Скачать или смотреть কৃষিকাজ, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন

নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বলতে বোঝায় এমন পদ্ধতি বা কৌশল অবলম্বন করা, যার মাধ্যমে উৎপাদনের শুরু থেকে ভোক্তার টেবিল পর্যন্ত খাদ্যকে ক্ষতিকর রাসায়নিক (যেমন: অতিরিক্ত কীটনাশক, সার), ভারী ধাতু (heavy metal) এবং রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব (যেমন: ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস) থেকে মুক্ত রাখা যায়।
বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (BFSA) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
🛡️ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের মূলনীতি (Good Practices)
নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের ভিত্তি হলো উত্তম কৃষি চর্চা (Good Agricultural Practices - GAP), উত্তম মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ চর্চা এবং উত্তম উৎপাদন প্রক্রিয়া (Good Manufacturing Practices - GMP) অনুসরণ করা। নিচে প্রধান দিকগুলো তুলে ধরা হলো:
| পর্যায় | প্রধান করণীয় |
|---|---|
| ১. কৃষি/প্রাথমিক উৎপাদন | উত্তম কৃষি চর্চা (GAP) নিশ্চিত করা। |
| ২. প্রক্রিয়াকরণ ও মোড়কজাতকরণ | উত্তম উৎপাদন প্রক্রিয়া (GMP) অনুসরণ করা। |
| ৩. সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিতরণ | উত্তম স্বাস্থ্যবিধি চর্চা (GHP) বজায় রাখা। |
১. প্রাথমিক উৎপাদনে নিরাপদ কৌশল
খাদ্য ফসল, মাছ বা পশুপালনের শুরুতেই নিম্নলিখিত বিষয়গুলিতে মনোযোগ দিতে হবে:
জমির সঠিক নির্বাচন: দূষণমুক্ত জমি, বিশেষ করে শিল্প-কারখানার বর্জ্য বা দূষিত জলের কাছাকাছি স্থান এড়িয়ে চলা।
সঠিক সার ব্যবহার: শুধুমাত্র পরিমিত মাত্রায় ও অনুমোদিত সার ব্যবহার করা। জৈব সার ব্যবহারকে উৎসাহিত করা।
কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার:
অনুমোদিত ও কম বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা।
ফসলের 'ফসল-তোলার পূর্বে অপেক্ষমাণ সময়' (Pre-harvest Interval - PHI) কঠোরভাবে মেনে চলা। অর্থাৎ, কীটনাশক প্রয়োগের পর নির্দিষ্ট সময় পার না হওয়া পর্যন্ত ফসল তোলা যাবে না।
পানির নিরাপত্তা: সেচ, ধোয়া বা পরিষ্কারের জন্য নিরাপদ ও দূষণমুক্ত জল ব্যবহার করা।
উত্তম মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ চর্চা: মাছের খাবারে ও পশুর খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ও গ্রোথ প্রোমোটারের (Growth Promoter) অপব্যবহার বন্ধ করা।
২. প্রক্রিয়াকরণ ও মোড়কজাতকরণে সতর্কতা
উৎপাদিত খাদ্যকে প্রস্তুত ও মোড়কজাত করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করা:
স্বাস্থ্যকর পরিবেশ: খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার যন্ত্রপাতি, মেঝে, দেয়াল সব সময় পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা।
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি: খাদ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা (পরিষ্কার পোশাক, টুপি, মাস্ক, হাত ধোয়া) কঠোরভাবে নিশ্চিত করা।
অনুমোদিত উপকরণ: শুধুমাত্র অনুমোদিত খাদ্য সংযোজন দ্রব্য (Food Additive), রং ও প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা।
সঠিক মোড়কীকরণ: খাদ্যবস্তু সঠিক তাপমাত্রায় এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন মোড়কে প্যাকেটজাত করা।
৩. সংরক্ষণ ও বিতরণে নিরাপত্তা
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা (যেমন: মাংস, মাছ বা দুগ্ধজাতীয় পণ্য ফ্রিজে রাখা)।
মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ: মোড়কে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ করা এবং তা অতিক্রান্ত হলে সেই খাদ্যদ্রব্য বাজার থেকে প্রত্যাহার করা।
পরিবহন: খাদ্য পরিবহনকালে যেন তা কোনো প্রকার দূষণ বা ক্ষতির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করা।
নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য কৃষক, খাদ্য ব্যবসায়ী, সরকার এবং ভোক্তাসহ সকলের সম্মিলিত ভূমিকা রাখা অপরিহার্য।