এক মাসে মুক্তি পেলেন সুইডেন আসলামসহ ৬ শীর্ষ সন্ত্রাসী! | সুইডেন আসলাম | কাশিমপুর কারাগার | bnanews24

Описание к видео এক মাসে মুক্তি পেলেন সুইডেন আসলামসহ ৬ শীর্ষ সন্ত্রাসী! | সুইডেন আসলাম | কাশিমপুর কারাগার | bnanews24

৫ ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর পরই দেশের প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি জেল থেকে একে একে জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। এদের প্রায় সবাই কমপক্ষে ২২ বছর ধরে কারাবন্দী ছিলেন। খুন, চাঁদাবাজি, ভাংচুর ও দখলবাজির অভিযোগে এদের প্রায় সবারই বিরুদ্ধে ৭ টি থেকে ১৫ টি মামলা রয়েছে। সব কটি মামলায় জামিন পাওয়ার পর একে একে তারা কারাগার থেকে মুক্তি পায়। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন রাজধানীর পূর্ব রাজা বাজার এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম।

১৯৯৭ সালে সুইডেন আসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন এই সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ২২ টি মামলা ছিল। এর মধ্যে তেজগাঁও এলাকায় গালিব হত্যাসহ ৯ টি হত্যা মামলা রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে কাশিমপুর কারাগারে বন্দি থাকা সুইডেন আসলামকে মঙ্গলবার রাতেই মুক্তি দেওয়া হয়।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আরও ৫ জন গত এক মাসে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এরা হলেন সানজিদুল ইসলাম ইমন ওরফে কলাবাগান ইমন, আব্বাস, টিটন, পিচ্চি হেলাল, ফ্রিডম রাসু। গত ১৪ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ইমন মুক্তি পান। একই সময়ে ইমনের প্রধান সহযোগী মামুনও জামিনে মুক্তি পান। এর আগে ১২ আগস্ট একই কারাগার থেকে মুক্তি পান ফ্রিডম রাসু ও পিচ্চি হেলাল। রাসুর বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাসহ ১৩ টি মামলা রয়েছে। ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসী তালিকা প্রকাশের আগেই পিচ্চি হেলাল মোহাম্মদপুর থেকে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ ৮ টি মামলা রয়েছে।

নামের আগে 'সুইডেন' শব্দটি বসার কারণ হিসেবে জানা যায়, আসলামের প্রথম স্ত্রী ইতি ছিলেন সুইডেনপ্রবাসী। বিয়ের পর আসলামও সুইডেনে গিয়ে কয়েক বছর ছিলেন। সেই সূত্রে 'সুইডেন' শব্দটি তার নামের আগে জুড়ে যায়। একসময় ইতির সঙ্গে তার ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়।

আসলাম ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ছাতিয়ার এলাকার মৃত শেখ জিন্নাত আলীর ছেলে। পরিবারসহ তারা থাকতেন ঢাকার ইন্দিরা রোডে। তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুল (বর্তমানে তেজগাঁও সরকারি বিদ্যালয়) থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে আসলামের উত্থান। শুরুতে রাজাবাজার ও ইন্দিরা রোড এলাকায় ছিল তার আধিপত্য। ১৯৮৭ সালে পূর্ব রাজাবাজারে নাজনীন স্কুলের ভেতরে মায়ের সামনে কিশোর শাকিলকে খুন করার অভিযোগে ব্যাপক আলোচনায় আসেন আসলাম।

সেই সময় কারওয়ান বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকার অপরাধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করত জাতীয় তরুণ পার্টির রানা গ্রুপ। সেই গ্রুপের একজন ক্যাডার ছিলেন পিচ্চি হান্নান। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ১৯৯০ সালের পর রানা গ্রুপের সঙ্গে সুইডেন আসলাম গ্রুপের দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। সেই সময় রানার ক্যাডার বাহিনী বেশ শক্তিশালী ছিল। নিয়মিতই এই দুই গ্রুপের মধ্যে হামলা পাল্টা-হামলার ঘটনা ঘটত। তাদের হামলা পাল্টা-হামলার মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলিতে অনেকেই হতাহত হয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালে রানা গ্রুপের অন্যতম ক্যাডার পিচ্চি হান্নানকে নিজদলে নেন আসলাম। পরে একই বছর হান্নানকে দিয়ে আসলাম কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ের সুপারস্টার হোটেলের সামনে রানাকে খুন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার পরই কারওয়ান বাজার, তেজতুরি বাজারসহ তেজগাঁও ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলসহ শেরেবাংলা নগর এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন আসলাম। এর মধ্যে আসলাম কারওয়ান বাজার, তেজতুরি বাজারের নিয়ন্ত্রণ দেন হান্নানের হাতে। ওইসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ হান্নানের কাছে থাকলেও কার্যক্রম চলত আসলামের নামেই।

যুবলীগ নেতা গালিবকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালের ২৬ মে গ্রেপ্তার হন সুইডেন আসলাম। এরপর জেল থেকেই তিনি অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেই কাজে মূল ভূমিকায় ছিল ঘনিষ্ঠ সহযোগী পিচ্চি হান্নান।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারের পর জেল থেকেই হান্নানের মাধ্যমে অপরাধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন আসলাম। জেলখানার ভেতরেও তিনি একাধিকবার মারামারি করে আলোচিত হন। কারাগারে তার সেল থেকে দুটি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়। এসব ফোন দিয়ে তিনি কারাগারের বাহিরে থাকা সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এমনকি যারা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন, তাদেরসহ মামলার সাক্ষীদের হুমকিও দিতেন। এসব কারণে নানা সময়ে কয়েকবার তার কারাগার পরিবর্তনও করা হয়।

পরবর্তীতে ২০০০ সালের পর পিচ্চি হান্নানের নামও চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যে হান্নান নিজেই শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তোলে। এরপর তিনি সুইডেন আসলামের নাম বাদ দিয়ে নিজের আধিপত্য বাড়াতে থাকেন। এক পর্যায়ে হান্নান নিজের নামে সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে শুরু করেন।

আসলামের ঘনিষ্ঠদের কেউ কেউ এমনও বলেন যে, চাইলে ২০১০ সালের পর তিনি কারাগার থেকে বের হতে পারতেন। কিন্তু 'ক্রসফায়ারের' ভয়ে তিনি সেভাবে জামিনের চেষ্টাও করেননি।

বিভিন্ন সময়ে সুইডেন আসলামের নামে ২২টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে নয়টিই হত্যা মামলা বলে জানা গেছে। অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরসহ কয়েকটি মামলায় সাজাও হয়েছিল তার।

দীর্ঘ ২৭ বছর পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ৬২ বছর বয়সী শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম। গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।

শামীমা চৌধুরী শাম্মী
বিএনএ নিউজ টুয়েন্টিফোর

Комментарии

Информация по комментариям в разработке