যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ।
ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্ ॥ গীতা ১৬/২৩
তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ।
জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কতুমিহার্হসি ৷ গীতা ১৬/২৪
অর্থাৎঃ যে মানুষ শাস্ত্রবিধিকে পরিত্যাগ করে কামনার বশীভূত হয়ে কর্ম করে সে সিদ্ধিলাভ করে না এবং না সুখ, না পরমগতি প্রাপ্ত হয়। সেজন্য কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ণয় বিষয়ে শাস্ত্র তোমার প্রমাণস্বরূপ; সুতরাং এই সংসারে শাস্ত্রোক্ত বিধান জেনে কর্ম করতে যোগ্য হও।
❤️❤️তাহলে বর্ণ কি?
বর্ণ ইতি বৃণোতেঃ(নিরুক্ত ২.৩)
অর্থাৎ যা পছন্দ করে বেছে নেয়া হয় তাই বর্ণ। এর মানে হল মানুষ তার নিজস্ব গুণ বা বৈশিষ্ট্য এর কারনে যে পেশা বেছে নেয় তাই তার বর্ণ। মূলত 'Varna' শব্দটি এসেছে 'Vin' মূল থেকে যার অর্থ "বেছে নেওয়া" বা "নির্বাচন করা" [ To choose ].
একেকজনের কর্মক্ষমতা ও আধ্যাত্মিকতা, চিন্তাভাবনা একেক রকম।সে অনুসারেই একেকজন তার বর্ণ নির্ধারণ করে।[ঋগ্বেদ ৯.১১২.১]
***❤️তাহলে বর্ণগুলো কি কি এবং কোথায় থেকে আসলো ?
= বেদাদি শাস্ত্রে বর্ণের চারটি বিভাগ করা হয়েছে - ব্রাহ্মণ ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র.
চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ।
তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্ ॥গীতা ৪/ ১৩
অর্থঃ গুণ ও কর্মের বিভাগ অনুসারে আমার দ্বারা চার বর্ণ সৃষ্ট হয়েছে।
ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাঞ্চ পরন্তপ।
কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বভাবপ্রভবৈগুণৈঃ ৷ গীতা ১৮/৪১
অর্থঃ হে পরন্তপ (অর্জুন)! ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রগণের কর্মসমূহ স্বভাবজাত গুণসমূহ দ্বারা বিভক্ত আছে।
বর্ণভেদ জন্মভিত্তিক নয়, বরং মানুষের স্বভাবসিদ্ধ গুণ এবং কর্ম (কাজের ধরন)-এর ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
❤️1.ব্রাহ্মণ কে?
যে ঈশ্বরের প্রতি গভীবভাবে অনুরক্ত, অহিংস, সৎ, নিষ্ঠাবান, সুশৃঙ্খল, বেদ প্রচারকারী, বেদ জ্ঞানী, নিয়মিত বেদোক্ত অনুসারে ধ্যান যজ্ঞাদি কর্মে লিপ্ত, সে ব্রাহ্মণ ।{ঋগ্বেদ ৭.১০৩,৭-৯}
ব্রহ্ম হি ব্রাহ্মণঃ...(শতপথ ব্রাহ্মণ ৫.১.১.১১)
অর্থাৎ যিনি ব্রহ্মজ্ঞান সম্পন্ন, উত্তম কর্ম সম্পাদনকারী তিনি ই ব্রাহ্মণ।
অধ্যাপনমধ্যয়নং যজনং যাজনং তথা।
দানং প্রতিগ্রহকৈব ব্রাহ্মণাম কল্পয়ৎ।।
(মনুসংহিতা ১.৮৭)
অর্থাৎ অধ্যাপন (শিক্ষাদান), অধ্যয়ন (শিক্ষা গ্রহণ), যজন (যজ্ঞ করা), যাজন (যজ্ঞ করা বা অন্যদেরকে যজ্ঞে অংশগ্রহণ করানো), দান এবং প্রতিগ্রহ (দান গ্রহণ) যারা করেন তারাই ব্রাহ্মণ।
শমো দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ।
জ্ঞানং বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম স্বভাবজম্।।(গীতা ১৮.৪২)
অর্থাৎ শম (সংযম), দম, তপস্যা, শৌচ (পবিত্রতা), ক্ষান্তি (সহিষ্ণুতা), সরলতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আস্তিক্য[আস্তিক্য-ঈশ্বর বা আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতি বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা]-এগুলো ব্রাহ্মণের স্বভাব হওয়া উচিৎ।
❤️2.ক্ষত্রিয় কে?
দৃঢ়ভাবে আচার পালনকারী, সৎকর্মের দ্বারা শূদ্ধ, রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন, অহিংস, ঈশ্বর সাধক, সত্যের ধারক ন্যায়পরায়ন, বিদ্বেষমুক্ত ধর্মযোদ্ধা, অসৎ এর বিনাশকারী সে ক্ষত্রিয়।ঋগ্বেদ ১০.৬৬.৮
প্রজানাং রক্ষনং দানমিজ্যাধ্যায়নমেব চ।
বিষয়েষ প্রসক্তিশ্চ ক্ষত্রিয়স্য সমাসতঃ।।
(মনুসংহিতা ১.৮৯)
অর্থাৎ প্রজারক্ষন, দান, যজ্ঞ, অধ্যায়ন, বিষয়ভোগে অনাসক্তি এসব ক্ষত্রিয়ের বৈশিষ্ঠ্য।
শৌর্যং তেজো ধৃতিদাক্ষ্যং যুদ্ধে চাপ্যপলায়নম্।
দানমীশ্বরভাবশ ক্ষাত্রং কর্ম স্বভাবজম্ ॥ [গীতা ১৮।৪৩]
শৌর্য [বীরত্ব], তেজ [ক্ষমতা ] , ধৈর্য, দক্ষতা, যুদ্ধেও বিমুখ না হওয়া ও দান এবং ঈশ্বরভাব-এগুলো ক্ষত্রিয়ের স্বভাবজাত কর্ম
❤️3.বৈশ্য কে?
দক্ষ ব্যবসায়ী, দানশীল, লোভহীন চাকুরীরত এবং চাকুরী প্রদানকারী ব্যাক্তি।অথর্ববেদ ৩.১৫.১
মনুসংহিতা ও ভগবদগীতা অনুযায়ীও ওই বাণিজ্যে বা কৃষি বা গোরক্ষায় নিয়োজিত ব্যাক্তি ই বৈশ্য।
পশুনাং রক্ষণং দানমিজ্যাধ্যয়নমেব চ।
বণিকপথং কুসীদং চ বৈশাস্য কৃষিমেব চ।
(মনুস্মৃতি: ১/৯০),
অর্থাৎ গবাদি পশুর পালন এবং বৃদ্ধি করা, বিদ্যা ও ধর্মের বৃদ্ধি করতে (মনুপাতে ধনসম্পত্তি ব্যয় করা, অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞ করা, বেদাদি শাস্ত্রের অধ্যয়ন করা, সর্বপ্রকার বাণিজ্য করা এবং বৃদ্ধির জন্য ধন প্রয়োগ করা-এগুলো বৈশ্যের কর্ম।
কৃষিগৌরক্ষ্যবাণিজ্যং বৈশ্যকর্ম স্বভাবজম্।
পরিচর্যাত্মকং কর্ম শূদ্রস্যাপি স্বভাবজম্ ॥ [গীতা ১৮/৪৪]
কৃষি, গো-রক্ষা ও বাণিজ্য-এগুলো বৈশ্যের স্বভাবজাত কর্ম এবং সেবারূপ কর্মই শূদ্রের স্বভাবজাত।
❤️4.শূদ্র কে?
যে অদম্য, পরিশ্রমী, অক্লান্ত, জরা যাকে সহজে গ্রাস করতে পারেনা, লোভমুক্ত কষ্টসহিষ্ণু সেই শূদ্র।ঋগ্বেদ ১০.৯৪.১১
-“একমেব তু শূদ্রস্য প্রভুঃ কর্ম সমাদিশৎ।
এতেষামেৰ বৰ্ণনাং শুশ্রূষামনসূয়য়া।"
(মনুস্মৃতি: ১/৯১),
অর্থাৎ নিন্দা, ঈর্ষা এবং অভিমানাদি দোষ পরিত্যাগ করে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যদিগকে যথোচিত সেবা করা শূদ্রের কর্তব্য এবং তার মাধ্যমেই জীবন যাত্রা নির্বাহ করা।
কৃষিগৌরক্ষ্যবাণিজ্যং বৈশ্যকর্ম স্বভাবজম্।
পরিচর্যাত্মকং কর্ম শূদ্রস্যাপি স্বভাবজম্ ॥ [গীতা ১৮/৪৪]
কৃষি, গো-রক্ষা ও বাণিজ্য-এগুলো বৈশ্যের স্বভাবজাত কর্ম এবং সেবারূপ কর্মই শূদ্রের স্বভাবজাত।
ঋগ্বেদে (৫/৬০/৫) রয়েছে-
"অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাস এতে সং ভ্রাতরো তাবূধুঃ সৌভগায়।”
অর্থাৎ “মানুষের মধ্যে কেউ বড় নয় বা কেউ ছোট নয়, এরা ভাই ভাই। সৌভাগ্য লাভের জন্য এরা প্রযত্ন করে।”
সুতরাং বলা যায় যে, ঈশ্বর মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেননি। মূলত মানুষের স্বভাবসিদ্ধ গুণ ও কর্মের দ্বারা ব্রাহ্মণাদি বর্ণসমূহের মধ্যে ভেদ বর্ণনা করা হয়েছে
তাহলে আমরা বুঝলাম স্বভাবজাত গুণের আধিক্য লক্ষ্য করে বর্ণের ভেদ করা হয়েছিলো।বর্ণ বলিতে এস্থানে প্রাকৃতিক তিন গুন [ সত্ত্ব,রজ,তম ] অনুসারে বুঝায়।
Информация по комментариям в разработке