আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি কীভাবে ওয়াহী শুরু হয়েছিল।
How the revelation to the Messenger of Allah, may God bless him and grant him peace, began.
كيف بدأ الوحي على رسول الله صلى الله عليه وسلم؟
রাসুলুল্লাহ (সা:) এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল?
উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত।
আল্লাহর রাসূল (সা:) বললেনঃ কোন কোন সময় তা ঘণ্টা বাজার মত আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হয় এবং তা শেষ হতেই ফেরেশ্তা যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই, আবার কখনো ফেরেশ্তা মানুষের রূপ ধারণ করে আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই।
’আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তীব্র শীতের সময় ওয়াহী নাজিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওয়াহী শেষ হলেই তাঁর কপাল হতে ঘাম ঝরে পড়ত।
উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা:) এর নিকট সর্বপ্রথম যে ওয়াহী আসে, তা ছিল নিদ্রাবস্থায় বাস্তব স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে প্রভাতের আলোর ন্যায় প্রকাশিত হতো।
অতঃপর তাঁর নিকট নির্জনতা পছন্দনীয় হয়ে দাঁড়ায় এবং তিনি ’হেরা গুহায় নির্জনে অবস্থান করতেন।
আপন পরিবারের নিকট ফিরে এসে কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে- এভাবে সেখানে তিনি এক নাগারে বেশ কয়েক দিন ’ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন। অতঃপর খাদীজা (রাঃ) এর নিকট ফিরে এসে আবার একই সময়ের জন্য কিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যেতেন।
এভাবে ’হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে তাঁর নিকট ওয়াহী আসলো। তাঁর নিকট ফেরেশ্তা এসে বললো, ’পাঠ করুন’। আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেনঃ [’’আমি বল্লাম, ’আমি পড়তে জানি না।]
তিনি (সা:) বলেনঃ অতঃপর সে আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো।
অতঃপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ’পাঠ করুন’। আমি বললাম আমি তো পড়তে জানি না।’
সে দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো।
অতঃপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললোঃ ’পাঠ করুন’। আমি উত্তর দিলাম, ’আমি তো পড়তে জানি না।’
আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেন, অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। তারপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, ’’পাঠ করুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত পিন্ডো থেকে, পাঠ করুন, আর আপনার রব্ অতিশয় দয়ালু- (সূরাহ্ ’আলাক্ব)।
অতঃপর এ আয়াত নিয়ে আল্লাহর রাসূল (সা:) -প্রত্যাবর্তন করলেন। তাঁর হৃদয় তখন কাঁপছিল। তিনি খাদীজাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা এর নিকট এসে বললেন, ’আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো’, ’আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো।’
তাঁরা তাঁকে চাদর দ্বারা আবৃত করলেন। তাঁর শংকা দূর হলো। তখন তিনি খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর নিকট ঘটনাবৃত্তান্ত জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি আমার নিজেকে নিয়ে শংকা বোধ করছি।
খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, আল্লাহর কসম, কখনই নয়। আল্লাহ্ আপনাকে কখনও লাঞ্ছিত করবেন না।
আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।
অতঃপর তাঁকে নিয়ে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকাহর নিকট গেলেন,
যিনি অন্ধকার যুগে ’ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষায় লিখতে পারতেন এবং আল্লাহর তাওফীক অনুযায়ী ইবরানী ভাষায় ইঞ্জিল হতে ভাষান্তর করতেন।
তিনি ছিলেন অতিবৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁকে বললেন, ’হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন।’
ওয়ারাকাহ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ’ভাতিজা! তুমি কী দেখ?
’আল্লাহর রাসূল (সা:) যা দেখেছিলেন, সবই বর্ণনা করলেন। তখন ওয়ারাকাহ তাঁকে বললেন, এটা সেই বার্তাবাহক যাঁকে আল্লাহ মূসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠিয়েছিলেন।
আফসোস! আমি যদি সেদিন থাকতাম। আফসোস! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম,
যেদিন তোমার কওম তোমাকে বহিষ্কার করবে।’ আল্লাহর রাসূল (সা:) বললেন, [’তারা কি আমাকে বের করে দেবে?’]
তিনি বললেন, ’হ্যাঁ, তুমি যা নিয়ে এসেছো অনুরূপ কিছু যিনিই নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই বৈরিতাপূর্ণ আচরণ করা হয়েছে।
সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে জোরালোভাবে সাহায্য করব।’ এর কিছুদিন পর ওয়ারাকাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ইন্তিকাল করেন। আর ওয়াহীর বিরতি ঘটে।
জাবির ইব্নু ‘আব্দুল্লাহ্ আনসারী ওয়াহী স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেনঃ একদা আমি হাঁটছি, হঠাৎ আস্মান হতে একটি শব্দ শুনতে পেয়ে আমার দৃষ্টিকে উপরে তুল্লাম। দেখলাম, সেই ফেরেশ্তা, যিনি হেরা গুহায় আমার নিকট এসেছিলেন, আস্মান ও যমীনের মাঝে একটি আসনে উপবিষ্ট।
এতে আমি শংকিত হলাম। অবিলম্বে আমি ফিরে এসে বললাম, ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর।’
অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন,
‘‘হে বস্ত্রাবৃত রাসূল! উঠুন, সতর্ক করুন; আর আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন; এবং স্বীয় পরিধেয় বস্ত্র পবিত্র রাখুন; এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন। (সূরাহ্ঃ মুদ্দাস্সির) ।
ইব্নু ‘আব্বাস হতে বর্ণিতঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘ওয়াহী দ্রুত আয়ত্ত করার জন্য আপনি ওয়াহী নাজিল হওয়ার সময় আপনার জিহবা নাড়বেন না।’ (সূরাহ্ কিয়ামাহ)- এর ব্যাখ্যায় ইব্নু ‘আব্বাস বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াহী অবতরণের সময় তা আয়ত্ত করতে বেশ কষ্ট করতেন এবং প্রায়ই তিনি তাঁর উভয় ঠোঁট নড়াতেন।’
এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেনঃ ‘‘ওয়াহী দ্রুত আয়ত্ত করার জন্য আপনি ওয়াহী নাজিল হবার সময় আপনার জিহবা নড়াবেন না, এর সংরক্ষণ ও পাঠ করানোর দায়িত্ব আমার’- (সূরাহ্ ক্বিয়ামাহ)।
ইব্নু ‘আব্বাস বলেন, ‘‘এর অর্থ হলোঃ তোমার অন্তরে তা হেফাযত করা এবং তোমার দ্বারা তা পাঠ করানো। ‘‘সুতরাং আমি যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন’ - (সূরাহ্ কিয়ামাহ)।
ইব্নু ‘আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, অর্থাৎ মনোযোগ সহকারে শুনো এবং চুপ থাকো। ‘‘তারপর এর বিশদ বর্ণনার দায়িত্ব তো আমারই - (সূরাহ্ কিয়ামাহ)। অর্থাৎ তুমি তা পাঠ করবে, এটাও আমার দায়িত্ব।
Информация по комментариям в разработке