কাশী হতে তীর্থযাত্রা শুরু হল,স্বামীজীর। দণ্ড,-কমণ্ডলুসম্বল স্বামীজী, উত্তরভারতের নানা স্থানের মাঝ দিয়ে, উপস্থিত হলেন সরযুনদীর তীরে, সীতারামের স্মৃতিতে ভরা,সেই অযোধ্যায়।
অযােধ্যায় শ্রীশ্রীরামনাম কীর্তনে,কিছুদিন কাটিয়ে শ্রীবৃন্দাবনধাম অভিমুখে, যাত্রা করলেন। পথে লক্ষ্ণৌ এবং আগ্রায়, তাজমহল দেখে বৃন্দাবনে পৌছলেন। সেখানে লালাবাবুর কুঞ্জে,অতিথি হয়ে ছিলেন। এখানে দুটি ঘটনা উল্লেখযােগ্য।
বৃন্দাবনের কাছাকাছি এসেছেন, এমন সময় দেখলেন, এক ব্যক্তি তামাক খাচ্ছে। স্বামীজীর পূর্ব অভ্যাসমত, তামাক খাওয়ার ইচ্ছা হল। লােকটির কাছে কোলকে চাইলেন, কিন্তু সে বলল,“মহারাজ, ম’য়, ভাঙ্গী হ্যায় (আমি মেথর)।' আজন্মের সংস্কার যাবে কোথায়। কোলকে নেওয়া হল না। একটু পরেই জ্ঞান হল,—‘একি করছি। জাতি, কুল, মান, সব ছেড়ে সন্ন্যাস নিয়েছি, তবু মেথর শুনে এ বিচার কেন ?
তখুনি ফিরে এলেন,স্বামীজী। ভাঙ্গী ভাইকে দিয়ে, আর এক কলকে তামাক সাজিয়ে খেলেন।
আর এক দিনের অদ্ভুত ঘটনা
স্বামীজী কৌপীন উধাও
পরনের সম্বল কৌপীনখানি ধুয়ে,তীরে শুকোতে দিয়ে, তিনি রাধাকুণ্ডে স্নান করতে নামলেন। স্নান সেরে দেখেন,কৌপীন নেই।
চারদিক চেয়ে দেখেন, কৌপীন আছে গাছের উপর এক বানরের হাতে।
কি উপায় ! কি পরে যাবেন সহরে, এ অবস্থায় ! এ কি রাধারাণীর পরীক্ষা।
স্থির করলেন, যতক্ষণ না, লজ্জা নিবারণের ব্যবস্থা হয়, তিনি বনপথেই চলবেন, অনশনেই থাকবেন।
স্বামীজী কৌপীন উদ্ধাও
চলেছেন বনপথে, এমন সময় কে ডাকল পিছন থেকে। গ্রাহ্য নেই ; চলেছেন। কিন্তু যিনি ডাকছিলেন, তিনি ছাড়বার পাত্র নন। ধরে ফেললেন স্বামীজীকে। নিতে হল তার কাছ থেকে, কিছু খাওয়ার আর নূতন এক, গৈরিক বসন।
ফিরলেন স্বামীজী। এসে দেখেন, রাধাকুণ্ডের তীরে পড়ে আছে, তার কৌপীন ; যেমন ছিল তেমনি।
বিস্ময়ে মুগ্ধ হলেন স্বামীজী; লীলাময়ের একি লীলা। চোখে ঝরতে লাগল জল। আনন্দে করতে লাগলেন, কৃষ্ণগুণগান। গীতায় তিনি মিথ্যা বলেন নি - ‘যোগক্ষেমং বহাম্যহম', “ভক্তের প্রয়ােজনীয় সবকিছু, আমি বয়ে নিয়ে যাই গাে, ভক্তের কাছে।’
বৃন্দাবন ছেড়ে চললেন স্বামীজী। হেঁটেই চলছেন। যখন পাথেয় জুটত রেলে যেতেন, নচেৎ বরাবর পায়ে হেঁটে।
পথে এলেন হাতরাসে। অতি শ্রান্ত, ক্ষুধার্ত। বিশ্রাম করছেন পথের ধারে।
হাতরাস স্টেশনের স্টেশনমাস্টার, শরৎ গুপ্ত কাজ সেরে ফিরছেন। মুগ্ধ হলেন সন্ন্যাসীর মূর্তি দেখে। বললেন, -দয়া করে চলুন আমার ঘরে, বিশ্রাম ও আহার করবেন ,
স্বামীজী চললেন শরৎচন্দ্রের গৃহে, শরৎচন্দ্র স্বামীজীর শিষ্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে, তাঁর কাছে সকল সময় থাকলেন
একদিন স্বামীজী গাইছেন,
বিদ্যা যদি লভিতে চাও,
চাঁদ মুখে ছাই মাখ,
নইলে এই বেলা পথ দেখ।
শরৎ কেঁদে আকুল। ভিক্ষার ঝুলি আর গৈরিক নিয়ে, বেরিয়ে পড়ল স্বামীজীর পিছনে। নূতন সন্ন্যাসী, 'সদানন্দ’কে সঙ্গে নিয়ে চললেন, স্বামীজী হৃষীকেশ।
হৃষীকেশে, খুব অসুস্থ হলেন সদানন্দ। তাকে নিয়ে ফিরে এলেন, স্বামীজী হাতরাসে। নিজেও পড়লেন জোর অসুখে। সুস্থ হয়ে উভয়ে এলেন, বরাহনগর মঠে।
Информация по комментариям в разработке