Скачать или смотреть বিশ্ব নবীর জীবনী, পর্ব-২ , নবীজীর মা ও দাদার মৃত্যু, সিরিয়া ভ্রমন, ফিজারের যুদ্ধ, হিলফুল ফুযূল গঠন।

বিশ্ব নবীর জীবনী, পর্ব-২, নবীজীর মা এবং দাদার মৃত্যু, সিরিয়া ভ্রমন, ফিজারের যুদ্ধ, হিলফুল ফুযূল গঠন।

প্রথম পর্বের লিংকঃ    • বিশ্ব নবীর জীবনী  

বক্ষ বিদারণ ঘটনার পর দুধ মা হালিমা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে নবীজি কে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। ছয় বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত নবীজী মায়ের আদরে সোহাগে কাটান। মা আমিনার একদিন ইচ্ছে হয় ছেলেকে নিয়ে মদীনায় যাবেন। স্বামীর কবর যিয়ারত ও সেখানকার আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করার জন্য। উদ্দেশ্য মোতাবেক শিশু নবীকে সাথে নিয়ে মা আমিনা, দাদা আব্দুল মুত্তালিব এবং দাসী উম্মে আয়মন নিয়ে কমবেশি ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদীনায় পৌছান। মদীনায় একমাস সময় অতিবাহিত করার পর মক্কায় ফেরার পথে  আরওয়া  নামক স্থানে এসে মা আমিনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মুত্তালিব শিশু মুহাম্মাদ (সাঃ) নিয়ে মক্কায় ফেরেন। এর পর থেকে দাদা'ই নবীজীর দেখাশোনা করতে থাকেন। নবীজীর যখন বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন দাদা আব্দুল মুত্তালিব ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে নবীজীরর দায়িত্ব দিয়ে যান।

চাচা আবু তালিব ছিলেন ব্যবসায়ী। তখনকার আরবদের নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার সিরিয়া ব্যবসায়িক সফরে যেতেন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বয়স যখন ১২ বছর তখন তিনি চাচা আবু তালিবের সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন। প্রগাঢ় মমতার কারণে চাচা আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারলেন না। যাত্রাপথে বসরা পৌঁছানোর পর কাফেলাসহ চাচা আবু তালিব তাবু ফেললেন। সেই সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল। কথিত আছে, শহরটিতে  জারজিস নামক এক খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন, যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তার গীর্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এ সময় তিনি বালক মুহাম্মাদকে (সাঃ) দেখে শেষ নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ফিজারের যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স ছিল মতভেদে ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। এই যুদ্ধে তিনি সরাসরি শত্রুপক্ষের আঘাত না করলেও, চাচাদের তীর যোগান দেবার কাজে সহায়তা করেছিলেন। যুদ্ধের নির্মমতায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন। কিন্তু তাঁর কিছু করার ছিলনা। সে সময় থেকেই তিনি কিছু একটি করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন। ফিজার যুদ্ধের ভয়াবহতা স্বচক্ষে দেখে দয়াশীল নবীজীর মনে দারুণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যাতে ভবিষ্যতে এইরূপ ধ্বংসলীলা আর না ঘটে, সেজন্য তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন। নবীজী তার চাচা যুরায়ের বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব এর সহায়তায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ নেতা আব্দুল্লাহ বিন জাদ‘আন তায়মীর গৃহে বনু হাশেম, বনু মুত্ত্বালিব, বনু আসাদ, বনু যোহরা, বনু তামীম প্রভৃতি গোত্রপ্রধানদের ডেকে বৈঠক করেন। উক্ত বৈঠকে তরুণ মুহাম্মাদ কতগুলি কল্যাণমূলক প্রস্তাব পেশ করেন, যা নেতৃবৃন্দের প্রশংসা অর্জন করে এবং চাচা যোবায়েরের দৃঢ় সমর্থনে বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে চারটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। মূলতঃ নবীজী ছিলেন উক্ত কল্যাণচিন্তার উদ্ভাবক এবং চাচা যোবায়ের ছিলেন তার প্রথম ও প্রধান সমর্থক।
হিলফুল ফুযূল গঠন ও তার পরপরই যবরদস্ত কুরায়েশ নেতার কাছ থেকে বহিরাগত মযলূমের হক আদায়ের ঘটনায় চারিদিকে তরুণ নবীজীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। মুলত আরবদের মধ্যে বিদ্যমান হিংস্রতা, খেয়ানত প্রবণতা এবং প্রতিশোধ স্পৃহা দমনের জন্যই হিলফুল ফুজুল নামক শান্তি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। সবার মুখে মুখে তিনি ‘আল-আমীন’ অর্থাৎ বিশ্বস্ত ও আমানতদার বলে অভিহিত হতে থাকেন। অল্পবয়স হওয়া সত্ত্বেও কেউ তার নাম ধরে ডাকতো না। সবাই শ্রদ্ধাভরে ‘আল-আমীন’ বলে ডাকত।