kadbel
#স্বাস্থ্যকথা
#health
আমাদের ফেসবুক পেজ লিংক : / dreambanglanew
Информация по комментариям в разработке