আলোচ্য বিষয়ঃ
কোরআনে বর্ণিত মৌমাছির জীবন চক্র আর বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত মৌমাছির জীবন চক্র পর্যালোচনা।
বিজ্ঞানিদের প্রথমদিকের ধারনা মতে,
মৌমাছি দুই রকমের।
একটি হলো- পুরুষ মৌমাছি। এদের কাজ স্ত্রী মৌমাছিদের সন্তান উৎপাদন কার্যে সহায়তা করা,গৃহ (মৌচাক) নির্মাণ,ফুল থেকে মধু সংগ্রহ,গৃহ পাহারা দেওয়া ইত্যাদি।
আরেকটি হলো- স্ত্রী মৌমাছি(Queen Bee)।এদের কাজ হলো শুধু সন্তান উৎপাদন।
১৯৭৩ সালে অষ্ট্রিয়ান বিজ্ঞানি Karl Von-Frisch ‘Physiology or Medicine’ বিষয়ে সফল গবেষণার জন্য চিকিৎবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘মৌমাছির জীবনচক্র’।
তিনি এই বিষয়ে একটি বই লিখেছেন যার নাম ‘The dancing bees’।
তিনি বৈজ্ঞানিক ভাবে(ফটোগ্রাফি এবং অন্যান্য পদ্ধতি অবলম্বন করে) প্রমান করে দেখিয়েছেন যে, মৌমাছি তিন ধরনের।
প্রথমটি হচ্ছে- স্ত্রী মৌমাছি।এদের কাজ শুধু সন্তান উৎপাদন।আর কোন কাজেই এরা অংশগ্রহণ করেনা।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে- পুরুষ মৌমাছি।এদের কাজ হচ্ছে শুধু স্ত্রী মৌমাছিদের (Queen bee) সন্তান উৎপাদনের জন্য প্রজনন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা।এর বাইরে এরা আর কোন কাজ করেনা।
তৃতীয়টি হচ্ছে- এরাও স্ত্রী মৌমাছি কিন্তু বন্ধ্যা।মানে,এরা কখনই সন্তান উৎপাদন করতে পারেনা।প্রাকৃতিক ভাবেই এরা বন্ধ্যা হয়ে থাকে।এদের অন্য নামে বলা হয়- ‘কর্মী মৌমাছি’।
মৌচাক নির্মাণ,মধু সংগ্রহ সহ তাদের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে এই কর্মী স্ত্রী মৌমাছিরাই।
পুরুষ মৌমাছি এবং স্ত্রী (Queen bee) মৌমাছি সন্তান উৎপাদন ছাড়া মৌচাক নির্মাণ,মধু সংগ্রহ সহ অন্যকোন কাজেই অংশগ্রহণ করেনা।এসব করে কর্মী মৌমাছি বা দ্বিতীয় ক্যাটাগরির স্ত্রী মৌমাছি। (এদের Queen bee বলা হয়না, Worker Bee বলা হয়)।
তিনি আরো প্রমান করে দেখিয়েছেন যে,যখনই একটি কর্মী মৌমাছি নতুন কোন ফুলের বাগান বা উদ্যানের সন্ধান পায়,তখন সাথে সাথে গিয়ে অন্য কর্মী মৌমাছিদের নতুন এই ফুলের বাগান/উদ্যানের সঠিক দিক নির্দেশনা জানিয়ে দেয়। Karl Von-Frisch এটার নাম দিয়েছেন – ‘Waggle Dance’।
এবার চলুন কোরআন কি বলে দেখা যাক।
কোরআনে মৌমাছির নামানুসারে একটি পুরো সূরা আছে।সেটি হলো- সূরা আন-নাহল।আরবিতে ‘নাহল’ মানে মৌমাছি।
এই সূরার ৬৮ এবং ৬৯ নং আয়াতে সরাসরি মৌমাছি নিয়ে কথা বলা হয়েছে।
‘আপনার রব মৌমাছিকে আদেশ দিয়েছেন যে, মৌচাক বানিয়ে নাও পাহাড়ে,বৃক্ষে এবং মানুষ যে গৃহ নির্মান করে, তাতে।’
‘ অত:পর, চোষন করে নাও প্রত্যেক ফুল থেকে,এবং চল স্বীয় রবের সহজ-সরল পথে। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’
(সূরা আন নাহলের ৬৮-৬৯)
আপনি যদি আরবি ভাষা জানেন বা আরবি ব্যাকরণ বুঝেন, তাহলে অবশ্যই আপনার জানার কথা ‘পুরুষ মৌমাছি’র জন্য আরবিতে ব্যবহৃত শব্দ হলো- ‘ইত্তাখিজ’, আর ‘স্ত্রী মৌমাছি’র জন্য ব্যবহৃত শব্দ হলো- ‘ইত্তাখিজি’।আলাদা আলাদা শব্দ।
উপরের আয়াতে দেখুন, আল্লাহ সুবহান। ওয়া’তালা উক্ত আয়াতে ‘ইত্তাখিজ’ ব্যবহার না করে ‘ইত্তাখিজি’ শব্দ ব্যবহার করেছেন।তাহলে নিশ্চিতরূপে বোঝা গেলো- উক্ত আয়াতে মৌমাছির প্রতি যে নির্দেশ দেওয়া হলো, তা অবশ্যই অবশ্যই স্ত্রী মৌমাছির জন্য।
যদি পুরুষ মৌমাছিকে ইনডিকেইট করা হতো,তাহলে উক্ত আয়াতে কখনোই ‘ইত্তাখিজি’ ব্যবহার হতোনা, ‘ইত্তাখিজ’ শব্দ ব্যবহার করতে হতো।যদি ‘ইত্তাখিজ’ শব্দ ব্যবহার হতো,তাহলে সেটা আরবি ব্যাকরণ অনুসারে ভুল তো হতোই, মডার্ন সাইন্স অনুসারেই সেটা ভুল প্রমান হতো।
কারন বিজ্ঞানি Karl Von-Frisch প্রমান করে দেখিয়েছেন যে, মৌচাক নির্মাণ, মধু সংগ্রহ ইত্যাদিতে পুরুষ মৌমাছি নয়, স্ত্রী মৌমাছিই অংশ নেয়।
Karl Von Frisch প্রমান করেছেন, একটি কর্মী মৌমাছি যখন কোন নতুন ফুলের বাগান/উদ্যানের সন্ধান পায়, সাথে সাথে অন্য কর্মী মৌমাছিদের সেই উদ্যান সম্পর্কে অবহিত করে।এক্সাক্টলি যে পথে গিয়ে মৌমাছিটি এই উদ্যানের সন্ধান পায়,অন্যদেরও ঠিক সে পথের সন্ধান দেয়।পথের এই সন্ধান দানে মৌমাছিটি কোনরকম হেরফের করেনা।সে যে পথে গিয়ে তা দেখেছে,ঠিক তাই-ই অন্যদের জানায়।অন্যপথ দিয়ে যেতে বলেনা। Karl Von Frisch এর ভাষায় এটি হলো- ‘ ‘Waggle Dance’।
আল্লাহ বলছেন, এরপর সব প্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা: নাহল, আয়াত: ৬৯)।
এটি Karl Von Frisch এর সেই মৌমাছিদের ‘Waggle Dance’।
এক্সাক্ট যে পথ,যা তারা জানে।যা তার জন্য সহজ এবং অন্যান্যদের জন্যও সহজ।
সুবাহান-আল্লাহ!! ১৯৭৩ সালে যা আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানি Karl Von Frisch চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন, আল্লাহ সুবাহান ওয়া’তালা তা কোরআনে চৌদ্দশত বৎসর আগেই জানিয়ে রেখেছেন।
Информация по комментариям в разработке