Скачать или смотреть টাঙ্গাইল নাগরপুর যমুনার চরে পিকনিক, এক ঢিলে তিন পাখি

টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জ: যমুনা চরের আনন্দঘন ভ্রমণ

বন্ধুদের সঙ্গে এক দারুণ ছুটির দিন কাটাতে আমরা টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে ট্রলারে করে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর চরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। এই ভ্রমণটা ছিল আমাদের জন্য এক নির্মল আনন্দের অভিজ্ঞতা। পরিকল্পনা ছিল নদীর চরে বসে রান্না করে খাওয়ার। তাই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সঙ্গে নিয়েছিলাম রান্নার সব উপকরণ—একটি খাসি, নানা রকম মশলা আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।

যমুনা চরে এক পশলা বৃষ্টি
প্রথমে আমাদের ট্রলারটি যমুনা নদীর মাঝখানের একটি চরে এসে থামল। বালির নরম চরে নেমে আমরা বেশ কিছুক্ষণ হৈ-হুল্লোড়, গান-বাজনা আর খেলায় মেতে উঠলাম। সূর্যের আলোয় ঝলমলে যমুনার বিস্তার আর চারপাশে চরের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মনকে ভরে দিচ্ছিল। হঠাৎ আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামল। অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে আমরা দ্রুত ট্রলারে ফিরে এলাম। এরপর ট্রলার বিশাল জলরাশির ওপর দিয়ে চলতে থাকল। বৃষ্টির পর নদীর রূপ যেন আরও খুলে গিয়েছিল, যা ছিল এক অসাধারণ দৃশ্য।

রান্না ও রসনাবিলাস
চর ভ্রমণ শেষে আমরা পৌঁছাই সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলার এনায়েতপুরে। সেখানেই শুরু হয় আমাদের রান্নার পর্ব। খাসির মাংসের রেজালা আর ঝাল-মশলাদার নানা রকম ভর্তা-ভাজিতে আমাদের দুপুরের খাবারটা যেন এক জমজমাট ভোজসভায় পরিণত হলো। নিজেদের হাতে রান্না করা সেই খাবার আর নদীর ধারের নির্মল বাতাস—সব মিলিয়ে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। রান্না হতে হতে আমরা এনায়েতপুরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শনে বের হই।

খাজা ইউনুছ আলী মাজার ও হাসপাতাল
এনায়েতপুরে অবস্থিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান আমাদের নজর কাড়ে:

খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল: এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ ও স্বনামধন্য একটি বেসরকারি মেডিকেল প্রতিষ্ঠান। এর বিশাল ক্যাম্পাস, উন্নত চিকিৎসা সেবা এবং সবুজে ঘেরা পরিপাটি পরিবেশ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। এমন একটি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে ওঠায় স্থানীয় মানুষের জন্য চিকিৎসার সুযোগ অনেক বেড়েছে।

খাজা ইউনুছ আলী (রহ.) মাজার শরীফ: হাসপাতালের পাশেই এই আধ্যাত্মিক সাধকের মাজার অবস্থিত। এক মনোমুগ্ধকর শান্ত পরিবেশে এখানে প্রতিদিন বহু ভক্ত ও দর্শনার্থী ভিড় করেন। মাজারের পরিবেশ এতটাই শান্ত ও পবিত্র যে সেখানে গেলে মন আপনা আপনিই শান্ত হয়ে যায়।

গোলাম হোটেলের সাদর আতিথেয়তা
মাজার পরিদর্শন শেষে আমরা গিয়েছিলাম বিখ্যাত **গোলাম হোটেল-**এ। এখানকার গরুর মাংসের স্বাদ ছিল অসাধারণ! চাহিদা এত বেশি যে জায়গাটা সবসময়ই মানুষের ভিড়ে সরগরম থাকে। বলা যায়, এই হোটেলটি এনায়েতপুরের একটি ল্যান্ডমার্ক। গোলাম হোটেলের গরুর গোস্ত খেয়ে আমাদের ভ্রমণটি যেন পরিপূর্ণতা পেল। এই ভ্রমণ ছিল শুধুই একটি ট্রিপ নয়, বরং বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো একরাশ নির্মল আনন্দ, প্রকৃতি আর স্বাদের এক দারুণ মিশেল।