আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে মহাকালের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব খেলাধুলা
গ্রামীণ খেলা বিলুপ্ত হতে হতে আজ তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন
সুব্রত বিশ্বাস : বর্তমানে গ্রামীণ খেলা বিলুপ্ত হতে হতে আজ তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন।খোদ অজপাড়াগাঁয়েও সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বৌচি, কানামাছি প্রভৃতি গ্রামীণ খেলার প্রচলন নেই।গ্রামবাংলার খেলাধুলার মধ্যে যেসব খেলা হারিয়ে গেছে তাদের মধ্যে হা-ডু-ডু, কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, মন্দুরুজ, গাদন, খো-খো, ডাংগুলি, গোল্লাছুট, গোশত তোলা, চিক্কা, এ্যাঙ্গো এ্যাঙ্গো, কুতকুত, ল্যাংচা, কিং কিং খেলা, বোমবাস্টিং, হাড়িভাঙা, বুদ্ধিমন্তর, চাঁ খেলা, বৌচি,কাঠিছোঁয়া, দড়ি লাফানো, বরফ পানি, দড়ি টানাটানি, চেয়ার সিটিং, রুমাল চুরি, চোখবুঝাবুঝি, কানামাছি, ওপেন্টি বাইস্কোপ, নৌকাবাইচ, ঘোড়াদৌড়, এলাটিং বেলাটিং, আগডুম বাগডুম, ইচিং বিচিং, ইকড়ি মিকড়ি, ঝুম ঝুমা ঝুম, নোনতা বলরে, কপাল টোকা, বউরানী, ছক্কা, ব্যাঙ্গের মাথা, লাঠিখেলা, বলীখেলা, আইচ্চা ভাঙ্গা, এক্কাদোক্কা, কুৎ কুৎ, মইলা, রাম সাম যদু মদু, চোর ডাকাত, মার্বেল, সাতচাড়া, থিলো এম্প্রেস, ষোলগুড্ডা, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই, চিলমোরগ, বুঝাবুঝি, বদন, লাপা লাপি, লগো লগো, ডালিম খেলা অন্যতম।ঐতিহ্যবাহী হারিয়ে যাওয়া এসব খেলাধুলা এখন আর তেমন কোথাও চোখে পড়ে না।নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো এখন শুধুই নিছক গল্প বা কল্প কাহিনী।আবার নাম শুনে অনেকেই হাসে।গ্রামের এসব খেলাগুলোর মধ্যে হা-ডু-ডু, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বৌচি, ডাংগুলি ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।এসব খেলা চলাকালে শতশত মানুষের ঢল নামতো খেলা প্রাঙ্গণে।কিন্তু এখন গ্রামের খোলা মাঠ কমে যাওয়ায় এসব খেলা শুধুই স্মৃতি।এক সময় এ দেশের ছেলেমেয়েরা গ্রামীণ খেলাকে প্রধান খেলা হিসেবে খেলতো।আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে অবশ্যই গ্রামীণ ক্রীড়া ফেডারেশন গঠন করা অতি জরুরি।যাতে করে আগামী প্রজন্ম আমাদের গ্রামীণ খেলাকে জানতে পারে। ভুলে না যায় আমাদের নিজস্ব ক্রীড়া ঐতিহ্য।ছোট্ট বেলার অগনিত খেলা গুলো নিয়েই পাঠকদের জন্য আজকের এই আয়োজন।কিছু কিছু খেলা আছে যা সাধারণত কেবল মেয়েরাই খেলে থাকে।মেয়েরা ফুটবল বা ক্রিকেট তেমন একটা খেলে না আর সে কারণেই হয়তো তাদের খেলাগুলো এখনও অল্পবিস্তর টিকে আছে।বাংলাদেশে মেয়েদের মাঝে সবচেয়ে প্রিয় দুটো খেলা হলো টোপাভাতি খেলা ও পুতুল খেলা।এছাড়াও আছে এক্কা দোক্কা, কড়ি খেলা, ঘুটি খেলা, এলাটিং বেলাটিং, ওপেনটি বায়োস্কোপ ইত্যাদি।
পুতুল খেলা : পুতুল খেলা খেলেনি এমন মেয়ে বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবেনা।বাড়িতে মাটি, কাঠ কিম্বা কাপড় দিয়ে মানুষের আদলে পুতুল বানানো হয়।গ্রাম বাংলায় বিভিন্ন মেলা, যেমন বৈশাখী মেলা, রথের মেলা, পৌষ সংক্রান্তি, চড়ক পুজা, শিবরাত্রি, মহররম, ঈদ এবং নানা পার্বণে হরেকরকমের পুতুল তৈরি করা হয়। অবশ্য এখন প্লাস্টিকের পুতুলেরও খুব চল হয়েছে।ছেলে-মেয়ে, বর-কনে এমনি নানা ধরনের পুতুল কাপড় ও গয়না দিয়ে সাজানো হয়।রান্না-বান্না, সন্তান লালন-পালন, মেয়ে পুতুলের সাথে ছেলে পুতুলের বিয়ে ইত্যাদি নানা বিষয়ের অভিনয় করেই খেলা হয় পুতুল খেলা।আসলে পুতুল খেলার মধ্যে পুরো সংসারের একটা ছবি ফুটে ওঠে।পুতুলগুলো যেন ছোট ছোট মেয়েদের সন্তান।মায়ের মতো স্নেহ-আদর দিয়ে, খাওয়া থেকে শুরু করে ঘুম পাড়ানো পর্যন্ত সব কাজই করে খুকুমায়েরা।কেবল আদর সোহাগই নয় প্রয়োজনে শাসনও করে ছোট্ট মেয়েরা তাদের পুতুল সন্তানকে।পুতুল খেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব হলো একজনের মেয়ের সঙ্গে আরেক জনের ছেলে পুতুলের বিয়ে দেয়া।
লাঠি খেলা : বর্তমানে লাঠি খেলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জীবন-জীবিকার তাগিদে এই খেলা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।এক সময় বিভিন্ন মেলা ও গ্রাম্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে খুবই কদর করা হত লাঠি খেলাকে।দম ফেলার মত ফুরসত পেত না এই লাঠি খেলা দলের সদস্যরা।লাঠি খেলার সঙ্গে জড়িত পুরাতন শক্তিশালী খেলোয়াররা আজ অনেকই নেই তবুও ওস্তাদদের দেয়া শিক্ষা নিয়ে গুটিকয়েক শিষ্য আজও ধরে রেখেছে তাদের এই ঐতিহ্যবাহি লাঠি খেলা।মাঝে মধ্য লাঠি খেলা প্রেমী কিছু মানুষদের ডাকে ছুটে যায় এই খেলার দল।এই খেলার ঢোলের বাজনা শুনেই মুহুর্তের মধ্য ছুটে এসে জমা হয় শত শত দর্শক।বর্তমানে গুটি কয়েক লাঠি খেলার দল আজও এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটিকে ধরে রেখেছে।অবশ্য জীবিকার তাগিদে অনেকে আজ এই পেশা থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।কোন ব্যক্তি বা মহল যদি এই খেলাটি রক্ষার্থে পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসেন তাহলে গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব।
নৌকা বাইচ : নৌকাবাইচ হলো নদীতে নৌকা চালনার প্রতিযোগিতা।দাঁড় টানার কসরত ও নৌকা চালনার কৌশল দ্বারা বিজয় লাভের লক্ষ্যে আমোদ-প্রমোদমূলক প্রতিযোগিতা বোঝায়।একদল মাঝি নিয়ে এক একটি দল গঠিত হয়।এমন অনেকগুলো দলের মধ্যে নৌকা দৌড় বা নৌকা চালনা প্রতিযোগিতাই হল নৌকা বাইচ। ফার্সি শব্দ বাইচ’এর অর্থ বাজি বা খেলা।নৌকার দাঁড় টানা ও নৌকা চালনার কৌশল দিয়ে প্রতিযোগীরা জয়ের জন্য খেলেন বা বাজি ধরেন।নদীমাতৃক বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আনন্দ আয়োজন, উৎসব ও খেলাধুলা সবকিছুতেই নদী ও নৌকার আনাগোনা।হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংস্করণ বাংলাদেশের নৌকা বাইচ।এক সময় এ দেশে যোগাযোগ ছিল নদী কেন্দ্রিক আর বাহন ছিল নৌকা।এখানে নৌ শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র।এসব শিল্পে যুগ যুগ ধরে তৈরি হয় দক্ষ ও অভিজ্ঞ কারিগর।এভাবে একসময় বিভিন্ন নৌযানের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
হা ডু ডু : কালের বিবর্তন আর আধুনিক খেলার ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হা-ডু-ডু খেলা।অথচ এক দশক আগেও স্কুল, আন্তঃজেলা বা উপজেলা ভিত্তিক প্রতিযোগীতায় জাতীয় এ খেলাটির প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মত।বর্তমানে সেটিও হারিয়ে যেতে বসেছে।
Fb link - / pagolermatha
G+ - https://plus.google.com/u/0/
Twitter - / sajol07yahooco1
Информация по комментариям в разработке